ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ৭ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৮৯৮

মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা রাস্তায়

২ বছর ইন্টার্নশিপের ১ বছর উপজেলায়

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:৩৪ ৩১ আগস্ট ২০১৯  

মেডিকেল শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ইন্টার্নশিপের মেয়াদ ২ বছর করার প্রস্তাব করেছে সরকার। এতে অসন্তোষ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছেন।

গেল ২৭ অগাস্ট স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ‘মেডিকেল কলেজ / ডেন্টাল কলেজ / প্রতিষ্ঠান - এর এমবিবিএস / বিডিএস কোর্সের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশীপ প্রশিক্ষণ ও ইন্টার্নশীপ ভাতা প্রদান সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১৯’এর খসড়া প্রকাশ করা হয়।

বর্তমানে পাঁচ বছরের এমবিবিএস কোর্সের পর মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের এক বছর নিজ প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করতে হয়, নতুন নীতিমালার যা দুই বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

দুই বছরের মধ্যে প্রথম বছরটি শিক্ষার্থীদের নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করতে হবে। আর দ্বিতীয় বছর কোনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাদেরকে যুক্ত করা হবে।  

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে -“প্রথম বছরের প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান দ্বিতীয় বছর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনুশীলন করিবে” । 

আসছে ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওই খসড়ার ওপর মতামত চাওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে।

সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল (মিটফোর্ড) কলেজের শিক্ষার্থীরা শনিবার ক্যাম্পাসে মিছিল করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেকের মন্তব্যে ক্ষোভের প্রকাশ ঘটছে।

সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থীরা বলছেন , তারা সরকারের এই সিদ্ধান্ত কখনই মেনে নেবেন না।

তাদের বক্তব্য হচ্ছে, নিয়মিত একজন শিক্ষার্থীর চিকিৎসক হতেই সাড়ে ছয় বছর লেগে যায়। এর সঙ্গে অতিরিক্ত এক বছর যুক্ত হলে লাগবে সাড়ে সাত বছর। ভারতে এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও ওই সময়ের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী পোস্ট গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করতে পারে, তাহলে ভোগান্তি পোহাতে হবে। এতে চাকরিতে ঢোকাই বিলম্বিত হবে।

তারা বলছেন, সরকার প্রয়োজনে আরও বেশি চিকিৎসক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োগ দিতে পারে। কিন্তু আমাদের সেখানে কাজটা কী? সেখানে আমরা কিভাবে শিখব? কে আমাদের তত্ত্বাবধান করবে? মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশে অ্যাসিসটেন্ট রেজিস্ট্রার, রেজিস্ট্রার, অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এবং শীর্ষ প্রফেসরদের কাছ থেকে শেখার সুযোগ আছে। কিন্তু উপজেলায় (স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে) সে ধরনের পরিবেশ নেই।

এ প্রসঙ্গে সরকার সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান বলেন, পরিস্থিতি বিচার-বিবেচনা না করে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত নয়। 

আর বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ জানিয়েছেন, সরকারি প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে এখনও তারা অবগত নন। মেডিকেলে পাঠ্যক্রম অর্থবা ইন্টার্নশিপ সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত বিএমডিসিই নেয়।


 
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ে কয়েকটি সভা হয়েছে এবং আমাদের প্রতিনিধিরাও সেসব সভায় ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে আমরা সভাগুলোতে মতামতও দিয়েছি। কিন্তু তারা প্রজ্ঞাপন জারি করবে, এমন কোনো ধারণা আমাদের ছিল না। যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ও আমাদের ভেবে দেখতে হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি (২ বছরের ইন্টার্নশিপ) বাস্তবসম্মত হবে, কি হবে না এবং আমরা যদি তাদেরকে উপজেলায় পাঠাই তাহলে তারা কোথায় থাকবে, কারা তাদেরকে শেখাবে?


দুই বছরের ইন্টর্নশিপ কতটা যৌক্তিক হবে, তা যাচাইয়ে বিএমডিসির পক্ষ থেকে একটি কমিটিরও করা হয়েছিল বলে জানান অধ্যাপক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ।

চিকিৎসকদের নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি অ্যান্ট রাইটস’ এর মহাসচিব শেখ আবদুল্লাহ আল মামুনও সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, এতে চিকিৎসক সমাজ এবং জনগণ- উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ পুরো মেডিকেল শিক্ষা কার্যক্রমের একটি অংশ হচ্ছে ইন্টার্নশিপ। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ। আপনি মেডিকেল থেকে পাসের পরও ইন্টার্নশিপ শেষ না করা পর্যন্ত পুরোপুরি চিকিৎসক হতে পারবেন না। এবং এই প্রশিক্ষণটি  অবশ্যই সুপারভাইজরদের অধীনে সম্পন্ন করতে হয়। সেই সুপারভাইজর আপনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিভাবে পাবেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর পরিবেশও তরুণ চিকিৎসকদের থাকার এবং রোগী দেখার মত উপযুক্ত নয় বলেও মনে করেন তিনি।

শেখ আবদুল্লাহ আরও বলেন, যে এখনও মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপসহ শিক্ষা জীবন শেষ করতে ছয় বছর লেগে যায়, সেখানে সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে শুধু তাদের (শিক্ষার্থী) শিক্ষাজীবন দীর্ঘই হবে এবং চিকিৎসকদের মধ্যে হতাশা দেখা দেবে।

সরকারি খসড়া নীতিমালার বিরুদ্ধে শনিবার সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা একে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে বলেন, এটি বাস্তবায়িত হলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা ডাক্তারি পেশায় আসতে নিরুৎসাহী হবেন। এতে দেশ বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে।  বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্লাস থেকে নেমে এসে ‘দুই বছর ইন্টার্নশিপ মানি না, মানবো না’ বলে স্লোগান দেন। 

তাদের হাতে ‘দুই বছর ইন্টার্নশিপ মানি না, মানবো না’,  ‘দুই বছর ইন্টার্নশিপ প্রস্তাবনা বাতিল চাই’, ‘উপজেলায় আমাদের নিরাপত্তা দেবে কে’,  মেধাবীদের চিকিৎসা খাতে নিরূৎসাহিত করবেন না’ লেখা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

পরে অধ্যক্ষ বরাবর স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হলে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার পরিকল্পনার কথাও জানান তারা।

বর্তমানে মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের পাঁচ বছরের এমবিবিএস কোর্স সম্পন্ন করার পর বিএমডিসি থেকে সাময়িক লাইসেন্স নিয়ে একবছরের ইন্টার্নশিপ করতে হয়। নিজ নিজ মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ শেষ করার পর সেই লাইসেন্স স্থায়ী হয়।