ঢাকা, ০২ মে বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৬৬৩

উত্তাল ভারত

ট্রাম্পকে কাশ্মীর সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছেন মোদী?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:৩৬ ২৩ জুলাই ২০১৯  

কাশ্মীর ইস্যুতে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মধ্যস্থতা করার অনুরোধ জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ কথা জানিয়েছেন। ট্রাম্পের এ বক্তব্য ভারতকে চরম বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাশে বসে সোমবার ট্রাম্প এ ঘোষণা দেন। ওই মন্তব্যের কিছুক্ষণের মধ্যেই দিল্লি তা জোরালোভাবে অস্বীকার করে। মঙ্গলবার পার্লামেন্টে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রী কখনই এমন কোনও অনুরোধ জানাননি। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ভিত্তিতেই কাশ্মীর ইস্যুর সমাধান হতে হবে। সরকারের এ অবস্থানেও কোনও পরিবর্তন হয়নি।

তবু ভারতের বিরোধী দলগুলো নরেন্দ্র মোদীর নিজের মুখ থেকেই এর ব্যাখ্যা শোনার জন্য জেদ ধরে আছে। আসলে কাশ্মীর প্রশ্নে কোনও তৃতীয় পক্ষ নাক গলাতে পারবে না। শুধু ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই এর সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। এটাই দিল্লির বহু বছরের ঘোষিত অবস্থান।

১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি বা ১৯৯৯ সালের লাহোর ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত এ অবস্থান থেকে ভারতের কোনও সরকার কখনই সরে আসার ইঙ্গিত দেয়নি।  অথচ এদিন ওভাল অফিসে ট্রাম্প বলেন,দিনকয়েক আগে মোদী তাকে কাশ্মীর প্রশ্নে 'মিডিয়েশন বা আরবিট্রেশন করার জন্য' আর্জি জানিয়েছেন।

ভারতে এর প্রতিক্রিয়া হচ্ছে বোমাবর্ষণের মতো। সকাল থেকেই ভারতীয় বিরোধী দলগুলো পার্লামেন্টে এ ইস্যুতে তুমুল হইচই বাঁধিয়ে দেয়। উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডুকে রাজ্যসভায় বারবার বলতে শোনা যায়, আপনারা কি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বেশি বিশ্বাস করেন? দয়া করে একটা জাতীয় ইস্যুকে রাজনৈতিক রঙ দেবেন না!

কিছুক্ষণ পরই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর পার্লামেন্টে বিবৃতি দিয়ে বলেন, আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই মোদী কখনও ট্রাম্পকে এরকম কোনও অনুরোধ জানাননি। আমাদের অবস্থান খুব পরিষ্কার। পাকিস্তানের সঙ্গে সব অমীমাংসিত ইস্যু কেবল দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ভিত্তিতেই মেটাতে হবে। তারা সন্ত্রাসবাদে মদত দেয়া বন্ধ করলে তবেই সেটা হবে।

সপ্তাহদুয়েক আগে জাপানে জি-২০ সামিটে একান্তে কথাবার্তা হয় ট্রাম্প ও মোদীর। তাই প্রধানমন্ত্রীর নিজের মুখ থেকে ব্যাখ্যা শোনার দাবিতে বিরোধী দলগুলো অটল। কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ অন্য বিরোধী নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সাংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ভারতের অবস্থান খুব ভালো করে জানা সত্ত্বেও ট্রাম্প কেন এ ধরনের একটা কথা বললেন? সেটাই আমরা জানতে চাই। নিশ্চয় কোনও বিশেষ কারণেই তিনি এটা বলেছেন।আমরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্বাস করতে রাজি আছি। এটা বলছি না, মোদী মিথ্যা কথা বলছেন। কিন্তু তার পার্লামেন্টে এসে বিবৃতি দিতে অসুবিধা কোথায়?

কংগ্রেস নেতা শশী থারুর অবশ্য বলেছেন, আমার ধারণা ভালোভাবে না বুঝেই এবং কাশ্মীর ইস্যুতে সঠিকভাবে 'ব্রিফড' বা অবহিত না হয়েই ট্রাম্প ওই মন্তব্য করেছেন। দিল্লিতে বহু পর্যবেক্ষকেরও ধারণা অনেকটা সেরকমই। সিনিয়র কূটনৈতিক সংবাদদাতা দেবীরূপা মিত্র বিবিসিকে বলছিলেন, কাশ্মীরে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় ভারতের কোনও লাভ নেই। ফলে মোদীর এই ধরনের ইউটার্ন নেয়ারও কোনও কারণই নেই। তাই গোটা ব্যাপারটাই খুব ধন্দে ফেলার মতো। পাশে বসিয়ে বিভিন্ন দেশের অতিথি নেতাদের খুশি করে কথা বলাটা মার্কিন প্রেসিডেন্টের পুরনো অভ্যাস। আমার ধারণা, এটা সেই 'ট্রাম্প টেমপ্লেটে'রই অংশ।

বিতর্ক সামাল দিতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য এর মধ্যেই বিবৃতি দিয়েছে। তারা বলছে, কাশ্মীর একটি দ্বিপক্ষীয় ইস্যু।  ইমরান খানও মি. ট্রাম্পের মন্তব্যকে লুফে নিতে দেরি করেননি। তবে দিল্লি ও ওয়াশিংটন যত দ্রুত সম্ভব এই অস্বস্তিকর বিতর্ককে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।

বিশ্ব বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর