ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৭৭৯

ছাত্রী ধর্ষণ, ঢাবি’র বাসরুটের বাস্তবতা

#হোকপ্রতিবাদ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:৩৪ ৬ জানুয়ারি ২০২০  

ঢাবি ছাত্রীর ধর্ষণের ঘটনা শুনে বারে বারে স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছি। রাজধানীর এরকম একটা জায়গায় সন্ধ্যা সাতটার সময় এরকম ঘটনা ঘটতে পারে, আমার কল্পনাতেও ছিল না।  বহুবার রাতেও ঐ পথ দিয়ে একা হেঁটে গেছি, এখন ভাবলেও একটা অস্বস্তি কাজ করছে। চুপচাপ বসে ছিলাম বেশ কিছুক্ষণ। কিছু লিখতে ইচ্ছা হচ্ছে না, আর লিখে কি হবে? এই সমাজের গোড়ায় গোড়ায় পচন, হতাশ হই বারেবার।

তবে ফেসবুক বন্ধু বায়েজিদ খান রাজিবের একটা লেখা পড়লাম। শেয়ার না করে পারছি না। আমি সবসময় বলি, ঘটনার প্রতিবাদ নয়, বরং এরকম ঘটনা যেন না ঘটে সেটা আমাদের আগেই নিশ্চিত করতে হবে। লেখাটা পড়লেই বুঝবেন, এই ঘটনা হয়তো ঘটতোই না যদি আগেই ব্যবস্থা নেয়া যেত।

২০১৮ তে আমি নিজে গিয়েছিলাম ঢাবি প্রক্টর গোলাম রব্বানি স্যারের কাছে। বলেছিলাম  "স্যার, ঢাবির ক্ষণিকা বাসে যাতায়াতের জন্য কুর্মিটোলা স্টপেজটা স্থানীয় শিক্ষার্থীদের সবার বাসা থেকে দূরে হয়। ECB স্টপেজটা সবার জন্য কাছে হয়। প্লিজ, স্টপেজটা চেঞ্জ করে ইসিবি করেন, স্যার।"

স্টপেজের সিনিয়র-জুনিয়র সবার একই দাবি ছিল এবং আছে। এবং আমরা বহুবার এই বিষয়টি ক্ষণিকা কমিটিকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি।
আজ পর্যন্ত সেটার কোনো সুরাহা করেননি 'মাননীয়' প্রক্টর মহোদয় এবং ক্ষণিকা কমিটি। যার ফলাফল গতকালের ঘটনা।

(এ বিষয়টি নিয়ে সবিস্তারে  "অপরাজেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়" গ্রুপে লিখেছেন Ameer Faisal ভাই। ভাইয়ের স্ট্যাটাসটি নিচে কপি-পেস্ট করলাম)

কুর্মিটোলা স্টপেজ থেকে ক্ষনিকা বাসে যায় কারা?

শুনে অবাক হবেন, যারা কুর্মিটোলা স্টপেজ থেকে বাসে ওঠে তাদের কারো বাসাই কুর্মিটোলার আশেপাশে তো নয়-ই বরং তাদের প্রত্যেকের বাসা স্টপেজ থেকে ৩ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে। চিন্তা করুন প্রতিদিন প্রায় ২০০ জন ঢাবির শিক্ষার্থী ৩-৫ কিমি হেঁটে বা কোন পরিবহনের সাহায্যে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে আসে শুধুই বাস ধরার জন্য।

এখন জানার বিষয়, এই স্টপেজের যাত্রী কারা? মুলত ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বসবাসকারী জিয়া কলনী, মাটিকাটা, মানিকদী, বালুঘাট, সিএমেইচ, বাগানবাড়ি আবাসিক এলাকার ঢাবির শিক্ষার্থীরাই এই বাসের যাত্রী। এই এলাকাগুলোতে মোটামুটি ৩০০-৩৫০ জন ঢাবির শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ৩-৫ কিমি সংগ্রাম করে বাসে কোন একটি কোনায় নিজেদের ঠাঁই করে নেয়। সময় নষ্ট করে আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা। কিন্তু যেখানে এই এলাকার একটা সুন্দর স্থান আছে। নাম ECB চত্তর। যেখান থেকে সকল শিক্ষার্থীদের বাসাই মোটামুটি ৫/১০ মিনিট পায়ে হাটা পথ। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের এলাকার এই ৩০০-৩৫০ জন্য শিক্ষার্থীরা বাস ভিত্তিক অপরাজনীতির কারণে বঞ্চিত।

যেহেতু এটি সেনানিবাস এলাকা এখানে বাইরের বাস ঢোকা নিষিদ্ধ। তাই পুর্বে আমাদের স্টপেজ ছিল MES. কিন্তু ২০১২ সালে MES থেকে ECB চত্তর পর্যন্ত সংযোগকারী রাস্ট্রপতি জ্জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার হওয়ার পর থেকেই আমরা আশার আলো দেখতে পাই যে একদিন আমাদের স্টপেজ হবে ECB চত্ত্বর। তখন থেকেই আমরা চেষ্ট চালাই ইসিবি চত্ত্বরকে স্টপেজ করার। সে জন্য প্রক্টর অফিস  ও পরিবহন অফিসে আমাদের আবেদন জানাতে থাকি। তাদের থেকে গ্রিন সিগনাল পাই। সবাই রাজি। কিন্তু রাজি না থাকে না ক্ষণিকা বাসের প্রেসিডেন্ট আর সেক্রেটারি। কারণ তারাই বাসের সর্বেসর্বা। আমরা দিনের আলোয় আবেদন পত্র জমা দিয়ে আসি, আর উনারা রাতের আঁধারে পরিবহন অফিসে গিয়ে বলে আসেন, "কোন ভাবেই ECB চত্ত্বর স্টপেজ করা যেন না হয়।"

যেহেতু বাসের নেতারা রাজি নন তাই পরিবহন অফিসও তাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমাদের এতগুলো মানুষের কষ্ট বুঝতে পেরেও তাদের অপারগতা স্বীকার করে। এটার কারণ শুধুই বাসের মধ্যে বিদ্যমান অপরাজনীতি।

যাই হোক, তবুও এই এলাকার শিক্ষার্থীরা MES স্টপেজ নিয়েই ভাল ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে আমাদের স্টপেজের শিক্ষার্থীকে বাসে মারা হয় এবং সেই সমস্যা শেষ পর্যন্ত প্রক্টর স্যার পর্যন্ত গিয়ে গড়ায়। সেই সুযোগে তখনকার ক্ষণিকা বাসের প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি আমাদের স্টপেজ সরিয়ে নিয়ে কুর্মিটোলা জেনারেলের সামনে সরিয়ে ফেলে। অর্থাৎ আরো দুরে সরিয়ে ফেলে। তবুও আমরা আমাদের সমস্যা নিয়ে প্রক্টর গোলাম রাব্বানী স্যারের সাথে দেখা করি। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, এটা কোন সমস্যাই নয়। তোমরা প্রেসিডেন্ট আর সেক্রেটারিকে নিয়ে অফিসে দেখা করো। কিন্তু অনেক অনুরোধ করার পরেও উনাদের স্যারের রুমে নিয়ে যাওয়া যায় নাই। তাদের নির্লিপ্ততার জন্য সেবারও আমরা ব্যর্থ হই।

কুর্মিটোলা হসপিটাল হওয়ায় সেখানে বিভিন্ন ধরনের মানুষের আনাগোনা, আর পাশেই ক্যান্টনমেন্ট এলাকা হওয়ায় জায়গায়টা অনেক নীরব। যার ফলস্রুতিতে আজকের এই ঘটনা। সাথে আমি আরো যুক্ত করতে চাই, ২০১৮ সাথেই ঠিক এখানেই আমাদের বিবিএ ফ্যাকাল্টির এক ছোট বোনের বাবা রোড একসিডেন্টে মারা যায়।

আজকের এই ঘটনার পিছনে, শুধু ধর্ষকই দায়ী নয়। দায়ী অনেক দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তিও। আমাদের হাজারটা আবেদন তারা হাজারভাবে তারা বাতিল করে দিয়েছে। তাই আমাদের বোনেরা আজকে এমন একটা দুঃখজনক ঘটনার সম্মুখীন হল।

আমরা জানি ক্ষণিকা বাসের ব্যর্থ প্রেসিডেন্ট কিংবা সেক্রেটারির মাধ্যমে আমাদের এই স্টপেজ সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।। তাই আমি ডাকসু পরিবহন সম্পাদক শামস ই নোমান ( Shams E Noman ) ভাইয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আমরা চাই যেভাবেই হোক আমাদের মানিকদি, মাটিকাটা, বালুঘাট, জিয়া কলনীর শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষনিকা বাস ECB চত্ত্বর পর্যন্ত আসে। যদি সেটা সম্ভব না হয় তবে যেন ECB চত্ত্বর থেকে আমাদের শিক্ষার্থী পরিবহন করার জন্য নতুন কোন বাসের রুট চালু হয়।

আমাদের বোনদের নিরাপত্তা চাই।
আমাদের বোনের ধর্ষকের বিচার চাই। 


#হোকপ্রতিবাদ

 

(সাংবাদিক মারিয়া সালাম’র ফেসবুক পেজ থেকে)