ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
২৮৬

দেশের মাটিতে সবারই সমান অধিকার থাকবে: প্রধানমন্ত্রী

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:০৯ ১৬ ডিসেম্বর ২০২০  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান বিজয় দিবসে দেশবাসীকে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দৃঢ় থাকার আহ্বান পুণর্ব্যক্ত করে বলেছেন, এই দেশের মাটিতে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান অধিকার নিয়েই বসবাস করবে।

 

তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে-সবাই এক হয়ে মুক্তিযুদ্ধে রক্ত ঢেলে দিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছে। যার যা ধর্ম ধর্ম তা পালনের স্বাধীনতা সবারই থাকবে। আমরা সেই চেতনায় বিশ্বাস করি এবং ইসলাম আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়ে থাকে।

 

বঙ্গবন্ধু কন্যা আজ বুধবার বিকালে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২৩, বঙ্গবন্ধু এভেনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি একটা কথাই বলবো এই মাটিতে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ-সব ধর্মের মানুষের বসবাস থাকবে। অর্থাৎ আমরা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে অন্য ধর্মকে অবহেলার চোখে দেখবো তা নয়।

 

তিনি বলেন, হযরত মুহম্মদও (সা:) আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়ে গেছেন। আমি এটুকুই বলবো সবাইকে যেকোনও পরিস্থিতি সহনশীলতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে। কে কি বললো না বললো তা শোনার থেকে কতটুকু আমরা দেশের জন্য করতে পারলাম, সেটাই আমাদের চিন্তায় থাকবে। তাহলেই আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবো। সঠিক কাজ করতে পারবো।

 

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালের মহান বিজয়ের প্রাক্কালে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। যাতে বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জ্ঞানী, গুণী কেউ না থাকে। ঠিক যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশেষ করে ৮ ও ৯ ডিসেম্বর ব্যাপকভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যা চলে। আমরা ১৪ ডিসেম্বর দিনটিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করি।

 

নিজে একজন স্বজনহারা তাই স্বজনহারার বেদনা তাকে স্পর্র্শ করে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, সেসময়ে অনেকে তাদের পরিজনের লাশও পাননি। আবার ’৭৫ এ জাতির পিতার সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ সংগঠনের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, যাদের লাশও পাওয়া যায়নি।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নির্যাতন তো চলছে। অগ্নিসন্ত্রাস থেকে শুরু করে নানাভাবে, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস-সবকিছু আমরা দেখেছি। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে কথা ওঠানোর চেষ্টা হয়েছে। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ সমান সুযোগ নিয়ে চলবে।

 

তিনি এসময় কোভিড-১৯ বিষয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করায় দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। বলেন, আমি সবাইকে অনুরোধ করবো আমাদের সংগঠনটাকে শক্তিশালী করতে হবে। জাতির পিতার আদর্শকে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

 

শেখ হাসিনা বলেন, যে নামটি ’৭৫ এর পরে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল; সেখানে আজ ইউনেস্কো ঘোষণা দিয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে অর্থনীতির ক্ষেত্রে যারা অবদান রাখতে সমর্থ হবেন; তাদের আন্তর্জাতিক পুরস্কার দেয়া হবে। এটা মুজিব শতবর্ষে সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য বড় একটি উপহার বলে আমি মনে করি। 

 

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব করোনা মহামারী থেকে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সবার প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। বলেন,ভ্যাকসিন আসার ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। ইতোমধ্যে আমাদের চুক্তিও হয়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদনও দিয়ে দিয়েছে। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি এটা আমরা পেয়ে যাব।

 

তিনি বলেন, তবুও সবচেয়ে বড় সুরক্ষা হচ্ছে মাস্ক পরে থাকা, হাতটাকে সাবান বা স্যানিটাইজার ব্যবহারের মাধ্যমে একটু পরিস্কার রাখা, সামজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং বাইরে কম ঘোরাঘুরি করা।

 

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, দেশের মানুষকেও আমি বলবো সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মানতে হবে এবং জাতির পিতা যে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন, সেই স্বপ্ন আমরা পূরণ করবো-এটাই আজকের বিজয় দিবসে আমাদের প্রতিজ্ঞা।

 

জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার পর হত্যাকারীদের ইনডেমনিটি দিয়ে বিচারের পথ রুদ্ধ করা, বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে সেই খুখিদের পুরস্কৃত করা, জাতির পিতার শুরু করে যাওয়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে কারাগার থেকে তাদের মুক্ত করে দিয়ে রাজনীতি করার অধিকার প্রদান এবং ইতিহাস বিকৃতির ষড়যন্ত্র সম্পর্কেও আলোকপাত করেন প্রধানমন্ত্রী।

 

তার ভাষণের প্রারম্ভে বাঙালি জাতি রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, বঙ্গমাতাসহ ১৫ আগস্টের সব শহীদ, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং সম্ভ্রমহারা দুই লাখ মা-বোনকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারি দেশ, সরকার, রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি বিশেষের অবদান স্মরণ করেন।

 

শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি রাষ্ট্র বিশেষ করে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল এবং ভারতের জনগণ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এছাড়া সৌভিয়েত রাশিয়াসহ অন্য দেশগুলো চেকোশ্লোভাকিয়া, যুগোশ্লাভিয়ার মার্শাল টিটো থেকে শুরু করে প্রত্যেকে এমনকি সমগ্র বিশ্বের জনগণও আমাদের সমর্থন দিয়েছিলেন। যেসব রাষ্ট্র আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল তাদের জনগণ আমাদের পক্ষে ছিল। সবাইকে আমি স্মরণ করি এই কারণে যে, সবার সহযোগিতা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

 

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জাতির পিতার আদর্শ বুকে নিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করে এদেশের মানুষের পাশে আমরা থাকবো। দৃঢ় কন্ঠে বলেন,এদেশের মানুষ আর কারো কাছে মাথা নত করে চলবে না। বিশ্ব দরবারে সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করেই বাঙালি জাতি চলবে।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন-ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না। কাজেই আমরা ভিক্ষুক না থেকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছি। আজকে আমাদের রিজার্ভ ৪২ দশমিক ০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু আয় ২০৬৪ মার্কিন ডলারে ঠেকেছে। পাশাপাশি আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি বা খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়েছি। সর্বোপরি উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি আমরা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।

 

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের মধ্যে তার সরকার সকলের জন্য যথাযথ ও সময়োপযোগী প্রণোদনা প্রদান করে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। আজকে সরকার মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেশের সব গৃহহীণ, ভূমিহীনকে ঘর করে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশের শতভাগের মধ্যে ইতোমধ্যেই ৯৯ ভাগ গৃহে বিদ্যুতের আলো জ্বালতে সক্ষম হয়েছে।

 

আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে করোনায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে গৃহহীনদের ঘর দেওয়ার সরকারের কর্মসূচিতে এবং মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান।

 

শেখ হাসিনা করোনাকালে সংগঠনের নেতাকর্মীসহ দেশে-বিদেশে মৃতুবরণকারী বাংলাদেশিদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। বলেন, মানুষের সেবা করাই আওয়ামী লীগের কাজ। সেই সেবা আমরা করে যাচ্ছি এবং আগামীতেও করে যাব।