ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ৭ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৪০৮

ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবেন না: প্রধানমন্ত্রী

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:১০ ১৫ ডিসেম্বর ২০২০  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্মকে ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার’ হিসেবে সমাজে নৈরাজ্য ও বিভাজন সৃষ্টির জন্য ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলেছেন, সরকার আর এই অন্যায় কাজগুলো সহ্য করবে না। এদেশে ধর্মের নামে আমরা কোনও ধরনের বিভেদ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দিব না। 

 

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে তিনি কিছু ইসলামপন্থী দলের জাতির পিতার ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে সৃষ্ট সাম্প্রতিক নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, ধর্মান্ধ নয়। ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার করবেন না। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার রাখেন। ধর্মীয় মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে দেশের মানুষ প্রগতি, অগ্রগতি এবং উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৭১’র পরাজিত শক্তির একটি অংশ মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া বক্তব্য দিয়ে (জাতির পিতার ভাস্কর্য তৈরির বিষয়ে) সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে ইদানিং মাঠে নেমেছে। সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।

 

সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতা ১৯৭২ সালে ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার না করতে বলেছিলেন, কিন্তু পরাজিত শক্তির দোসররা দেশকে আবার ৫০ বছর আগের অবস্থায় ফিরে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। রাজনৈতিক মদদে সরকারকে ভ্রুকুটি দেখানোর পর্যন্ত ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে।

 

যারা ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, প্রধানমন্ত্রী সেই সমস্ত লোককে স্মরণ করিয়ে দেন-মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান-সব ধর্মের-বর্ণের মানুষের রক্তের বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছে।

 

তিনি বলেন, এ বাংলাদেশ লালন শাহ, রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, জীবনানন্দের বাংলাদেশ। এ বাংলাদেশ শাহজালাল, শাহ পরান, শাহ মকদুম, খানজাহান আলীর বাংলাদেশ। এ বাংলাদেশ শেখ মুজিবের বাংলাদেশ, সাড়ে ষোল কোটি বাঙালির বাংলাদেশ। এ দেশ সকলের।

 

প্রধানমন্ত্রী সবার উদ্দেশ্যে বলেন, বিজয় দিবসের প্রাক্কালে তাই আসুন, আবারও আমরা শপথ নেই-আমরা যেন লাখো শহীদের রক্তের ঋণ ভুলে না যাই। আমরা যেন মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ভূলুণ্ঠিত হতে না দেই।

 

তিনি বলেন, যুবশক্তি, তরুণ সমাজ এবং নতুন প্রজন্মের কাছে অনুরোধ, তোমরা তোমাদের পূর্বসূরীদের আত্মোৎসর্গের কথা কখনই ভুলে যেও না। তাদের উপহার দেওয়া লাল-সবুজ পতাকার অসম্মান হতে দিও না।

 

তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদের বিজয়-নিশান সমুন্নত রাখার শপথ নাও এই বিজয় দিবসে। প্রতিজ্ঞা কর, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এদেশকে সোনার বাংলাদেশে পরিণত করবে। তবেই ৩০ লাখ শহিদের আত্মা শান্তি পাবে। জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ হবে।

 

শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্রোহী কবি, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় বলতে চাই: ‘চাহি না জানিতে-বাঁচিবে অথবা/ মরিবে তুমি এ পথে,/এ পতাকা বয়ে চলিতে হইবে/বিপুল ভবিষ্যতে।/

 

তিনি দেশবাসীকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান পুণর্ব্যক্ত করেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, এক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ বছর আমাদের বিজয় দিবস উদ্যাপন করতে হচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আমাদের দৈনন্দিন কার্যপ্রণালীতে পরিবর্তন আনতে হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে, জন সমাগম এড়িয়ে আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় কাজকর্ম সম্পন্ন করতে হচ্ছে। প্রতিটি মানুষের জীবনই মহা মূল্যবান। কোনও অবহেলায় একজন মানুষেরও মৃত্যু কাম্য নয়।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিজয় দিবস উদ্যাপনসহ যাবতীয় কাজকর্ম সম্পন্ন করার অনুরোধ জানাচ্ছি। আপনারা ঘর থেকে বের হওয়ার সময় অবশ্যই মাস্ক পরিধান করবেন এবং মাঝে মধ্যে হাত সাবান অথবা স্যানিটাইজার দিয়ে পরিস্কার করবেন। আপনার সুরক্ষা, সবার জন্য রক্ষাকবচ।

 

এ বছরটি শুধু আমাদের জন্যই নয়, বিশ্ববাসীর জন্য এক দুর্যোগময় বছর এবং করোনাভাইরাস মহামারি স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার পাশাপাশি অর্থনীতির উপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

 

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে অনেক উন্নত এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির মুখে পড়লেও বাংলাদেশে তার সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপ এবং কর্মসূচির ফলে এই নেতিবাচক অভিঘাত কিছুটা হলেও সামাল দিতে সক্ষম হয়েছে।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে যা জিডিপি’র ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় আড়াই কোটি প্রান্তিক মানুষকে নগদসহ নানা সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

 

শেখ হাসিনা বলেন, প্রাথমিক ধাক্কা সামলিয়ে আমাদের প্রবাসী আয়, কৃষি উৎপাদন এবং রপ্তানি বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। গত অর্থবছরে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ হারে আমাদের প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।

 

তিনি বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রক্ষেপণ বলছে ২০২০ সালে বাংলাদেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধি হবে দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। আমাদের বৃহৎ প্রকল্পগুলোর কাজ পূর্ণগতিতে এগিয়ে চলছে। আমাদের স্বপ্নের ও গর্বের পদ্মাসেতুর সব স্প্যান বসানো শেষ। ঢাকায় মেট্রোরেলের কাজ আবার পুর্ণদ্দোমে শুরু হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ এই মহামারিতে একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলির নদীর তলদেশে ট্যানেল নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। 

 

দেশের মহাসড়কগুলো চার-লেনে উন্নয়নের কাজও পুরোদমে এগিয়ে চলছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। বলেন, চলতি বছর জাতি তার জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা উদ্যাপন করছে। যদিও করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের কর্মসূচিতে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হয়েছে। আগামী বছর আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি। করোনাভাইরাসের এই মহামারি না থাকলে আমরা যথাযথ উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব উদযাপন করবো, ইনশাআল্লাহ। একইসঙ্গে চলবে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা।

 

বঙ্গবন্ধু বলতেন ভিক্ষুক জাতিকে কেউ সম্মান করে না, জাতির পিতার ভাষণের এই বিখ্যাত উদ্ধৃতি তুলে ধরে তার কন্যা বলেন, আমরা বাংলাদেশের সেই দুর্নাম ঘুচিয়েছি। আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশ আজ একটি সমীহের নাম। আজকের বাংলাদেশ আর অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর বাংলাদেশ নয়। আজকের বাংলাদেশ স্বাবলম্বী বাংলাদেশ। একটা সময় ছিল আমাদের উন্নয়ন বাজেটের সিংহভাগ আসতো বিদেশি অনুদান থেকে। আজ বাজেটের ৯৭ ভাগ মেটানো হয় নিজস্ব অর্থায়নে। বাংলাদেশ কারও দয়া বা করুণার উপর নির্ভরশীল নয়।

 

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার। আমরা তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে। উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। তবেই ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের উন্নত, সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে।

 

তিনি ভাষণে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে শুরু করে রেসকোর্সের ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে সমগ্র জাতিকে বৃহৎ এক জনযুদ্ধের জন্য ঐক্যবদ্ধ করার ইতিহাস সংক্ষেপে তুলে ধরেন।

 

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা যখন যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে ব্যস্ত, দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, তখনই পরাজিত শক্তির দোসররা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে সপরিবারে হত্যা করে।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে শুধু একজন ব্যক্তি মুজিবের মহাপ্রয়াণ হয়নি। তাঁকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রয়াস চালানো হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাঙালি জাতির যে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা সূচিত হয়েছিল, তা স্তব্ধ করে দেওয়া হয়। তাঁকে হত্যার মাধ্যমে একটি আদর্শ ও স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটানো হয়। যে স্বপ্নের সঙ্গে জড়িয়েছিলেন এ দেশের লক্ষ-কোটি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্য। সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন।

 

জাতির জনক শুধু একজন খাঁটি মুসলমানই ছিলেন না, তিনি ধর্মীয় আচারাদি নিষ্ঠার সঙ্গে প্রতিপালন করতেন, উল্লেখ করে তিনি বলেন,তার মতো আর কে বাংলার মানুষের মন-মনন-আকাক্সক্ষা বুঝতে পারতো! তাই তিনি যখন সংবিধান রচনা করেন, তখন মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র – এই চারটি মৌলিক বিষয়কে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেন।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু দুঃখের বিষয় ৭৫-পরবর্তী মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বিরোধী সরকারগুলো মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত মূল্যবোধগুলোকে জলাঞ্জলি দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় নিজেদের আসন চিরস্থায়ী করার পদক্ষেপ গ্রহন করে। সামরিক জান্তা সঙ্গীনের খোঁচায় সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ধারাবাহিক অপপ্রচার চালিয়ে, ইতিহাস বিকৃত করে আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে কালিমা লেপনের চেষ্টা করে।

 

তিনি বলেন, আইন করে মদ-জুয়া-ঘোড় দৌড় নিষিদ্ধ করা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা, মাদ্রাসা বোর্ড স্থাপন, ওআইসি’র সদস্যপদ অর্জনের মত কাজগুলো বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই বাস্তবায়িত হয়েছিল স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে।

 

শেখ হাসিনা এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী জাতির পিতা ইসলাম ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষা এবং প্রসারে যা করেছেন, ইসলামের নামে মুখোশধারী সরকারগুলো তা কখনই করেনি।

 

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে এবং ২০০৯ থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের সরকার দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নয়ন সাধন করেছে। আমার সরকার ধর্মীয় শিক্ষা প্রচার এবং প্রসারে যত কাজ করেছে, অতীতে কোন সরকারই তা করেনি।

 

তিনি বলেন, আমরা ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছি। ৮০টি মডেল মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। কওমী মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দিয়েছি এবং দাওয়ারে হাদিস পর্যায়কে মাস্টার্স মান দেওয়া হয়েছে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছি। প্রতিটি জেলা-উপজেলায় দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে।

 

ইমাম-মোয়াজ্জিনদের সহায়তার জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করে দেয়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওতায় সারাদেশে মসজিদ-ভিত্তিক পাঠাগার স্থাপন, লক্ষাধিক আলেম-ওলামায়ে কেরামের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড এবং ইসলামের প্রসারে পদক্ষেপের উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

 

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের সময়ে সমগ্র জাতির ঐক্যবদ্ধভাবে করোনাভাইরাস মহামারী থেকে সাধারণ দেশবাসীকে রক্ষার সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার পুনরোল্লেখ করে বলেন, গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলা করে সমগ্র বিশ্বের বুকে নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করেছি।

 

তিনি বলেন, প্রমত্তা পদ্মার বুক চিরে নিজেদের অর্থায়নে নির্মাণাধীন পদ্মাসেতু মাত্র সপ্তাহ খানেক আগে দেশের দুই প্রান্তকে সংযুক্ত করেছে। পৃথিবীর বুকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার প্রত্যয় নিয়ে দেশ এবং দেশের বাইরে অবস্থানরত বাংলাদেশের সকল নাগরিককে আমি বিজয় দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

 

শেখ হাসিনা বিজয়ের এই মাহেন্দ্রক্ষণে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চারনেতা, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছাসহ ১৫ আগষ্টের সকল শহীদ, সার্বোপরি মুক্তিযুদ্ধে ৩০ রাখ শহীদ এবং সম্ভ্রম হারা দুই লাখ মা-বোনকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

 

তিনি বলেন, আজকের এই মহান দিনে আমি মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাদানকারী বিভিন্ন দেশ ও দেশের জনগণ, ব্যক্তি এবং সংগঠনের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বীর সদস্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হয়েছেন। তাাদের প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ভারতের তৎকালীন সরকার, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সর্বোপরি সাধারণ জনগণকে-যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন জানিয়েছিলেন এবং নানাভাবে সহযোগিতা করেছিলেন।

 

প্রধানমন্ত্রী এসময় করোনাভাইরাস-সহ নানা রোগে আক্রান্তÍ হয়ে এ বছর যে সব রাজনীতিক, সংসদ সদস্য, বরেণ্য ব্যক্তিসহ সর্বস্তরের মানুষ মারা গেছেন, তাদেরও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। পরিশেষে সবাইকে আবারও মহান বিজয় দিবসের বর্ণিল শুভেচ্ছা জানিয়ে সকলে যেন ভালো থাকেন, সুস্থ ও নিরাপদ থাকেন, মহান আল্লাহতায়ালার কাছে সেই কামনাও করেন তিনি।