ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৩৭৭

হাসপাতাল হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা পাননি: চিরতরে চলে গেলেন ঢাবি ছাত্র

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৭:৫৯ ৬ এপ্রিল ২০২০  

চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেও ‘সেবাকে ব্রত হিসেবে নেয়া’ কারও মন গলাতে পারেননি। করোনাভাইরাস আতঙ্কে সবাই ফিরিয়ে দিয়েছে হাসপাতালের ফটক থেকে। উপায় না পেয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরে গেছেন। সেখান থেকে একেবারে না ফেরার দেশেই পাড়ি জমালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী সুমন চাকমা।

 

করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে চিকিৎসাবঞ্চিত হয়ে সোমবার (৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুমন। তার বাবা সুপেন চাকমা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

 

খাগড়াছড়ি জেলার সদর উপজেলার আগালাশিং পাড়ার দাতকুপ্যা গ্রামের বাসিন্দা এই তরুণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। পাহাড়ি জীবনের নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন বড় স্বপ্ন বুকে নিয়ে।

 

কিন্তু আড়াই বছর পরই অর্থাৎ ২০১৮ সালের জুন মাসে তার ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। সমাজের নানা শ্রেণির বিত্তবানদের সহায়তায় চিকিৎসাও নিতে থাকেন তিনি। বেঁচে থাকার সাহস নিয়ে ভারতের বেশকিছু হাসপাতালেও চিকিৎসা নিতে যান তিনি। ক্যান্সারের কারণে ঘাড়ে ও পিঠে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হলে ভারতে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় তার। এরপর ওষুধের জন্য ভারতের চিকিৎসা সম্পর্কিত বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিতে দেখা যায় তাকে।

 

এর মধ্যে বাংলাদেশ-ভারতসহ বিশ্বজুড়ে থাবা বসায় করোনাভাইরাস। দেশেই চিকিৎসা পাওয়া আরও কঠিন পড়ে সুমনের। হাসপাতাল আর চিকিৎসকদের ফিরিয়ে দেয়ার দুঃখ প্রকাশ করে তিনি গত ২৬ মার্চ সকালে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘আমার করোনা হয়নি অথচ পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে করোনার জন্যই আমাকে মারা যেতে হবে।’

 

সুমনের সেই শঙ্কা বাস্তবে পরিণত হলো ১১ দিন পার না হতেই। চিকিৎসাবঞ্চিত হয়ে প্রাণ হারাতে হলো এই মেধাবী শিক্ষার্থীকে।

 

তার ঘনিষ্ঠ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আসিফ আলম ফেসবুকে সুমনকে নিয়ে দেয়া স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘কদিন আগেই শেষ কথা হয়েছিল সুমনের সাথে। অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছিল সুমন। ফুসফুসে টিউমার নিয়েও জীবন যুদ্ধে হাল ছাড়েনি। ঢাকা ও ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে আবার আইইআরে ফিরেছিল হাসিমাখা ওই মুখটা। আইইআরের প্রতিটা শিক্ষক-শিক্ষার্থী সুমনের এই লড়াইয়ের ইতিহাসের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাক্ষী।

 

করোনায় আর দশজনের মতো সুমনও উৎকণ্ঠায় ছিল। কিন্তু এই করোনা নিয়ে ওর সর্বশেষ আশঙ্কাই সত্যি হলো। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা পায়নি। গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ফুসফুসের ব্যাধি নিয়ে হার মানে সুমন। বিনা চিকিৎসায় এভাবে সুমন চলে যাবে, কে ভেবেছিল! কাউকে কিছু না জানিয়ে এমন নিশ্চুপ প্রস্থান, মেনে নিতেই কষ্ট হচ্ছে। ক্ষমা চাইবেন? কোন মুখে? '

 

সুমন চাকমার বাবা সুপেন চাকমা  বলেন, আজ সকাল ৮টা ৩৩ মিনিটে সুমন মৃত্যুবরণ করেছে।

 

তিনি বলেন, ২০১৮ সাল থেকে ক্যান্সারে অসুস্থ। বাংলাদেশ ও ভারতে কয়েকবার ডাক্তার দেখানো হয়েছিল। এ বছর থেকে  সুস্থ হয়ে ক্লাস করাও শুরু করেছিলেন। তৃতীয় বর্ষের মিড পরীক্ষা দেয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়। ছুটিতে বাড়ি চলে আসেন তিনি।

তারপর বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসা করানোর জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার পাঁচ-ছয়টি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তারা কেউ করোনার ভয়ে তার চিকিৎসা দেয়নি।

সুমন বলেন, ঢাকা থেকে ডাক্তার না দেখিয়েই বাড়ি চলে আসতে হলো। পরে চট্টগ্রামে এক হোমিও চিকিৎসকের কাছ থেকে ২৪ দিনের ওষুধ নিয়েছি। কয়েক দিনের ওষুধ নিয়ে আসছিলাম। পরে ওষুধ শেষ হওয়ার পর আর আনা যাচ্ছিল না। গাড়ি বন্ধ ছিল। ভালো চিকিৎসা ও ওষুধের অভাবে ছেলেটাকে হারিয়ে ফেললাম।