ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৩২১

ভাতার টাকা সরাসরি পৌঁছবে উপকারভোগীর মোবাইলে: প্রধানমন্ত্রী

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:১৪ ১৪ জানুয়ারি ২০২১  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার মধ্যস্বত্তভোগীদের দৌরাত্ম হ্রাসকল্পে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বিভিন্ন ভাতার টাকা সরাসরি উপকারভোগীর মোবাইলে প্রেরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।


তিনি বলেন, ‘আমরা যে ভাতাটা যাকে দিচ্ছি, সেটা যেন সরাসরি সেই মানুষটার হাতে পৌঁছায়। মাঝে যেন আর কেউ না থাকে। অর্থাৎ অর্থটা যাদের প্রয়োজন তারাই পাচ্ছেন এবং তাদের যেভাবে খুশি তারা ব্যবহার করতে পারবেন।’


এটা করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘদিন থেকে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ ব্যবস্থা চালুর জন্য সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।


শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকালে সামাজিক নিরাপত্তা বলয় (এসএসএন)-এর বিভিন্ন ভাতা সরাসরি উপকারভোগীদের মোবাইল ফোনে প্রেরণের উদ্যোগের উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।


এখন থেকে দু’টি শীর্ষ মোবাইল ফাইনান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ এবং ‘বিকাশ’ এর মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বয়স্ক ভাতা, বিধাবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা সরাসরি উপকাভোগীদের মোবাইল ফোনে প্রেরণ করা হবে।


প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। এসময় সমাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সব থেকে বেশি উপকারভোগী জেলাসমূহের মধ্যে চাঁদপুর, পিরোজপুর, লালমনিরহাট ও নেত্রকোণা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত ছিল।


পল্লী অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে জাতির পিতাই প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, তিনি পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রম, প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত হাসপাতাল করা থেকে শুরু করে সমবায় ভিত্তিক চাষাবাষ চালু এবং উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।


তিনি বলেন, জাতির পিতা প্রত্যেকটি মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করে সারাদেশের জেলার সংখ্যা ২৯ থেকে বাড়িয়ে ৬০টি করেন। যেটি বর্তমানে ৬৪টি হয়েছে। আমরা যখন বয়স্ক ভাতা চালু করেছিলাম, তখন এভাবে চিন্তা করেছিলাম- কেউ কেবল ভাতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ুক সেটা আমরা চাইনি। ভাতা পাবে কিন্তু যাদের কর্মক্ষমতা রয়েছে তারা কিছু কাজও করবেন। একেবারে ঘরে বসে থাকবেন না। 


শেখ হাসিনা বলেন, প্রাথমিকভাবে সেসময়ে অন্তত ১০ কেজি চাল ক্রয়ের সামর্থ অর্জনে ১শ’ টাকা করে ভাতার প্রচলন করা হয়। যা বর্তমানে ৫শ’ টাকা হয়েছে এবং ভাতাপ্রাপ্ত জনগণের সংখ্যাও অনেক বৃদ্ধি করা হয়েছে।


তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্যটা হচ্ছে দেশের কোনও মানুষ যেন নিজেকে অপাংক্তেয় মনে না করে এবং এর মাধ্যমে প্রত্যেকের প্রতি রাষ্ট্রের যে কর্তব্য রয়েছে সেটাই আমরা করতে চাই।


বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আমি যেদিন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম শপথ নিয়েছিলাম সেদিনই বলেছিলাম দেশের সেবক হিসেবে কাজ করবো। প্রধানমন্ত্রীত্ব আমার কাছে আর কিছু না কেবল কাজের সুযোগ কাজের ক্ষমতাটার প্রাপ্তি।’


তাকে বারবার ভোটে নির্বাচিত করায় দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা পুণর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের জন্য কাজ করবো, মানুষের সেবা করবো। আমার সরকার মানে মানুষের সেবক। সেই সেবক হিসেবেই কাজ করতে চাই।’


অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমদ বক্তৃতা করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.জয়নুল বারী স্বাগত বক্তৃতা করেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের কর্মসূচির ওপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।


ইতোমধ্যে ভাতাভোগীদের ডাটাবেইজ তৈরি করা হয়েছে। কর্মসূচির আওতায় মোট ৮৮ লাখ ৫০ হাজার বিভিন্ন ভাতাভোগী-শিক্ষা উপবৃত্তি ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৬৯ লাখ জনের তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যেই সব ভাতাভোগীকে ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে ভাতা পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।


প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতার শুরুতে রবার্ট ফ্রষ্টের বিখ্যাত কবিতা ‘স্টপিং বাই উডস অন এ স্নোয়ী ইভনিং’ থেকে ‘দ্যা উডস আর লাভলি ডার্ক এন্ড ডিপ/ বাট আই হ্যাভ প্রমিজেস টু কিপ/ অ্যান্ড মাইলস টু গো বিফোর আই স্লিপ/’ উদ্ধৃতি তুলে ধরেন।


শেখ হাসিনা বলেন, আমার ক্লান্ত হওয়া চলবে না, ঘুমালে চলবে না, মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতেই হবে- আর সেই লক্ষ্যটা হচ্ছে এ দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা। যে স্বপ্ন দেখেছিলেন আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নিজের জীবনটাকে যিনি উৎসর্গ করেছিলেন এ দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোটা অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ তারপরও সেই কাজই জাতির পিতা করতে চেয়েছিলেন জীবনের সবরকম সুখ-স্বাচ্ছন্দকে তিনি দেখেননি। বারবার আঘাত এসেছে, মৃত্যুকে কাছ থেকেও দেখেছেন কিন্তু লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি। ফাঁসির আদেশ, গুলি, বোমা, কিছ্ইু তাঁকে টলাতে পারেনি।


আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, দেশকে এভাবে ভালবাসার শিক্ষাটা পিতার কাছ থেকেই পেয়েছিলেন। কারণ, তাদের পরিবার নয়, দেশের মানুষই জাতির পিতার কাছে সব থেকে বড় ছিল। যেজন্য মাত্র ৫৪ বছর বয়েসেই তিনি একবার করলেন পাকিস্তান সৃষ্টির আন্দোলন এবং এরপর লড়লেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য।

 

তিনি বলেন, ‘এই ঘুণে ধরা সমাজটাকে আমাদের পরিবর্তন করতে হবে’-জাতির পিতার ভাষণের এই উদ্ধৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গোটা বাংলাদেশটাকে উনি ঢেলে সাজাতে চেয়েছিলেন। যা কেবল রাজধানী বা শহর কেন্দ্রিক ছিল না, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন।’


’৮১ সালে দেশে ফেরার পর মানুষের দুর্দশার যে চিত্র দেখেছিলেন তা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
বলেন, মানুষের পেটে খাবার ছিল না, বিদেশ থেকে পুরনো কাপড় এনে মানুষকে পরতে দেয়া হোত, তাও অনেকে পেত না। দিনের পর দিন দুর্ভিক্ষ চলেছে, মানুষের সারি দেখে মনে হতো যেন জীবন্ত কঙ্কাল- এই ধরনের একটা পরিবেশ আমার নিজের চোখেই দেখা।


শেখ হাসিনা সেসময় মাইলের পর মাইল হেঁটে বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর স্মৃতিচারণ করে বলেন, তখন থেকেই এই চিন্তাটা ছিল, কি করবো- ক্ষমতায় গেলে? কাজেই ’৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় গিয়েই দেশের বয়োবৃদ্ধ, স্বামী পরিত্যক্তা এবং পরবর্তিতে প্রতিবন্ধী এবং সেসময়ে সব থেকে অবহেলায় থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করি।


জাতির পিতা প্রদত্ত সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদের (ঘ) এর উদ্ধৃতি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত বা বৈধব্য, মাতৃ-পিতৃহীনতা বা বার্ধক্যসহ অন্যান্য আয়ত্ত্বাতিত পরিস্থিতিজনিত কারণে অভাবগ্রস্থতার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য লাভের ব্যবস্থা রাষ্ট্র করবে।’


জাতির পিতা কন্যা বলেন, আমাদের নতুনভাবে কোনও কিছু চিন্তা করতে হয়নি, জাতির পিতা সংবিধানেই সমাজের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য বিধান দিয়ে গেছেন। যে পদাংক অনুসরণ করেই ১৯৯৭ সাল থেকে ভূমিহীন-গৃহহীণ মানুষকে ঠিকানা প্রদানে তার সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের শুরু।


তিনি বলেন, কৃষিমন্ত্রী এবং ’৭৫ এর ১৫ আগষ্টের শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াতের মাধ্যমে নোয়াখালির চরে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প চালুর মাধ্যমে এই প্রকল্পের কাজও জাতির পিতাই শুরু করে যান।


তার বিরোধী দলে থাকার সময় এবং সরকারের আসার পরেও বস্তির ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে মতবিনিময়ের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বস্তির ছোট ছেলে-মেয়েদের ডেকে তাদের পথ শিশু হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করে জেনেছেন-পারিবারিক সংঘাত অথবা অকাল বৈধব্য কিংবা স্বামী পরিত্যক্তা হওয়াই এর কারণ।


সরকার প্রধান বলেন, স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের জায়গা বাপের বাড়ি বা স্বামীর বাড়িতে না হওয়ায় ভাগ্য অন্বেষণে এসে অনেকেরই পতিতালয়ে ঠিকানা হয়। আর ছেলে-মেয়েগুলো ভবঘুরে বা পথশিশু হয়ে যায়। কাজেই হাতে কিছু টাকা রেখে পরিবার ও সমাজে যেন তারা বেঁচে থাকতে পারেন। নানা সামাজিক অবিচার থেকে অসহায় দরিদ্রদের রক্ষার জন্যই তার সরকার নানারকম ভাতার প্রচলন করেছে।


তিনি বলেন, হাতে নগদ টাকা থাকলে পরে স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবাদের পরিবারে স্থান হবে এবং সামাজিক সমস্যাও দূর হবে। ২০০১ সালের পর ক্ষমতায় এসেই বিএনপি-জামায়াত তার সরকারের দরিদ্রবান্ধব সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচিগুলোর সঙ্গে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঘরে বসে মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তির কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোও বন্ধ করে দেয়।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি বাড়ি একটি খামার (পরর্তীতে আমার বাড়ি আমার খামার) যেটি গ্রাম্য খামার ভিত্তিক গ্রামীণ জনগণের উন্নয়নের প্রচেষ্টা ছিল সেটি সহ বহু কাজ পরবর্তী বিএনপি সরকার বন্ধ করে দেয়।


শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্ভাগ্য ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। তবে, ২০০৯ সালে পুনরায় সরকার গঠনের পর সেসব কর্মসূচি পুনরায় চালু করেছি এবং এখনও চলছে। 


করোনাভাইরাসের কারণে জাতির পিতার চলমান জন্মশতবার্র্ষিকী উদযাপন কর্মসূচি ঘটা করে করতে না পারলেও তার সরকার মুজিববর্ষে দেশের গৃহহীন প্রত্যেককে একটি ঘরে বসবাসের ঘর করে দেওয়ার মাধ্যমে গৃহহীনদের পুনর্বাসনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে এক কোটির বেশি গাছ লাগানো এবং মুজিববর্ষ ও আসন্ন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকালে সরকার দেশের সব ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে সব ঘর আলোকিত করার পদক্ষেপও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।


এসব কাজে সবার স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করেন এবং বৃক্ষরোপন কর্মসূচিটি সবসময় চলমান রাখারও আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর