ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ৭ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১০৩৩

কুমড়ো বড়ি বানিয়ে স্বাবলম্বী শতাধিক পরিবার, সফলতার হাতছানি

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:০৬ ১৬ মার্চ ২০২১  

ডাল- চালকুমড়ার মিশ্রণ রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় কুমড়ো বড়ি। এটি তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ গ্রামের শতাধিক পরিবার। একে পেশা হিসেবে নিয়েছে তারা। আগে শীতকালে এই পণ্যটির বেশি চাহিদা থাকতো। সেই কারণে শুধু শীতকালেই বড়ি তৈরি হতো। সারাদেশে চাহিদা ক্রমশ বেড়েছে। ফলত, পরিবারগুলোর ওপর তাগিদ সৃষ্টি হয়েছে সারাবছরই সরবরাহের।

 

সরেজমিনে তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কুমড়ো বড়ি তৈরি করে শুকানোর জন্য সারি সারি রোদে দেওয়া। নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও এই কাজ করছেন। এটি তৈরির প্রধান উপকরণ মাষকলাইয়ের ডাল, চালকুমড়া এবং সামান্য মসলা। তবে অন্য ডাল দিয়েও বানানো হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে প্রতিকেজি মাষকলাই ১০০ থেকে ১২০ টাকা আর চালকুমড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি। 


সাইজ বিবেচনায় কুমড়া ৫০ থেকে ৭০ টাকায় কিনতে হয়। পাঁচ কেজি চালকুমড়ার সঙ্গে দুই কেজি মাষকলাইয়ের মিশ্রণে বড়ি ভালো হয়। প্রথমে মাষকলাই রোদে শুকিয়ে জাঁতায় ভেঙে পরিষ্কার করে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। ছাড়িয়ে নেওয়া হয় খোসা। প্রায় পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা মাষকলাই পানিতে ভেজাতে হয়।িএরপর পাটায় পিষে কুমড়ো বড়ির মিশ্রণ তৈরি করা হয়। 


তারপর দুটির মিশ্রণে বড়ির উপকরণ তৈরি হয়। রৌদ্র উজ্জ্বল ফাঁকা স্থান, বাড়ির আঙিনা, ছাদ বা খোলা জায়গায় ভোর থেকে তা তৈরির কাজ শুরু হয়। পাতলা কাপড়ে সারি সারি এটি রোদে রাখা হয় শুকানোর জন্য। দুই থেকে তিন দিন টানা রোদে শুকাতে হয়। অতপর বিক্রির উপযোগী হয়।


কারিগররা আরও জানান, এই বড়ি দিয়ে কৈ, শিংবা শোল মাছের ঝোল বেশ মুখরোচক ও জনপ্রিয়। এটি বানানোর উপযুক্ত সময় শীতকাল। তবে চাহিদা বাড়ায় এখন সারাবছরই তৈরি করা হচ্ছে। নওগাঁ গ্রামের নারীরা সারাবছর ব্যস্ত কুমড়ো বড়ি বানানোয়। বাড়ির আপন চাহিদা মিটিয়ে এটি হাত বদল হয়ে চলে যাচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে।

 

বড়ি তৈরির কারিগর তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ গ্রামের শেফালী সাহা বলেন, দুই টাকা কেজি থেকে শুরু করে আজ ১২ টাকা কেজিতে বড়ি তৈরির কাজ করছি। ২০ বছরের অভিজ্ঞতা আমার। প্রতিদিন ৪ থেকে ৬শ’ টাকা আয় হয়। মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আমরা পাই। সেটি দিয়ে পরিবার ও নিজের চাহিদা মিটিয়ে থাকি।


আরেক কারিগর লতা মাহাতো জানান, এলাকার শত শত নারী এই কাজে এখন ব্যস্ত। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে তা বানানোর ধুম পড়ে যায়। এখানকার বড়ি সুস্বাদু। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, রংপুর, দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এগুলো সরবরাহ করা হয়।


কুমড়ো বড়ির কারিগর তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ গ্রামের ভাংশিং পাড়ার আব্দুল হামিদ জানান, এই পেশা আমাদের বাপ-দাদার আমলের। তাই আজও তা করে আসছি। বড়ি মূলত মাষকলাই, চালকুমড়া, জিরা, কালোজিরা, মোহরী দিয়ে তৈরি করা হয়। প্রতি কেজি ৩০০-৩৫০ টাকা (বড়) এবং ১৫০-২০০ টাকা (ছোট) করে পাইকারি বিক্রয় করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিনিয়তই পাইকাররা এসে আমাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে যায়। এছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন হাটেও খুচরা বিক্রয় করা হয় এই পণ্য।

 

বগুড়া জেলা থেকে বড়ি কিনতে এসেছেন ব্যবসায়ী এনামুল হক। তিনি বলেন, এখানকার কুমড়া বড়ি যেমন নরম, তেমনি খেতেও বেশ ভালো লাগে। একবার যে এটি খায়, পরেরবার আবার খুঁজে কিনে নিয়ে যায়। আমার কিছু নিজস্ব খরিদ্দার আছেন, যাদের প্রধান পছন্দ এখানকার বড়ি। অন্য বড়ি কম দামে পাওয়া গেলেও নিতে চান না গ্রাহকরা। তাই বাধ্য হয়ে তাদের জন্য এখান থেকেই নিয়ে যাই।

 

একই গ্রামের বড়ি-কারিগর রহিম শাহ বলেন, আমরা বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে কোনোমতে পেশাটি জিইয়ে রেখেছি। ইচ্ছে থাকলেও এই শিল্পকে প্রসারিত করতে পারছি না। কারণ, পুঁজি কম। এখন উপকরণের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় লাভ অনেকটাই কমে গেছে।

 

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তরুণ সরকার জানান, সারাদেশে নওগাঁর কুমড়া বড়ির সুনাম রয়েছে। অনেক দূর থেকে ব্যবসায়ীরা এসে এই গ্রামের কুমড়া বড়ি নিয়ে যান। তবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা সরকারিভাবে কিংবা কোনও সংস্থার কাছ থেকে কোনও সহযোগিতা পান না। আর্থিকভাবে সহযোগিতা পেলে এই শিল্প আরও প্রসারিত হতে পারতো।

সাকসেস স্টোরি বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর