ঢাকা, ১৪ নভেম্বর শুক্রবার, ২০২৫ || ৩০ কার্তিক ১৪৩২
good-food
২০

মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির নতুন নীতিমালায় যা আছে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৮:২৪ ১৪ নভেম্বর ২০২৫  

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির বয়সসীমা, কোটা বণ্টন ও ডিজিটাল লটারি–প্রক্রিয়ায় নতুন নির্দেশনা দিয়ে সংশোধিত ভর্তি নীতিমালা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তির পুরো কাঠামো এ নীতিমালায় পুনর্গঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব রেহেনা পারভীন স্বাক্ষরিত নীতিমালাটি জারি হয়।

বয়স নির্ধারণে কঠোরতা

নীতিমালায় প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য বয়স নির্ধারণে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ অনুসরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, ভর্তির সময় শিক্ষার্থীর বয়স ৬ বছরের বেশি হতে হবে। তবে শিক্ষাবর্ষ ১ জানুয়ারি শুরু হওয়ায় বয়সসীমা ধরা হয়েছে সর্বনিম্ন ৫ বছর এবং সর্বোচ্চ ৭ বছর। ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য শিক্ষার্থীর জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারি ২০২১ থেকে ১ ডিসেম্বর ২০১৮ এর মধ্যে হতে হবে। বয়স যাচাইয়ের ক্ষেত্রে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদের সত্যায়িত কপি জমা দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ পাঁচ বছর বয়সের ছাড় পাবেন। পরবর্তী শ্রেণিগুলোতেও বয়স নির্ধারণ প্রথম শ্রেণির ভিত্তিতে ধারাবাহিকভাবে প্রযোজ্য হবে।

প্রতি শাখায় সর্বোচ্চ ৫৫ শিক্ষার্থী

২০২৬ শিক্ষাবর্ষ ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। প্রতি শ্রেণির প্রতিটি শাখায় সর্বোচ্চ ৫৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়ার সীমা বজায় রাখা হয়েছে।

ভর্তি হবে ডিজিটাল লটারিতে

ভর্তি প্রক্রিয়া পুরোপুরি কেন্দ্রীয় ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অনলাইনে আবেদন জমা দেওয়ার পর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি নির্বাচনের জন্য ডিজিটাল লটারি অনুষ্ঠিত হবে। লটারির ফলাফলের সমস্ত তথ্য কারিগরি সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা মহানগরী ভর্তি কমিটিকে প্রদান করবে। লটারির কার্যক্রম মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এবং ভর্তি কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে সম্পন্ন হবে।

প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রেণিভিত্তিকভাবে প্রথম অপেক্ষমাণ তালিকা প্রস্তুত করা হবে। প্রয়োজন হলে দ্বিতীয় অপেক্ষমাণ তালিকাও তৈরি করা হবে। নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের নাম সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট এবং নোটিশ বোর্ডে প্রকাশ করা হবে। কোনো অবস্থাতেই তালিকার বাইরে থাকা শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা যাবে না।

সর্বোচ্চ পাঁচটি পছন্দক্রম, দ্বৈত শিফটে আলাদা গণনা

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে আবেদনকারীরা সর্বোচ্চ পাঁচটি বিদ্যালয় পছন্দক্রম দিতে পারবেন । এদিকে ডাবল–শিফট স্কুলের উভয় শিফটে আবেদন করলে তা দুটি পছন্দ হিসেবে গণ্য হবে। আবেদন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে শিক্ষার্থীকে পছন্দ করা বিদ্যালয়গুলোর মধ্য থেকে একটি বিদ্যালয় চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত করতে হবে। সফটওয়্যারেই এ ব্যবস্থা যুক্ত থাকবে।

ঢাকা মহানগরের ৪৪ স্কুল তিন গ্রুপে বিভক্ত, ক্যাচমেন্ট কাটা ৪০% বহাল

ঢাকা মহানগরের ৪৪টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আগের মতো তিনটি গ্রুপে থাকবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ তিনটি থানাকে ‘ক্যাচমেন্ট এরিয়া’ হিসেবে নির্ধারণ করতে পারবে। ক্যাচমেন্ট এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ শতাংশ কোটা এবারও বহাল রাখা হয়েছে।

কোটায় যত পরিবর্তন

মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৫ শতাংশ, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ২ শতাংশ এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ১০ শতাংশ কোটা অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে  শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্থ দপ্তর–সংস্থার কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য মোট ১ শতাংশ কোটা এবার দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে—মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য ০.৫ এবং অধীন দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য ০.৫ শতাংশ।

যমজ ও সহোদর কোটায়ও পরিবর্তন আনা হয়েছে। যমজ কোটা ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। সহোদর কোটা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। উভয় কোটা সর্বোচ্চ এক দম্পতির তিন সন্তানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

তবে মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা পাওয়া না গেলে সাধারন কোটা থেকে উক্ত আসনে ভর্তি করতে হবে। কোন অবস্থায় আসন শূন্য রাখা যাবে না। এছাড়া বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন আসনেও কোন শিক্ষার্থী পাওয়া না গেলে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শূন্য আসন পূরণ করতে হবে।

বদলিজনিত ভর্তি সুবিধা

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলির কারণে সন্তানদের ভর্তি আবেদন করা যাবে বদলির তারিখ থেকে দশ মাসের মধ্যে। নতুন কর্মস্থলের নিকটতম সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ থাকবে এবং এ জন্য প্রতি শাখায় ৫ শতাংশ অতিরিক্ত আসন সংরক্ষিত থাকবে। আগের কর্মস্থলে পুনরায় বদলি হলে সন্তানও পূর্বের বিদ্যালয়ে ফিরে যেতে পারবে।

বিশেষ পরিস্থিতিতে ভর্তির সুযোগ

পিতা-মাতার মৃত্যু বা বাসস্থান পরিবর্তনজনিত কারণে অথবা যে শিক্ষার্থীর পিতা-মাতা নেই তারা যখন বিদ্যালয় বদলাতে বাধ্য হবে, তাকে নতুন এলাকার সরকারি বিদ্যালয়ে সমশ্রেণিতে ভর্তি করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এছাড়াও কোনো সরকারি কর্মকর্তা /কর্মচারী কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তার সন্তান যে এলাকায় স্থায়ী হবে সে এলাকার সরকারি স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাবে।

ঢাকা, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ভর্তি কমিটি

ভর্তি কার্যক্রম তদারকির জন্য তিন স্তরে ভর্তি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরে মাউশির মহাপরিচালকের নেতৃত্বে, জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভর্তি কমিটির দায়িত্ব পালন করবেন।

ব্যয় ও তদারকি

ভর্তি ফি থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে সফটওয়্যার পরিচালনাসহ অন্যান্য খরচ মেটানো হবে। নীতিমালা বাস্তবায়নে কোনো অস্পষ্টতা দেখা দিলে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী তা সমাধান করা হবে।