ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
২৯৯

শিক্ষার্থীদের মনের কথা জানতে স্কুলে স্কুলে `ইউএনও বক্স

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৪:০৫ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

বয়ঃসন্ধিকাল এমনই এক সময়, যে কোনও সমস্যার জন্য এই বয়সীদের দায়ী করা হয়। কৈশোরের উড়ন্ত স্বাধীনতা পাখা মেলার শুরুতেই প্রতিটি পদে পদেই আসে প্রতিবন্ধকতা ছোয়া। কখনও তা অসহনীয় হয়ে ওঠে। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই তা মুখ ফুটে বলার জোর থাকে না। বুকভরা অভিযোগ নিয়ে শেষ হতে থাকে একেকটি কৈশোর বেলা। তাই এবার শিক্ষার্থীদের অভাব-অনুযোগ-অভিযোগ, পরামর্শ ও মনের কথা জানতে অভিনব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেসব কথা মুখে বলতে সংকোচ লাগে, ভয় লাগে, সেগুলো লিখে চিরকুট হিসেবে ফেলে রাখলেই হবে ‘ইউএনও বক্স’-এ। 


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে বসানো হচ্ছে এই অভিযোগ বক্স, যার চাবি থাকবে সরাসরি ইউএনও বা তার একজন প্রতিনিধির কাছে। সপ্তাহে একদিন করে এসব বক্স খুলে অভিযোগগুলো নিয়ে যাওয়া হবে ইউএনও-এর কাছে। এরপর সবকিছুই পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেবেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজেই।


ইতোমধ্যে আশুগঞ্জ রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি হাজী আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষামূলকভাবে এই বক্স বসানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজিমুল হায়দারের এই উদ্যোগ ইতিবাচকভাবেই দেখছেন অভিভাবকরাও।
রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী সায়েদা খানম বুশরা বলেছে, ‘স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে বখাটেরা প্রায়ই আমাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করে, যা আমরা পরিবার ও শিক্ষকদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারি না। এই বক্সটি হওয়াতে আমরা খুশি, কেননা এখন থেকে কোনও সমস্যা হলে সরাসরি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে বলতে পারবো।’
সরকারি হাজী আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুলতানা আক্তার বলেছে, ‘অভিযোগ বক্সে দেওয়া তথ্য বা অভিযোগগুলোর গোপনীয়তা যেন রক্ষা করা হয়। তবে সার্বিকভাবে এই উদ্যোগটির জন্য আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যারকে ধন্যবাদ জানাই।’

একই বিদ্যালয়ের অপর শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার জানায়, পরিবার কিংবা শিক্ষকদের সঙ্গে বলতে না পারা অনেক সমস্যার কথাই তারা এই বক্সে লিখতে পারবে। এছাড়া ইভটিজিং, বখাটের উৎপাতসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দ্রুত হবে বলে মনে করছে সে।
নবম শ্রেণির ছাত্রী নূরে জান্নাত তোষা জানায়, এটির মাধ্যমে বাল্যবিবাহ ও ইভটিজিং কমে আসবে।


অভিভাবক মো. সাইদুর মিয়া বলেন, ‘এই বক্সটি হওয়াতে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুশি। আমাদের অভিভাবকদের কাছে না বলা কথা ছেলেমেয়েরা সরাসরি উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানতে পারবে।’ 


রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রেজাউল আযাদ জানান, এই বক্সটি ইভটিজারদের জন্য হুমকি। বাল্যবিবাহ, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ হবে। আমার মনে হয় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই ‘ইউএনও বক্স’ বসানো খুবই প্রয়োজন।


আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজিমুল হায়দার বলেন, ‘ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যার মূলে ছিল ইভটিজিং। এছাড়া ভালো রেজাল্টের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন হয়রানি ও প্রশ্নফাঁসের মতো অপরাধ, নিয়মবহির্ভূতভাবে ক্লাস প্রমোশন, সেকশন পরিচালনা, অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি, বাড়তি ফি আদায়, আর্থিক অনিয়ম, বুলিং, র্যাগিং এসব সমস্যা সংক্রান্ত তথ্যগুলো সঠিক সময়ে প্রশাসনের কাছে পৌঁছায় না। এছাড়া শিক্ষার্থীরা পরিবারের ভয়ে কিংবা শিক্ষকদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলতে না পারার কারণে অনেক সময় চুপ করে থাকে। এতে করে তাদের মনে বিরূপ প্রভাব পড়ে। এসব বিষয় মাথায় রেখে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’


তিনি আরও জানান, বক্সের চাবি ইউএনও অথবা তার কোনও প্রতিনিধির কাছে থাকবে। বক্সটি সপ্তাহের একটি দিন খোলা হবে। কোনও অভিযোগ থাকলে তা সংগ্রহ করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এসব বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান কিংবা অন্য কেউ যাতে অযথা হয়রানির শিকার না হয় সেদিকেও লক্ষ রাখা হবে বলেও জানিয়েছেন ইউএনও নাজিমুল হায়দার।  
এছাড়া পর্যায়ক্রমে এটি উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চালু হবে বলেও জানান তিনি।