ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
৬৪৮

বাকশাল

বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের বাস্তবতা

জাফর ওয়াজেদ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১২:০৮ ২ এপ্রিল ২০১৯  

শোষকের গণতন্ত্র নয়, চেয়েছিলেন শোষিতের গণতন্ত্র। আর এই চাওয়াকে কার্যকর করার জন্য তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচী ঘোষণা করেছিলেন। তিনি রাজনীতি করেছেন দুঃখী বাঙালীর মুখে হাসি ফোটাবার জন্য। দুঃখী মানুষকে ভালবেসে পরিশ্রম করেছেন শোষণহীন সমাজ কায়েমের জন্য। দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচী দিয়ে বঙ্গবন্ধু জাতিকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন। তাকে হত্যা করে সে সম্ভাবনা ধ্বংস করে দেয় ষড়যন্ত্রকারীরা।

বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের সূচনা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। কিন্তু তার প্রকৃত প্রারম্ভ দেখা সম্ভব হয়নি। দ্বিতীয় বিপ্লবকে বিচার করতে হয় সময়ের প্রেক্ষাপটে তত্ত্ব ও বাস্তবতার নিরিখে। এটা তো বাস্তব যে, দ্বিতীয় বিপ্লবের উৎস থেকে বিকাশের সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত নিরপেক্ষ মূল্যায়ন দাঁড় করাতে পারলেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের স্বরূপ চিহ্নিত করা যায়।

 

১৯৭৪ সালে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে বিশ্ব নেতাদের সামনে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু সদর্পে উচ্চারণ করেছিলেন, বিশ্ব দু’ভাগে বিভক্ত, শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের দলে।’তিনি তাই শোষিতের গণতন্ত্রের পক্ষে নিজের, দলের এবং দেশের অবস্থানকে দৃঢ় করেছিলেন।

তার জীবনচরিত পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, ব্যাপক বাঙালী জনগণের স্বার্থ রক্ষায় বঙ্গবন্ধুর সকল কর্মসূচী ও কর্মকান্ড অবিচল গতিতে এগিয়েছে সব সময়। ছয় দফার সংগ্রাম থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর সম্পূর্ণ কর্মসূচী ও কর্মকাণ্ডই পরিচালিত হয়েছে মেহনতী বাঙালী জনগণের স্বার্থে। বাঙালী মধ্যশ্রেণী বা ধনিক-বণিকের স্বার্থ যে বঙ্গবন্ধু রক্ষা করেননি, বিশেষ করে স্বাধীনতা পরবর্তীকালের কর্মসূচী ও নীতিমালা পর্যালোচনা করলেই তার প্রমাণ মেলে।

 

বঙ্গবন্ধুর প্রথম বিপ্লব ছিল স্বাধীনতা। বিশ্ব মানচিত্রে তিনি বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন। আর দ্বিতীয় বিপ্লব হলো, সেই স্বাধীন দেশের মানুষের সার্বিক মুক্তি। ১৯৭২-এর ২৬ মার্চ জাতীয়করণ নীতি ঘোষণা উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেছিলেন, আমার সরকার অভ্যন্তরীণ সমাজ বিপ্লবে বিশ্বাসী। পুরাতন সমাজ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। দেশের বাস্তব প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে পুরাতন সামাজিক কাঠামোকে ভেঙ্গে দিয়ে নতুন সমাজ গড়তে হবে।’

বঙ্গবন্ধুর এই অঙ্গীকারই স্পষ্ট করে, স্বাধীনতার ঊষালগ্ন হতেই তিনি তার লক্ষ্যের প্রতি কতটা স্থিরচিত্ত ছিলেন। তাই জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে গ্রহণ করেছিলেন জাতীয় চেতনার উপযোগী পর্যায়ক্রমিক সহজ পথ। বঙ্গবন্ধুর জানা ছিল, শুধু তত্ত্বের আক্ষরিক বিন্যাস বা সূত্রের বিধিবদ্ধ প্রণালী দিয়ে বাংলাদেশের মতো অনগ্রসর দেশে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির গ্রহণযোগ্য পথ নির্ণয় করা যায় না। এখানে পুরাতন আর্থ- সামাজিক কাঠামোকে ভাঙতে হলে একটা কর্মসূচীভিত্তিক ধারাবাহিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এদেশের অতীত বামপন্থী আন্দোলন এই সহজ উপলব্ধি ধারণ করতে পেরেছিল, তা নয়। বঙ্গবন্ধুর এই মৌলিক উপলব্ধি বা বোধ রাজনৈতিক আন্দোলনের ক্ষেত্রেও জাগ্রত ছিল। যে কারণে ছয় দফার সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতার বিজয় পর্যন্ত তিনি হাজার বছরের জাতীয় আকাঙ্খার সফল বাস্তবায়ন ঘটাতে পেরেছেন। প্রমাণ করেছেন বাঙালীর স্বার্থে স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রশ্ন ভিন্ন কিছুই মানতে তিনি রাজি নন। নির্যাতন, ভয়, প্রলোভন কোন কিছুই তাকে বিচ্যুত করতে পারেনি।

স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট বলেছেন, সাবেকি আর্থ-সামাজিক কাঠামোকে ভাঙতে না পারলে জনগণের মুক্তি আসবে না।’ তাই পর্যায়ক্রমিক প্রগতিশীল কর্মসূচীর ভিত্তিতে তিনি সে পথে অগ্রসর হয়েছিলেন। এই প্রগতির আন্দোলনে বিকশিত পর্যায়টি ছিল তার দ্বিতীয় বিপ্লব। লাঞ্ছিত, নিপীড়িত, বঞ্চিত, শোষিত মানুষের মুক্তির জন্য সমাজতন্ত্রের পথে অগ্রসর হওয়ার চূড়ান্ত পদক্ষেপ শোষণহীন সোনার বাংলা’ গড়ার মৌলিক কর্মসূচী। আবার, এক্ষেত্রেও বঙ্গবন্ধু তার নিজস্ব চেতনা ও অভিজ্ঞতা বর্জন করে প্রগতির নামে আকস্মিকভাবে কোন অবাস্তব তত্ত্বাশ্রয়ী নিয়ম চাপিয়ে দেননি। জননেত্রী শেখ হাসিনা তেত্রিশ বছর আগে বলেছিলেন, দ্বিতীয় বিপ্লব ছিল বাঙালীর জনগণের মুক্তির পথনির্দেশ। বঙ্গবন্ধুর শোষণহীন সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই কর্মসূচী ছিল সুদূরপ্রসারী। সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে জাতীয় মুক্তির কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করার আয়োজন ছিল তার।

তৃতীয় বিশ্বের জনগণের সামনেও বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব ছিল একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। বঙ্গবন্ধু তার মুক্তি সংগ্রামের নিজস্ব অভিজ্ঞতা, জনগণের চেতনা ও দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করে যে নতুন দিকনির্দেশ দিয়েছেন, তা কোন ছকে বাঁধা বা ধার করা পদ্ধতি ছিল না। গণতন্ত্রকে শোষিত মানুষের উপযোগী করে সমাজতন্ত্রের পথে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে তিনি বাংলাদেশের জনগণের সামনে যে কর্মসূচী তুলে ধরেছেন, তা ছিল বিশ্ব রাজনীতির এক নতুন অধ্যায়।’

১৯৮৫ সালের ১০ অক্টোবর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জতীয় বিপ্লব’ শীর্ষক সেমিনারের উদ্বোধনী ভাষণে শেখ হাসিনা স্পষ্ট করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও লক্ষ্য কোন্ পথে ধাবিত। বঙ্গবন্ধু কৃষক ও শ্রমিকঅন্তপ্রাণ। তাই তিনি বিদ্যমান পদ্ধতির পরিবর্তন করে কয়েকটি দলের সমন্বয়ে গঠিত দলের নামকরণ করেছিলেন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বা বাকশাল। দেশের প্রশাসন ব্যবস্থাকে গণমুখী করার লক্ষ্যে ঢেলে সাজানোই ছিল বাকশাল পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য। একটি পদ্ধতি হিসেবে বাকশালের লক্ষ্য ছিল এমন একটি শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রবর্তন। যে ব্যবস্থা শোষিত মানুষের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে।

দ্বিতীয় বিপ্লবকে যারা কেবলই ‘বাকশাল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন কিংবা এই কর্মসূচীকে তত্ত্ব বা সংজ্ঞায় চিহ্নিত করতে প্রয়াসী হয়েছেন তারা শেখ হাসিনার বক্তব্যকে অনুধাবন করলে স্পষ্ট হতেন, তত্ত্ব-সূত্রের সনাতন বিশ্লেষণে এই কর্মসূচীর মৌলিক গতিপ্রাণ বোঝা যাবে না। শেখ হাসিনার সংক্ষিপ্ত অথচ স্বয়ংসম্পূর্ণ আলোচনার মধ্যেই ‘বাকশাল’ কর্মসূচী তথা দ্বিতীয় বিপ্লবের মূল সুর ধ্বনিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব ও তার নেতৃত্বের প্রভাব বাংলার মানুষের হৃদয়ে কি মরণপণ প্রতিজ্ঞার জন্ম দিয়েছিল সফল স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়েই তা প্রমাণিত। ছয় দফার ভিত্তিতে তিনি জাতীয় জীবনের ঘটনাস্রোতকেই শুধু নিয়ন্ত্রণ করেননি, পুরো জাতিকে বাঙালী জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। ছেষট্টি থেকে একাত্তর পর্যন্ত এক অভিনব স্বভাবনাপূর্ণ সময়ের জন্ম দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। জাতিসত্তায়, সমাজ ও রাজনীতিতে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র বাঙালী তার নেতৃত্বে নতুন ইতিহাস সৃজন করেছে।

বঙ্গবন্ধু ‘শোষণহীন সোনার বাংলা’ গড়তে চেয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিপ্লবের প্রেরণা ছিল এই নাম। তিনি যা করতে চেয়েছেন, তার মূল প্রেরণা ছিল অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে শোষণের অবসান ঘটিয়ে সোনার বাংলায় দেশকে রূপান্তরিত করা। নিজের দেশ ও জাতিকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সকল স্রষ্টা বা রূপকার যেভাবে নিজস্ব চেতনার পরিমন্ডল গড়ে তোলেন, বঙ্গবন্ধুও সেভাবেই তার দেশ ও জনগণের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের আদর্শ পরিমন্ডল গড়েছেন। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন অতীতের মতো স্বাধীনতা পরবর্তীকালেও তার সকল কর্মসূচীতে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। সরকারী আদেশ জারি করে তিনি সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাননি। গ্রহণযোগ্য কর্মসূচীর ভিত্তিতে তিনি জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের সাফল্য অর্জন করতে চেয়েছেন। এটা বাস্তব- যে জনগণের স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘকাল তিনি জীবনের সকল সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে সংগ্রাম করেছেন সেই জনগণকে মুক্তিসংগ্রামেও তিনি ঐক্যবদ্ধ করতে চেয়েছেন। স্বাধীনতার পর একে একে সর্বজনগ্রাহ্য কর্মসূচী প্রণয়ন করেছেন সময় ও গণচেতনার উপযোগী করে, যার ভিত্তিতে সমগ্র জনগোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে মূল লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারে।

বঙ্গবন্ধু কলেজের জীবনে মার্কস এবং এঙ্গেলসের গ্রন্থাদি পাঠ করে সমাজতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন; এমনটি বলা যাবে না। বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারার বিশ্লেষকরা বলেছেন, সুদীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে বাংলার গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে ঘুরে খেটেখাওয়া মানুষের অভাব, অনটন, শিক্ষা, চিকিৎসার অভাব ও অত্যাচারী শোষকের হৃদয়হীনতা নিজের চোখে দেখে এবং সরকারের বিভিন্ন সময় আপাত দৃষ্টিতে কল্যাণমুখী নীতিমালা ও কার্যক্রমের ব্যর্থতা লক্ষ্য করে অবশেষে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় এ দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব নয়।

বঙ্গবন্ধুর জীবনের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, ব্যাপক জনগণের বাস্তব জীবন ছিল তার অভিজ্ঞতার পরিম-ল। তত্ত্বের সঙ্গে বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়েই তৈরি হয়েছে তার পথ ও প্রক্রিয়া। নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়েই তিনি উপলব্ধি করেছেন ইতিহাসের রায়- বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ভিত্তিতে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনের পথেই বাঙালীকে মুক্তি অর্জন করতে হবে। আদর্শের বিষয়ে আপোস করে রাজনীতি করতে তিনি নারাজ ছিলেন। সাধারণ জনগণের রাজনৈতিক চেতনার সঙ্গে তার ক্রিয়া-কর্মের নিবিড় যোগসূত্র ছিল বলেই এবং আদর্শের জন্য যে কোন রকম ত্যাগ স্বীকার করতে সবসময় প্রস্তুত ছিলেন বলেই তিনি রাজনীতির ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

দ্বিতীয় বিপ্লব ছিল মূলত জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের পর্যায়ে জনগণকে একটি সর্বাঙ্গীন প্রগতিশীল সমাজ প্রতিষ্ঠার বাস্তব কর্মকা-ে নিয়োজিত করার পদ্ধতি। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বৈজ্ঞানিক নির্মাণ প্রক্রিয়ায় এই দ্বিতীয় বিপ্লব একমাত্র জনগণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই সফল হতে পারত। পরিস্থিতি এমন ছিল না যে, শোষক ও শোষিতের দ্বন্দ্বকে আরও তীব্রতর করে তুলে এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করা যেখানে শোষিত জনগণ শাসক শ্রেণীর হাত নির্মূল করে একটি শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে। বাস্তবে জনগণের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর গভীর পরিচয় ছিল বলেই তিনি জানতেন যে, শোষিত জনগণের রাজনৈতিক চেতনা আরও সমৃদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত এবং তাদের সাংগঠনিক ক্ষমতার বিকাশ লাভ না করা পর্যন্ত শ্রেণীসংগ্রামকে তীব্রতর করার কর্মকান্ড গ্রহণ করলে দেশে নৈরাজ্যই সৃষ্টি হবে। শোষিত জনগণের মুক্তি আসবে না।

বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর প্রগতিশীল বিভিন্ন পদক্ষেপ ও দ্বিতীয় বিপ্লবের মূল বিন্যাস ধারাটি এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বিচার্য হতে পারে। তিনি জনগণের চেতনার মান অক্ষুণ্ণ রেখে পর্যায়ক্রমে পুরনো সমাজ ভেঙ্গে নতুন সমাজ গড়ার জন্য অর্থবহ কর্মসূচী ঘোষণা করেছিলেন। সমাজের সকল ক্ষেত্রে যাতে একটা পরিবর্তনের ধারা সূচীত হয় এবং দ্রুত দরিদ্র শ্রেণীর কর্মসূচীগত ঐক্য ও সাংগঠনিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, বঙ্গবন্ধুর কর্মসূচী সেই লক্ষ্যেই পরিচালিত হয়েছে। তিনি শ্রেণীসংগ্রামের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টির পথ উন্মুক্ত করতে চাননি। জাতীয়করণ, ভূমি সংস্কার প্রভৃতি কর্মসূচীর মাধ্যমে কৃষক শ্রমিককে সংগঠিত করতে যেমনি সচেষ্ট হয়েছেন তেমনি সরকারী ও রাষ্ট্রীয় নীতিমালায় অধনবাদী অর্থনৈতিক বিকাশের পথে ধনিক-বণিক শ্রেণীর সম্পদ ও শ্রমের সকল মুনাফা একচেটিয়া ভোগের পথ বন্ধের ব্যবস্থা করেন। নতুন সমাজ বিনির্মাণের উপযোগী প্রশাসন, শিক্ষা, বিচার প্রভৃতি মৌলিক ক্ষেত্রেও সুনির্দিষ্ট পরিবর্তনের ধারা সূচনা করেন। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রীয় উদ্যোগেই মেহনতী শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা নিশ্চিত করেছেন।

 

আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষকে সামনে রেখে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচীর মূল্যায়ন জরুরী। স্বল্প পরিসরে বিশ্লেষণ করা দুরূহ যদিও, তবু তার রেশ সামনে নিয়ে আসা জরুরী। এ নিয়ে আরও পর্যালোচনা, মূল্যায়ন প্রয়োজন। বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হবে, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব কর্মসূচি নিয়ে অযৌক্তিক নিন্দা-মন্দ, কটু সমালোচনার অন্তরালে মূলত অন্তশূন্যতাই প্রকট ছিল। এই কর্মসূচি মূলত বাঙালীর মুক্তি সনদই বলে প্রতীয়মান হয়।

 

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট, বিশ্লেষক