ঢাকা, ২৪ এপ্রিল বুধবার, ২০২৪ || ১১ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৩৩৩

লালদীঘিতে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার দায়ে ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:০৫ ২০ জানুয়ারি ২০২০  

চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভার আগে সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার ঘটনায় ৫ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে সবাইকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে।


সোমবার বেলা ৩টায় নগরীর বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল হোসেন এ আদেশ দেন।


মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন পুলিশের তৎকালীন হাবিলদার প্রদীপ বড়ুয়া, কনস্টেবল মমতাজ উদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান, মো. আব্দুল্লাহ ও ইন্সপেক্টর গোপাল চন্দ্র (জেসি) মন্ডল। জেসি মন্ডল ছাড়া অন্য ৪ আসামি কারাগারে রয়েছে।

 

এ মামলার অপর ৪ আসামির মধ্যে প্রধান আসামি চট্টগ্রামের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদা, কনস্টেবল বশির উদ্দিন ও আব্দুস সালাম মৃত্যুবরণ করেছেন। ইন্সপেক্টর গোপাল চন্দ্র (জেসি) মন্ডল ঘটনার পর থেকে নিরুদ্দেশ। তিনি ছিলেন কোতোয়ালী অঞ্চলের পেট্রোল ইন্সপেক্টর।


চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে পৃথক চারটি ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল। এসব ধারায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে তাদের। হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকায় পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।


তিনি জানান, ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি নগরের লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগের সমাবেশে যোগ দিতে সভানেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার গাড়ি বহর নিউমার্কেট মোড় অতিক্রম করে জিপিও’র সামনে আসে। তখন আচমকা গর্জে উঠে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের রাইফেল। পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে একে একে ২৪ জন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। আহত হন আরো দু’শতাধিক নেতাকর্মী। পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণের সময় মানববেষ্টনী তৈরি করে শেখ হাসিনাকে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়।


এ ঘটনায় নিহতরা হলেন মো. হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম, স্বপন কুমার বিশ্বাস, এথলেবার্ট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডি কে চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বি কে দাশ, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, সমর দত্ত, হাসেম মিয়া, মো. কাসেম, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ ও শাহাদাত।
মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ আইনজীবী মো. শহীদুল হুদা বাদী হয়ে ওই ঘটনায় মামলা করেন আদালতে।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মামলাটি পুনরায় প্রাণ ফিরে পায়। আদালতের আদেশে মামলাটির তদন্তের ভার পড়ে সিআইডির ওপর। সিআইডি ১৯৯৭ সালের ১২ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। আবারও আদালতের নির্দেশে অধিকতর তদন্ত শেষে ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর পুলিশের আট সদস্যকে আসামি করে দ্বিতীয় দফায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি চাঞ্চল্যকর এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ১৯ জানুয়ারি সাফাই সাক্ষী দেন ৪ আসামি। ১৬৮ জন সাক্ষীর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন এমপিসহ ৫৩ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।


পিপি বলেন, ঘটনার আগের রাতে তৎকালীন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদা’র অফিসে গোপন সভা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় শেখ হাসিনাসহ দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের হত্যা করার। পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে ঘটনার দিন পেট্রোল ইনস্পেক্টর গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডল ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার পুলিশ সদস্য পাঁচ রাউন্ড করে গুলি চালান। তৎকালীন সিএমপি’র দায়িত্বশীল ৯ জন পুলিশ কর্মকর্তা দায়ী আসামিদের শনাক্ত করেছেন এবং আদালতে তাদের সাক্ষ্য প্রদানে এসব তথ্য জানিয়েছেন।


এছাড়া যুক্তিতর্কের সময় তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদার নির্দেশে জে সি মন্ডল তার নিয়ন্ত্রিত পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আদালতকে জানিয়েছিলাম আমরা। আসামিরা নিজেদের পক্ষে সাফাই গাইলেও নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেনি।


উল্লেখ্য, এ মামলার বাদি আইনজীবী মো. শহীদুল হুদা, প্রধান আসামি তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদা, তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি আব্দুল কাদের এবং মামলার এক আসামি পুলিশ কনস্টেবল বশির উদ্দিন ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন।