ঢাকা, ১৭ এপ্রিল বুধবার, ২০২৪ || ৩ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৪১৫

নানার সঙ্গে নাস্তা করতে ভালোবাসতাম: জয়

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৯:৫৩ ১৮ মার্চ ২০২০  

জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের নাতি সজীব ওয়াজেদ জয় নানার সঙ্গে উষ্ণতা ও স্নেহের কথা স্মরণ করে বলেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নাস্তা করতে ভালোবাসতেন এবং যেভাবে যা খেতেন তাই খেতে জিদ ধরতেন।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো ভিত্তিক রাজনৈতিক সংবাদ এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিষয়ক ‘রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিক্স’-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে জয় লিখেছেন, আমি আমার নানার সঙ্গে নাস্তা করতে ভালোবাসতাম। উনি যেভাবে যা খেতেন তাই খেতে জিদ করতাম। এ বছর জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী।
তিনি বলেন, তার কন্যা (আমার মা) এবং আমি গোটা জাতির সঙ্গে তা উদযাপন করছি। আমার নানা শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু অথবা ‘ফ্রেন্ড অব বেঙ্গল’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। সেই বছরই তার জন্ম। জনসেবা হলো আমাদের পরিবারের পেশা। আমার নানা ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। আমার মা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।
জয় জানান, দু’জনেই ওই পদে নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশ একটি গর্বিত ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র, যেমনটি তার নানা কল্পনা করেছিলেন। এর ফলস্বরূপ এশিয়ায় দেশটি এক দুর্দান্ত সাফল্যের দৃষ্টান্ত।
তিনি বলেন, আমার বয়স যখন ৪ বছর, তখন আমার নানার প্রত্যাশা প্রায় ধ্বংস করে দেয়া হয়। সেসময় আমার মা, বাবা, বোন এবং খালাসহ আমরা জার্মানিতে ছিলাম। সেনা কর্মকর্তারা আমার নানার বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের হত্যা করে। এরপর একটি বর্বর সামরিক জান্তা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে।
প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা বলেন, ১৯৮১ সাল পর্যন্ত আমার মা ও আমাকে আমাদের মাতৃভূমিতে ফেরার অনুমতি দেয়া হয়নি। ত্যাগ স্বীকার করাই ছিল আমাদের জীবন। আমার নানার জীবনের ১৪ বছর জেলে কেটেছে রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে। একবার জেল থেকে ছাড়া পেয়ে উনি যখন বাড়িতে এলেন, তার বড় ছেলেটি তাকে চিনতেই পারেনি।
তিনি বলেন, আমার মাকেও কোনও অপরাধ না করা স্বত্ত্বেও বেশ কয়েকবার কারাবরণ করতে হয়েছে। উনি যখন বিরোধীদলীয় নেত্রী, ২০০৪ সালে রাজধানী ঢাকার একটি রাজনৈতিক সমাবেশে তার ওপর গ্রেনেড হামলা হয়েছিল এবং অল্পের জন্য রক্ষা পান। এর বেশ কয়েক বছর পর, দেশের একটি আদালত রায় দিয়েছে, এ হামলার মূলহোতা ছিলেন তারেক রহমান। সে সেই সামরিক জান্তার পুত্র, যাকে আমার নানাকে হত্যার জন্য দায়ী করা হয়।
জয় বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি প্রায়শই রক্তাক্ত এবং সামরিক হস্তক্ষেপে বিঘ্নিত হয়েছে। বাংলাদেশের জন্মলগ্নে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান এবং এর সহযোগীরা এখানে গণহত্যা করে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করে। পরে আমার নানা এবং মায়ের নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগ এবং সামরিক জান্তার স্ত্রী ও পুত্রের নেতৃত্বাধীন সহিংস এবং পাকিস্তান সমর্থিত বিরোধীরা সরকার নিয়ন্ত্রণ করে।
তিনি বলেন, তবে বছরের পর বছর নির্বাসন, সংগ্রাম ও নির্যাতনের পরে আমার মা ১৯৯৬ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং২০০১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সাল থেকে  পরপর দু’বার নির্বাচিত হয়ে সরকার পরিচালনা করেন। উনি বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী নারী।
প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের স্বাধীনভাবে করা সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের গত বছর সমর্থনের হার ছিল বিস্ময়করভাবে ৮৩ শতাংশ। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের তিন চতুর্থাংশ বলেন, তারা মনে করেন, দেশ সঠিক পথে চলেছে।
তিনি জানান, তার নানা এটি দেখলে গর্বিত হতেন। তবে পুরোপুরি অবাক হতেন না। জয় বলেন, আমার মা, আমার নানার পাঁচ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ এবং লিঙ্গগত সাম্যতা ফ্যাশনেবল হয়ে ওঠার অনেক আগেই উনি এটি বিশ্বাস করতেন। তাদের সম্মিলিত নীতিমালার ফলস্বরূপ বাংলাদেশি নারীরা ক্রমবর্ধমান হারে সুশিক্ষিত হচ্ছে। প্রায়শই তাদের পরিবারের জন্য আয় রোজগার করছে এবং রেকর্ড সংখ্যক পদে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছে। আর এসবই সমাজের আমূল পরিবর্তনের অংশ, যা শিগগির একটি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশ ঘোষণা করায় জাতিসংঘকে উদ্বুদ্ধ করেছে।
জয় বলেন, ২০০৯ সালে মায়ের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু থেকে বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি ১৮৮ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর বাংলাদেশ রেকর্ড পরিমাণ উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমকি ৮ শতাংশ, যা ২০১৮ সালে তুলনায় ৭ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। দেশের সর্বস্তরের প্রতিটি মানুষ এ থেকে উপকৃত হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ১৫.৮ মিলিয়ন মানুষের দারিদ্র্য থেকে দূর করা হয়েছে। ফলে এ সময়ের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ৩১.৫ শতাংশ থেকে ২১.৮ শতাংশে নেমে এসেছে এবং মাথাপিছু আয় প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। এইচএসবিসি ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে বাংলাদেশ হবে ২৬তম বৃহত্তম অর্থনীতি।
শেখ হাসিনা পুত্র বলেন, আমার নানা বাদে প্রায় কেউই যা ভাবেননি বাংলাদেশ প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়ে তা সম্ভব করেছে। গত কয়েক দশক ধরে গণতন্ত্র একটি অসম্ভব স্বপ্ন মনে হতো। হেনরি কিসিঞ্জার এমনকি বাংলাদেশকে একটি তলাবিহীন ঝুড়ি বলে অভিহিত করেছিলেন। তবে আমার নানার বিশাল হৃদয় ছিল এবং প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তার বন্ধু, বিশ্বাসী অনুসারী আশাবাদী লোকজনে আমাদের বাড়ি ভর্তি হয়ে থাকতো। আমাদের সরকারি এবং ব্যক্তিগত জীবন ছিল পরস্পর জড়াজড়ি করে। দেশটি আমাদের পরিবারে পরিণত হয়েছিল এবং একটি সুখী পরিবারের উত্তরাধিকারের জন্য আমি একে ধন্যবাদ জানাই।

ফিচার বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর