ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
৯৮৮

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে তুঘলকি কাণ্ড

৫৫০০ টাকার বই কিনেছে ৮৫৫০০ টাকায়!

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৩:৫৪ ৩১ আগস্ট ২০১৯  

গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজের জন্য বই কিনেছে সরকার।  সার্জারির ছাত্র ও শিক্ষানবিশদের টেক্সট বই  ‘প্রিন্সিপাল অ্যান্ড প্র্যাকটিস অব সার্জারি’বইয়ের ১০টি কপি কিনেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ বইয়ের বাজারমূল্য সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। আর স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রতিটি বই কিনেছে ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা করে। সে হিসাবে ১০ কপি বইয়ের মোট দাম পরেশোধ করা হয়েছে ৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ, বাজার দামের তুলনায় ৮ লাখ টাকা বেশি খরচ করে এ বই কিনলো স্বাস্থ্য অধিদফতর।
স্বাস্থ্য বিভাগের এমন কাণ্ডে অবাক খোদ ওই মন্ত্রণালয়ের লোকজন। এ নিয়ে চলছে ব্যাপক তোলপাড়। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে নানা প্রতিক্রিয়া। 

দুটি টেন্ডারে স্বাস্থ্য অধিদফতর কিনেছে ৪৭৯টি আইটেমের ৭ হাজার ৯৫০টি বই। আর এসব বইয়ের মূল্য বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৬ কোটি ৮৯ লাখ ৩৪ হাজার ২৪৩ টাকা। 
এ বছরের ১৯ জুন টেন্ডার দুটির ওয়ার্ক অর্ডার পায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হাক্কানী পাবলিশার্স। বাজার থেকে বইগুলো কিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে সরবরাহ করেছে তারাই।

রাজধানীর মুগদা মেডিক্যাল কলেজের জন্য ৩১৭টি আইটেমের ২৪৫৪টি বই ২ কোটি ৫০ লাখ ৯১ হাজার ২৮৫ টাকায় কেনা হয়েছে। এছাড়া, সারাদেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের জন্য ১৬২টি আইটেমের ৫৪৯৬টি বই কেনা হয়েছে ৪ কোটি ৩৮ লাখ ৪২ হাজার ৯৫৮ টাকায়।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র বলছে, এ বছরের ২৬ ও ২৭ মে বই কেনার জন্য আলাদা দুটি টেন্ডার আহ্বান করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। প্রথম টেন্ডারের প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয় পাঁচ কোটি টাকা ও দ্বিতীয়টির প্রাক্কলিত মূল্য ছিল ২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। ৪ কোটি ৩৮ লাখ ৪২ হাজার ৯৫৮ টাকায় প্রথম টেন্ডারের ওয়ার্ক অর্ডার পায় হাক্কানী পাবলিশার্স। আর ২ কোটি ৫০ লাখ ৯১ হাজার ২৮৫ টাকায় দ্বিতীয় টেন্ডারের ওয়ার্ক অর্ডারও পায় একই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।

 
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষে এসব বই কেনার দায়িত্বে ছিলেন উপপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) ডা. শেখ মো. মনজুর রহমান, শিক্ষা চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম ও ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন।  

৪৭৯ টি আইটেমের বইয়ের মধ্যে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে ৩০টি বইয়ের বাজার দাম যাচাই করা হয়। বইয়ের বাজার দর যাচাই করে দেখা গেছে, এগুলো দ্বিগুণ, তিনগুণ কোনও ক্ষেত্রে ১৫ গুণ বেশি দামে কেনা হয়েছে।

 

সাতটি মেডিক্যাল কলেজের জন্য গ্রেজ অ্যানাটমি নামে ৯৫টি বই কেনা হয়েছে। বাজারে এই বইয়ের প্রতিটি কপির দাম ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা। কিন্তু একেকটি বই কেনার বিল করা হয়েছে ৪৩ হাজার টাকা করে। ৯৫টি বই কিনতে খরচ হয়েছে ৪০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ বাজার মূল্যের চেয়ে অন্তত সাতগুণ বেশি দামে বইটি কিনেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

বার্ন অ্যান্ড লেভি ফিজিওলোজি বইটির ৬৫টি কপি কেনা হয়েছে দেশের পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজের জন্য। বাজারে বইটির দাম চার হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা। কিন্তু, মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিটি বই কেনা হয়েছে ২০ হাজার ৪৮০ টাকায়। 

মুগদা মেডিক্যালের জন্য কেনা হয়েছে ‘অর্থোডোনটিক মেটারিয়াল সায়েন্টেফিক অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল অ্যাসপেক্টস’ নামে তিনটি বই। বাজারে বইটির  দাম চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা।  আর কেনা হয়েছে ১৪ হাজার ১৭৫ টাকা দর দেখিয়ে।

 

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্র্যাকটিক্যাল অপটামোলজি : ম্যানুয়াল ফর বিগেনার্স বইটি কেনা হয়েছে পাঁচ কপি। প্রতিটি বইয়ের বাজার মূল্য ২৯ হাজার টাকা। কিন্তু, প্রতিটি বই কেনা হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৫০ টাকা করে।

‘অর্থোফিক্স এক্সটার্নাল ফিক্সেশন ইন ট্রমা অ্যান্ড অর্থোপেডিকস’ নামের বইটির ১০টি কপি কেনা হয়েছে মুগদা মেডিক্যালের জন্য। এ বইয়ের বাজারদর প্রতিটি ১৪ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা। কিন্তু প্রতিটি বই কেনা হয়েছে ৩৩ হাজার ৭৫ টাকা দর দেখিয়ে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রাক্কলিত মূল্য নির্ধারণের আগে সব বইয়ের দাম নিজেই যাচাই-বাছাই করেছেন বলে জানান ডা. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন। তিনি চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। ডা. মামুন বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করেই মূল্য নির্ধারণ করেছি।’

 

বাজার মূল্য ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রাক্কলিত মূল্যের মধ্যে ব্যবধান অনেক বেশি – এটা মানতেই নারাজ স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম। এমনটা হতেই পারে না দাবি তিনি বলেন, ‘আমরা কেনাকাটার প্রতিটি নিয়ম মেনেই বইগুলো কিনেছি। তবে কোনও বইয়ের দামে যদি ব্যবধান থেকে থাকে, তাহলে আমরা যাচাই করে দেখবো।’