ঢাকা, ২৭ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১০০৭

প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানে দরকার সমন্বিত উদ্যোগ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:২৩ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

প্রতিবন্ধীরা সমাজেরই অংশ। অনেকেই তাদের সমান চোখে না দেখলেও একটি ক্ষেত্রে স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে অনেক এগিয়ে তারা। প্রতিবন্ধীরা নিয়মানুবর্তী। কাজ থেকে ওদের ঝরে পড়ার হার শূন্য। তবে যোগ্যতা স্বত্বেও কাজ পায় না ওরা।

অনেকেই মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রির সঙ্গে সর্বপ্রকার যোগ্যতা অর্জন করলেও মানসিকতার কারণে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে প্রতিবন্ধীরা। তাদের কর্মসংস্থান সহজ করার লক্ষ্যে গেল ৩ বছর আয়োজন করা হচ্ছে চাকরি মেলা।

বেসরকারি সংস্থাগুলো প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান বাড়াতে গ্রহণ করছে নানমুখী প্রকল্প। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশ কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধী।  তবে তাদের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করা যাচ্ছে না। মূল কারণ চাকরিদাতাদের অনাস্থা।

সরকারি অফিসে শতাংশ প্রতিবন্ধীকে কাজের সুযোগ দেয়া বাধ্যতামূলক। বর্তমানে ১৪টি মন্ত্রণালয় প্রতিবন্ধী অটিজম আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে কাজ করছে। তবে ৮টি মন্ত্রণালয় ব্যাপারে খুব বেশি তৎপর। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা অনেক বেশি। 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রধান কারিগরি উপদেষ্টা কিশোর কুমার সিংহ বলেন, প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ কর্মসংস্থানে কাজ করার ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। সেক্ষেত্রে সামষ্টিক পর্যায়ে সরকারি নীতির সঙ্গে বেসরকারি সংগঠনগুলোর কাজের সমন্বয়, সরকারি নীতি কার্যকর করা এবং প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর সমন্বয় দরকার। সেটি না হলে কাজের ঘাটতি থেকে যায়।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কাজ থেকে প্রতিবন্ধীদের ঝরে পড়ার হার প্রায় শূন্য। কেননা তারা অনেক বেশি নিয়মানুবর্তী। ব্র্যাকের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রধান কর্মকর্তা আহমেদ তানভির আনাম জানান, ২০১২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত হাজার ৪৫৩ জন প্রতিবন্ধী তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ২০১৭ সালে কর্মসূচিতে যুক্ত হয়েছেন ৮৬৭ জন। তাদের মধ্যে ৯৯ শতাংশের চাকরি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে প্রতিবন্ধীদের দক্ষতা কাজে লাগানোর সাফল্য কী করে প্রাতিষ্ঠানিক খাতেও অর্জন করা যায়, সেই পথ খোঁজার তাগিদ দিয়েছেন প্রতিবন্ধীবান্ধব সুশীল সমাজ। 

প্রতিবন্ধীদের চাকরি দেয়ার লক্ষ্যে দেশে প্রায়শই চাকরি মেলার আয়োজন করা হয়। সামাজিক দায়বদ্ধতা অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সিলেট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির উদ্যোগে ১৮ আগস্ট চাকরি মেলার আয়োজন করা হয়। বিভাগের বিভিন্ন খাদ্য উৎপাদন বিপননকারী প্রতিষ্ঠান, আবাসিক হোটেল, রেস্তোরা, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিল্প প্রতিষ্ঠান তাতে অংশ নেয়। এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য চার শতাধিক প্রতিবন্ধী আবেদনপত্র জমা দেন। অর্ধশতাধিক প্রতিবন্ধীকে চাকরি দেয়া হয়। 

গেল বছরের শেষদিকে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবন্ধীদের চাকরি মেলা। সরকারের তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) আয়োজন করে। মেলা থেকে স্বনামধন্য অনেক প্রতিষ্ঠানই খুঁজে নিয়েছে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে। উদ্যোক্তারা ঘোষণা দিয়েছিলেন, আসছে বছরে সাড়ে তিন হাজার প্রতিবন্ধীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চাকরি নিশ্চিত করা হবে। আইটি সেক্টর ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সারাদেশে ২৮টি সেন্টারে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। সেই লক্ষ্যে কাজও চলছে। 

প্রতিবন্ধীতার সঙ্গে বেকারত্ব-দুটোতেই পেরেশান হয়ে পড়েছিলেন ফরিদপুরের মোজাম্মেল হক মিয়া। মার্কেটিংয়ে অনার্স-মাস্টার্সে ভালো ফলের পরও কোনো কাজ পাননি। ভাঙা পা নিয়ে হাঁটা গেলেও বেকার জীবন টেনে নেয়া বড় দায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হঠাৎ হাতে পান নিয়োগপত্র। মানে চাকরি নামের সেই সোনার হরিণ। এখন আশুলিয়ার ইএসকেই ক্লথিং পোশাক কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা তিনি। প্রতিবন্ধীদের জন্য কর্মসংস্থান মেলায় এমন শতাধিক প্রতিবন্ধীর বেকারত্ব ঘোচে।

ফিচার বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর