ঢাকা, ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১০ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৪৪৪

কোন পথে নতুন প্রজন্ম

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৪:০৯ ২৯ মে ২০২৩  

দেশের নতুন প্রজন্ম নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। তাদের আচরণ নিয়ে কথা বলার দরকার। মাঝে মাঝে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকি।আমার প্রজন্মের সাথে তাদের আচার আচরণে পার্থক্য সুস্পষ্ট। আমি কিছু বলার আগে চলুন শুনে আসি প্রাচীনকালের বিজ্ঞ প্রবীণরা কী বলে গেছেন।

 

গ্রিক দার্শনিক প্লেটো। তিনি দার্শনিক সক্রেটিসের ছাত্র ছিলেন। অন্যদিকে প্লেটোর ছাত্র ছিলেন এরিস্টটল। প্লেটো তার পরবর্তী জেনারেশনের কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন।  তিনি বলেন, ‘আমাদের তরুণদের মধ্যে এসব কী হচ্ছে? তারা তাদের বড়দের অসম্মান করে, পিতামাতার অবাধ্য। আইন উপেক্ষা করে। উগ্রতার আগুনে রাস্তায় দাঙ্গা হাঙ্গামা করে। তাদের নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটছে। কী হবে তাদের?’

 

প্লেটোর পরের যুগ ছিল এরিস্টটলের। তার জেনারেশন নিয়ে প্লেটোর এই উদ্বিগ্নতা। খ্রিস্টপূর্ব সাড়ে ৩০০ বছর আগের মানুষ প্লেটো। পরবর্তী প্রজন্মের বিষয়ে তার এই বক্তব্য দেখলে মনে হয়, আরে এতো আমারই কথা। প্লেটোর আগের প্রজন্মও একই মত দিয়ে গেছে। সক্রেটিস কী বলেছেন দেখুন।

 

তিনি বলেছেন, “শিশুরা এখন বিলাসিতা পছন্দ করে; তাদের আচরণ খারাপ, কর্তৃপক্ষের প্রতি রয়েছে অবজ্ঞা; তারা প্রবীণদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করে এবং কাজের জায়গায় বকবক করে। শিশুরা এখন স্বেচ্ছাচারী, তারা বাড়ির প্রতি অনুগত নয়। প্রবীণরা ঘরে প্রবেশ করলে তারা ওঠে দাঁড়ায় না। পিতামাতার বিরোধিতা করে, সঙ্গীর সামনে বকবক করে, খাবার টেবিলে আড্ডা দেয়, পায়ের ওপর পা ফেলে রাখে এবং তাদের শিক্ষকদের যাতনা করে।"

 

সক্রেটিসও আমার মনের কথাগুলো বলে গেছেন। শুধু প্লেটো বা সক্রেটিস নয়। সক্রেটিসের সাড়ে ৪ হাজার বছর আগেও মানুষ এমন ভাবতো। কয়েকদিন আগে ভারতের বিখ্যাত লেখিকা সুধা মূর্তির বক্তব্য শুনছিলাম৷ তার এখনকার পরিচয় ইংল্যান্ডের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর শাশুড়ি। তিনি একবার মিশরের পিরামিড দেখতে যান। এসময় একজন হায়ারোগ্লিফিক বিশষেজ্ঞ তার সাথে ছিলেন। পিরামিডের ভেতরে হায়ারোগ্লিফিক লিপিতে অনেক বাণি লেখা রয়েছে।

 

বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে এগুলোর অর্থ জেনে নেন সুধা। ইতিহাস শোনেন। একবার একটি বড় হায়ারোগ্লিফিকে তার চোখ আটকে যায়। তিনি বিশেষজ্ঞের কাছে জানতে চান, এতে কী লেখা রয়েছে। বিশেষজ্ঞ জানালেন,  পিরামিডের প্রতিষ্ঠাতার একটি বাণী এখানে লিখে রাখা হয়েছে। পরবর্তী প্রজন্ম নিয়ে উদ্বিগ্নতার বিষয়ে লিখেছেন।

 

তিনি লিখেছেন, ''পরবর্তী প্রজন্ম সময়কে সম্মান করে না। অর্থকে সম্মান করে না। বড়দের সম্মান করে না। তাদের কমনসেন্সও কম। কর্মঠ না। আমি আসলেই জানি না তারা কীভাবে টিকে থাকবে।''

 

৭ হাজার বছর আগেও নবীনের প্রতি একজন প্রবীণের একই ধরণের অভিযোগ। সব নেতিবাচক। অভিযোগগুলো বহু পুরাতন। সম্ভবত সৃষ্টির শুরু থেকে চলে আসছে। এসব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো- তারা বড়দের সম্মান করে না। এ কারণে পূর্বপুরুষরা শিশুদের মননে মগজে একটা বিষয় প্রোথিত করতে চেয়েছেন। তা হলো, বড়দের সম্মানের বিষয়। এ কারণে শিশুরা হাতেখড়ি থেকেই শিখে, বড়দের সম্মান করতে হয়। 

 

এবার আপনারাই বলুন। এসব নিয়ে লিখবো কীভাবে? নতুন প্রজন্ম নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছা করলেও থমকে যাই। কারণ নবীনদের প্রতি প্রবীনদের চিরায়ত স্টেরিওটাইপে আটকে গেছি কীনা তা নিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করি। অন্যদিকে নতুন প্রজন্ম নিয়ে যা লিখতে চাই- তার সব আড়াই হাজার বছর আগে সক্রেটিস, প্লেটো লিখে গেছেন। 

 

৭ হাজার বছর আগে পিরামিডের প্রতিষ্ঠাতা ভেবে গেছেন। এখন বললেও তার পুনরাবৃত্তি ছাড়া কিছুই হবে না। এত কিছুর পরেও দেশের নতুন প্রজন্ম নিয়ে যদি একই বা এর চেয়েও ভয়াবহ অভিযোগ করি তা কী অমূলক হবে!

 

লেখক: কাজী সায়েমুজ্জামান

সরকারি চাকরিজীবী ও গবেষক