ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
৪১৭

সেরে উঠেও অসুস্থ থাকছেন অনেকে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৫:২৬ ১০ জুলাই ২০২০  

 

১৩ মার্চ শুক্রবার, অস্ট্রিয়া থেকে নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে ফেরেন আমার ২৬ বছর বয়সী সহকর্মী অ্যালেক্স রিয়েশ (ছদ্মনাম), পরে পরীক্ষায়ও তিনি পজিটিভ আসেন। তাকে নিয়ে ডাক্তার বেশ ইতিবাচক ছিলেন। স্বাস্থ্যবান তরুণ, সুস্থ ব্যক্তির করোনাভাইরাস জয় করতে বেশি সময় লাগে না। দ্রুতই তারা সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু কয়েকদিন পর অ্যালেক্সের এতটাই খারাপ লাগতে শুরু করে যে জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তার ডাকতে হলো। এরপর তাকে এক সপ্তাহ হাসপাতালে কাটাতে হলো। আনুষ্ঠানিকভাবে রিয়েশের সেরে ওঠার তিন মাস হয়েছে। তার রক্তে ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডিও আছে। কিন্তু এখনো তাকে এমন সময় কাটাতে হচ্ছে, যখন তার অসুস্থ বোধ হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো ডাক্তার ব্যাখ্যা করতে পারছেন না কেন এমন হচ্ছে।

এছাড়া হালকা থেকে তীব্র গলা ব্যথা হচ্ছে এবং তার ফুসফুসও আক্রান্ত হয়েছে। চিকিৎসকরা তাকে ছেড়ে দেয়া পর্যন্ত এবং বাসায় ফেরা পর্যন্ত তার এই সমস্যাগুলো দেখা যায়নি। শ্বসনতন্ত্রের এক ডাক্তার তাকে হাঁপানির ইনহেলার ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়। কোর্টিসোন ডোজ তাকে কিছুটা সাহায্য করেছে বলে মন্তব্য করেছেন রিয়েশ। কিন্তু এটা বন্ধ করলে কাশি ও শ্বাসকষ্ট ফিরে আসে। এছাড়া আকস্মিক মাংসপেশিতেও ব্যথাও দেখা যেত। কখনো কখনো রিয়েশের শরীরের বাম পাশ অসাড় হয়ে যেত। আবার কখনো তার এতই ক্লান্ত বোধ হতো যে সে দ্রুত শুয়ে পড়ত।

রিয়েশ ১০ সপ্তাহ অসুস্থতার জন্য ছুটি কাটিয়েছে। এরপর রিয়েল এস্টেট এজেন্ট হিসেবে কাজে ফিরে আসে। কিন্তু যখন তখন তাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করতে হয়, কারণ সে অতিরিক্ত মাত্রায় অবসন্ন বোধ করে। বেশির ভাগ সময় সে স্বাভাবিক জীবনযাপনের চেষ্টা করলেও, তাকে এখন এসব যন্ত্রণা মেনে নিতে হচ্ছে।

এক আশ্চর্য রোগ

মহামারী শুরুর পর অর্ধ বছর পার হয়েছে। ডাক্তাররা প্রতিনিয়ত রিয়েশের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে দেখছেন, যারা কিনা আনুষ্ঠানিকভাবে সেরে উঠেছেন কিন্তু পুরোপুরি সুস্থতা ফিরে পাননি।

কিংস কলেজ লন্ডনের টিমোথি স্পেক্টর বলেন, কভিড-১৯ খুবই অনিশ্চয়তায় ভরা এক রোগ। বাত-রোগ নিয়ে কাজ করছি, তাই আমি অদ্ভুত রোগ দেখে অভ্যস্ত। কিন্তু আমি যা দেখেছি তার মাঝে কভিড-১৯ সবচেয়ে অদ্ভুত।

মোটামুটিভাবে প্রতি দশজনের একজন রোগী এক মাসের বেশি সময় ব্যাখ্যাহীন উপসর্গে ভুগতে থাকে, কেউ কেউ দুই মাসের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে থাকে। তবে সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ হচ্ছে অবসন্নতা, মাথাব্যথা, ঘ্রাণ হারানো, নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা, মাথা ঘোরা, ডায়রিয়া ও স্কিন র্যাশ। এমনকি কেউ কেউ তিন মাস পরও জ্বরে ভুগছে বলে জানান স্পেক্টর।

এছাড়া ফুসফুস, হূদযন্ত্রেও ক্ষতি এবং স্নায়ু দুর্বলতাও অনেককে উদ্বেগের মাঝে রেখেছে। অনেক ক্ষেত্রে এটি কার্ডিয়াক অ্যারিথমিয়া অথবা ডায়াবেটিসের দিকেও চালিত হতে পারে। কেউ কেউ আবার মারাত্মকভাবে মনোযোগ ও স্মৃতি ধরে রাখার সমস্যায় ভুগতে পারে। অল্পবয়সী মানুষও বাজেভাবে আক্রান্ত হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাচ্চাদেরও কঠিন সমস্যায় পড়তে দেখা যাচ্ছে।