ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
৩৪৫

স্কুলের বেতন নিয়ে দ্বিমুখী সংকট, সমাধানে সরকার কি ভাবছে?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:০৮ ১৩ জুলাই ২০২০  

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের এ সময়ে বাংলাদেশের বেশিরভাগ বেসরকারি স্কুলের অভিভাবক বিদ্যালয়ের বেতন অর্ধেকে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কুল পরিচালনার কথা বলে পুরো ফি আদায়ে অটল অবস্থানে রয়েছে।

আবার ছোটখাটো বেসরকারি স্কুলগুলোয় অনেক অভিভাবক ফি দিতে না পারায় শিক্ষক ও কর্মচারিরা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না। বেসরকারি স্কুলগুলোয় এমন দুই মুখী সংকট সৃষ্টি হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস মেলেনি।

করোনা মহামারির কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অধিকাংশ স্কুল এখন অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করলেও তারা বেতন নিচ্ছে স্বাভাবিক সময়ের মতোই। স্কুল না খোলা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বেতন ৫০% কমানোর দাবিতে কর্মসূচি পালন করছেন বেশ কয়েকটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অভিভাবক।

কারণ এর মধ্যে অনেক অভিভাবকের চাকরি চলে গেছে, কারও বেতন কমে গেছে আবার অনেক ব্যবসায়ী আছেন লোকসানের মধ্যে। এমন অবস্থায় স্কুলের অতিরিক্ত ফিস বহন করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ুয়া দুটি সন্তানের মা ফারহানা রহমান।

তিনি বলেন, এ স্কুল বন্ধ থাকার কারণে তাদের ইলেক্ট্রিসিটি বিলসহ অন্য খরচ তো হচ্ছে না। তাছাড়া প্রত্যেক বছর তারা বেতন বাড়ায়, প্রত্যেক বছর ডেভেলপমেন্ট ফি বাবদ টাকা রাখে। এখন সেই ফান্ড থেকে খরচ করুক। এত বছর তো ব্যবসা করেছে। কিন্তু ওরা আমাদের পরিস্থিতি বুঝতে চাইছে না।

বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অভিভাবকরা এরই মধ্যে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে আবার অনেকে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে ভবন ভাড়া, বিশেষ করে শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন চালিয়ে নেয়ার কারণে তাদের পক্ষে বেতন কমানো সম্ভব হচ্ছে না।

সব মিলিয়ে স্কুল পরিচালনা করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান একাডেমিয়া স্কুলের পরিচালক মোহাম্মদ কুতুবউদ্দিন। তিনি বলেন, স্কুলের অপারেটিং খরচ যেমন বিদ্যুৎ বিল, লিফট, এসি- এগুলোর খরচ ৫%, বাকি পুরোটাই ভবন ভাড়া, আর শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন। আমাদের আয় তো শিক্ষার্থীদের বেতন থেকেই আসে। তারা বেতন না দিলে এ মানুষগুলো চলবে কিভাবে?

এর মধ্যে অনেক অভিভাবক শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নেয়ায় আগের চাইতে আয় কমে গেছে। আবার দুই মাসের যে আপদকালীন ফান্ড ছিল সেটাও ফুরিয়ে যাওয়ার পথে। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের জন্য খরচ চালিয়ে নেয়া রীতিমতো অসম্ভব হয়ে পড়েছে, জানান কুতুবউদ্দিন।

তিনি বলেন, এলিমেন্টারি ক্লাসের প্রায় অর্ধেক বাচ্চাকে অভিভাবকরা পড়াতে চাইছেন না। আবার সিনিয়রদের ৩০% ড্রপ দিতে চাইছে। এককথায়, আমাদের আয় কমেছে। কিন্তু খরচ তো কমেনি। অভিভাবকরা তো আন্দোলন করতে পারছেন। কিন্তু এ শিক্ষকরা সেটাও পারছেন না।

আবার ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ছোটখাটো বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো বড় ধরনের সংকটের মধ্যে আছে। এসব স্কুলের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী স্বল্প আয়ের পরিবার থেকে আসায় বেশিরভাগই বেতন পরিশোধ করতে পারছে না। এ কারণে মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না শিক্ষক ও কর্মচারীরা। এমন অবস্থায় স্কুলগুলোকে টিকিয়ে রাখতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।

দিনাজপুরের জাগরণী আদর্শ শিক্ষালয়ের অধ্যক্ষ হাজেরা হাসান এমন পরিস্থিতিতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। আপদকালীন এ সময়ে স্কুলগুলো চালিয়ে নিতে প্রণোদনা অথবা সহজ শর্তে ঋণের সুযোগ চেয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলে তারা এরই মধ্যে আবেদন করেছেন।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা না দিলে শিক্ষকদের বেতন আমরা কিভাবে দিবো? দিনাজপুরের বেশিরভাগ স্কুল গত চার মাস ধরে কোনও বেতন দিতে পারছে না। আবার শিক্ষার্থীরা এত দরিদ্র পরিবারের যে আমরা তাদেরকেও চাপ দিতে পারছি না। এখন সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে আমরা দরকার হলে শিক্ষার্থীদের থেকে কোনও বেতনই নেব না।

আবার বেসরকারি স্কুলগুলো বিভিন্ন পাঠ্যক্রমে পরিচালিত হওয়ায় এ স্কুলগুলোর ওপর আইনগতভাবে সরকারের তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই। এমন অবস্থায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি সিদ্ধান্তে আসার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

তিনি বলেন, অভিভাবকরা জেনে বুঝে বাচ্চাদের দামী স্কুলে পাঠিয়েছেন। এখানে আইনগতভাবে সরকারের কিছু করার নেই। আমরা বলব, স্কুল কর্তৃপক্ষ যেন অভিভাবকদের কথা আমলে নেন।

এদিকে বেসরকারি স্কুলগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেয়ার সুযোগ নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তবে বেসরকারি ওই স্কুল বন্ধ হওয়ার কারণে যদি কোনও এলাকার শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সরকার ব্যবস্থা নেবে বলে জানান উপমন্ত্রী।

মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, প্রতিটি জেলাতেই সরকারি স্কুল আছে। তবুও অভিভাবকরা পয়সা খরচ করে কিন্ডারগার্টেনে বাচ্চাদের পড়ায়। এরপরও যদি একটা এলাকায় কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ হওয়ার কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

অভিভাবকদের অভিযোগ, বেতন পরিশোধ না করায় অনেক স্কুল রেজাল্ট প্রকাশ না করাসহ নতুন ক্লাসে নাম তুলবে না বলে চাপ দিয়ে আসছে।

এমন অবস্থায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, স্কুল ও অভিভাবক দুই পক্ষকেই কিছুটা ছাড় দিয়ে মানবিক সমাধানে আসতে হবে।