ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১১৯৭

হাওরের বুকে ছুটে চললো দামি গাড়ির সারি

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:৩৮ ২৭ জানুয়ারি ২০২০  

বিষয়টা অবাক করার মতোই। বিস্তীর্ণ হাওরের বুকে হুঁইসেল বাজিয়ে চলাচল শুরু করেছে চার চাকার যানবাহন। হাওরবাসীর কাছে একরকম স্বপ্ন যেন! কিন্তু স্বপ্ন আজ বাস্তরূপে ধরা দিয়েছে। 

 

যে হাওরাঞ্চলের লোকজনের একমাত্র ভরসা ছিল বৈঠা ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা। যোগাযোগ ও পরিবহন কাজে নৌকা ছাড়া অন্য কোনো যানবাহনের চিন্তাও করা যেত না।  বর্ষা মৌসুমের ছয় মাস নৌকাযোগে কোনরকমে যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থা চললেও শুকনো মৌসুমের ছয় মাস যোগাযোগ ও পরিবহন ক্ষেত্রে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ-ভোগান্তির শিকার হতে হতো এ হাওরবাসীকে।  অবস্থা এতটাই দুর্গম ছিল যে, সেখানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাকরি করতে অনীহা প্রকাশ করতো। তাদেরকে প্রণোদনা দিতে সরকার তাদের জন্য ‘হাওর এ্যালাউন্স’ প্রবর্তন করতে বাধ্য হয়।


ভৌগোলিক কারণে এ অবস্থার পরিবর্তনের চিন্তাও করতো না হাওরবাসী। কিন্তু সেই দুঃস্বপ্নই অবশেষে বাস্তব হয়ে ধরা দিলো কিশোরগঞ্জের হাওরবাসীর কাছে।

 

রোববার দুপুরে দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বৃহত্তর হাওরাঞ্চলের গেটওয়ে হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জের চামড়ার নৌ-বন্দর, বালিখলা ঘাট, বলদা ঘাট,শান্তিপুর ও বড়িবাড়ি ঘাটসহ পাঁচটি ঘাটের ধনু এবং বাউলাই নদীতে ফেরি সার্ভিস চালু হয়।
ওইদিন  সড়ক জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন করা হয়। 


অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ফিতা কেটে এ সার্ভিসের উদ্বোধন করেন সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক চুন্নু এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন কিশোরগঞ্জ- ৪ (ইটনা - মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সাংসদ রাষ্ট্রপতিপুত্র রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক এমপি। 


জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল ইসলাম সোপান, মিঠামইন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রাষ্ট্রপতির বোন আছিয়া আলম, করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।


জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার গণ্যমান্য লোকজনসহ বিভিন্ন স্তরের লোকজন অংশ নেন।

 

এ পাঁচটি ফেরিসার্ভিস চালুর পরপরই কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী সরাসরি সড়কপথে যানবাহনে যোগাযোগ ও পরিবহন সুবিধার আওতায় আসে। শুরু হয় চার চাকার মোটরযান চলাচল। অবশ্য এর আগে হাওরের বিভিন্ন স্থানে সেতু নির্মাণের পাশাপাশি ‘অলওয়েদার’ আবুরা সড়ক ও ‘ডুবো সড়কপথ’ নির্মাণ করা হয়।

 

সর্বশেষ এ পাঁচটি নদী ঘাটে উন্নতমানের ফেরি সার্ভিস চালু হাওর জনপদের বিপুল জনগোষ্ঠীর সামনে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করে। এখন থেকে বর্ষা ও শুকনো দুই মৌসুমেই এ হাওর জনপাদের অধিকাংশ মানুষ এ সুবিধাভোগ করতে পারবে।

 

এ ব্যাপারে কথা হলে জেলার হাওর উপজেলা মিঠামইনের ঘাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল বলেন, হাওরে এমন সড়কপথ হবে এবং এসব সড়কপথে একদিন চার চাকার মোটরযান চলবে তা কোনোদিন আমরা কল্পনা করার সুযোগ পাইনি। এখন থেকে আমরা শুকনো ও বর্ষা দুই মৌসুমেই যাতায়াত ও পরিবহন ক্ষেত্রে সড়কপথে মোটরযান সুবিধা পাবো।

 

তিনটি হাওর উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ - ৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সাংসদ রাষ্ট্রপতিপুত্র রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক বলেন, ‘আমার বাবা (রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ) দুর্গম হাওরাঞ্চল অধ্যুষিত এ আসনের মিঠামইন উপজেলার কামালপুরের সন্তান। তিনি এ অঞ্চলের কাদামাটি জলে বড় হয়েছেন। তিনি এ আসন থেকে সাত সাতবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
‘জীবনের দীর্ঘ সময় এ দুর্গম পথ পাড়ি দিয়েছেন। তাই আমার বাবা সব সময় এ পরিস্থিতি পরিবর্তনের এবং সুন্দর ও বসবাসযোগ্য হাওরাঞ্চলের স্বপ্ন দেখতেন। তিনিই হাওরবাসীর শত বছরের স্বপ্নপূরণের কাজ শুরু করেছেন। আমাকেও এ অঞ্চলের মানুষ তিন তিনবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছেন।’

 

‘বাবা রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্বপালন করার পর থেকে এ দায়িত্ব আমার ওপর বর্তায়। আজকে হাওরবাসীর স্বপ্ন পূরণের বড় কাজটি সম্পন্ন হওয়ায় আমরা যারপরনাই আনন্দিত।’

 

এদিকে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কিশোরগঞ্জের হাওরের তিনটি থানায় দেয়া হয়েছে পুলিশের পিকআপ। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে মিঠামইন, ইটনা ও অষ্টগ্রাম থানায় তিনটি ডাবল কেবিন পিকআপ দেয়া হয়।


তিনটি থানা পুলিশের ওসিদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে পিকআপের চাবি তুলে দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বড় ছেলে ও কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের এমপি রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক।


পরে মিঠামইন থানা পুলিশকে দেয়া একটি নতুন পিকআপন ভ্যানের চালকের আসনে উঠে বসেন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের এমপি রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক। পাশের সিটে উঠে বসে পুলিশ সুপার (এসপি) মাশরুকুর রহমান খালেদ। এসপিকে সঙ্গে নিয়ে থানার পাশে খালি মাঠে পিকআপ চালান এমপি তৌফিক। এ সময় তিন থানার পুলিশ সদস্যদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। আনন্দ-উল্লাস আর ফুলের পাপড়ি দিয়ে দুই অতিথিকে স্বাগত জানানো হয়।

 

হাওরের তিন থানায় গাড়ি বিতরণ উপলক্ষে মিঠামইন থানা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন এসপি মাশরুকুর রহমান খালেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল ইসলাম সোপান, অষ্টগ্রাম সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার এসএম আজিজুল হক, মিঠামইন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আছিয়া আলম, ইটনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসান, ইটনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাফিজা আক্তার, মিঠামইন থানা পুলিশের ওসি মো. জাকির রাব্বানী, অষ্টগ্রাম থানা পুলিশের ওসি মো. কামরুল হাসান মোল্লা, ইটনা থানা পুলিশের ওসি মুর্শেদ জামান ও মিঠামইন সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসান।


অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের এমপি রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক বলেন, কোনোদিন কল্পনাও করতে পারিনি মিঠামইন থানা পুলিশ গাড়ি পাবে। নিজে গাড়ি নিয়ে বাড়ি আসতে পারব। সবই স্বপ্নের মতো লাগছে। হাওরের অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

 

অনুষ্ঠানে এসপি মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, আজকের দিনটি আমার কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কোনোদিন ভাবিনি নিজের গাড়িতে করে মিঠামইন আসব। থানার সামনে নামার সময় বার বার অবাক হচ্ছিলাম। ভাবছিলাম স্বপ্ন দেখছি কিনা। আজকের মুহূর্ত ক্যামেরা বন্দি করে রাখলাম। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে গাড়িসহ থানার সামনে ছবি তুললাম।


প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলাকে সংযুক্ত করে প্রায় এক হাজার দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে সারা বছর চলাচল উপযোগী নতুন সড়ক নির্মাণ করা হয়। রোববার ফেরি সার্ভিস উদ্বোধনের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের সঙ্গে হাওরের তিন উপজেলায় সড়ক পথে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

বাংলাদেশ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর