জঙ্গীমুক্ত বাংলাদেশ, দরকার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস
মনিরুল ইসলাম
লাইফ টিভি 24
প্রকাশিত: ২৩:১৩ ৩০ জুন ২০১৯
১. সাত ভাইবোনের মধ্যে বড় ছলিম উদ্দিনের বাবা হঠাৎ করেই মারা যায়। সংসারের বড় ছেলে ২২ বছরের ছলিম চোখে অন্ধকার দেখে। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেলেও ওর ছোট পরপর দুই বোনকে বিয়ে দিতে হবে। যেটুকু জমিজমা ছিল তার আয়ে তিন মাস ও চলে না। পাড়া প্রতিবেশীর কাছে ধার দেনা করে কিছুদিন সামাল দেয়। পাশের গ্রামের রতনের পরামর্শে ভ্যান গাড়ি চালাতে শুরু করে।
একদিন এক অপরিচিত যাত্রী উপযাচক হয়েই ছলিমের পরিবারের নানা কথা জানতে চায়। তার কষ্টে সমবেদনা জানায়, সান্ত্বনা দেয়। লোকটিকে ভাল লেগে যায়। কিছুদিন পর আবার ও দেখা হয়ে যায়। সেদিন ও ছলিমের ভ্যানে লোকটি একাই ছিল। তার অনুরোধে ছলিম নির্জন রাস্তায় একটা গাছের ছায়ায় থামে। রাস্তার পাশে বসে দুজন অনেক কথা বলে, মূলতঃ লোকটিই বলে। ছলিম মন্ত্রমুগ্ধের মত শোনে। নিয়মিত নামাজ রোজার প্রয়োজনীয়তা ও ইহকাল-পরকাল নিয়ে অনেক আলোচনা করে। আবার দেখা করার কথা বলে লোকটি বিদায় নেয়।
ছলিম নিয়মিত নামাজ রোজা শুরু করে। লোকটি আরো কয়েকবার দেখা করে। একদিন আরো একজনকে এনে পরিচয় করিয়ে দেয়। সেদিন জিহাদ নিয়েও আলোচনা হয়। ছলিম বুঝতে পারে যে হিন্দু রতনের সাথে বন্ধুত্বতাটা আর টিকিয়ে রাখা যাবে না। রতনরা কাফের, ইসলামের শত্রু। ছলিম লজ্জিত হয় কেন সে এনজিও এর টাকা নিয়ে ভ্যান কিনেছে, এনজিও ইসলামের শত্রু।
ঐ লোকটি আর আসে না। ছলিম নিজেই পাশের গ্রামে একটা বাড়িতে গিয়ে গোপন মিটিং এ যোগ দেয়। আরো কয়েকজন মানুষের সাথে দেখা হয়। সবাই কত্ত ভালো, জিহাদ নিয়ে আলোচনা হয়। ছলিম নিজেও দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। ১৭ আগষ্ট বোমা হামলায় ভূমিকা রাখে। গ্রেফতার হয়।
১০ বছর জেলের সেলে বুঝতে পারে সে কত বড় ভুল করেছিল। সাজা শেষে ফিরে দেখে কিছুই আর আগের মত নেই, সব বদলে গেছে। ভাইবোনেরা বাড়িঘর বিক্রি করে গ্রাম ছেড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, দুই বোন গার্মেন্টসে চাকুরী করে, বিয়ে করেছে। ভাইয়েরা যে যার মতো শহরের বস্তিতে উঠেছে, দিন মজুরী করে। যোগাযোগ করার চেষ্টা করে, সবাই তাকে ফিরিয়ে দেয়, তার সাথে সম্পর্ক রাখবে না। এলাকার মানুষ ও ছলিমের সাথে দূরত্ব রেখে চলে।
অচেনা নম্বর থেকে ফোন করে তাকে আবার ও সংগঠনের কাজে যোগ দিতে বলে। আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রতিশ্রুতি দেয়, নতুন স্বপ্ন দেখায়। দিনমজুর ছলিমের আধাপেটা খেয়ে দিন কাটে কিন্তু সে আর ঐ পথে যেতে রাজী না। প্রকৃত ধর্ম পালন আর কথিত জিহাদ যে এক নয় অনেক মূল্য দিয়ে ছলিম বুঝতে পেরেছ।
২. ২০ বছরের টগবগে তরুন কলিম উদ্দিন। পড়াশুনা ভালো লাগে না, দেশের জন্য কিছু একটা করতে চায়। পাশের গ্রামের বড় ভাই তাকে কয়েকদিন কলিমকে সহজ পথ দেখায়। কলিম বড় ভাইয়ের মিষ্টি কথায় বিশ্বাস করে। তারপর কয়েকদিন কলিমের পরামর্শ অনুসরন করে। আরো কয়েকজনের সাথে পরিচয় হয়, সেও কলিমই করিয়ে দেয়। এরপর, কিছুদিন মোহাবিষ্ট থাকে কলিম, বেহেশত খুব কাছে দেখতে পায়। ২০০৫ সনের ১৭ আগষ্ট দেশব্যাপী বোমা হামলার একটিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। গ্রেফতার হয়, সাজাও হয়। জীবন থেকে ৮ বছর হারিয়ে যায়। প্রিয় মা মারা যায়, দেখতে পায় নি। ভুল মানুষের কুপরামর্শে বিশ্বাস করে তার মূল্য দিতে হয়েছে।
সাজা শেষে মুক্তি পায়। গ্রামে ফিরে একটা বড় ধাক্কা খায়। নিজের ভাই বোনই তাকে গ্রহন করবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। একসময়ের ঘনিষ্ঠ সহপাঠিরা ও তাকে এড়িয়ে চলে। এলাকার মানুষ কেমন সন্দেহের চোখে দেখে। গভীর রাতে একা কাঁদে। দরিদ্র বাবার সম্পত্তি খুব একটা ছিল না, ভাগে পেয়েছে নিতান্তই সামান্য। দিন চলে না, বিয়ে শাদী ও করতে পারছে না। ইতোমধ্যে, অপরিচিত এক লোক কয়েকবার ফোনে যোগাযোগ করছে। দলে যোগ দিলে ইহকালে অর্থের সমস্যা হবে না, পরকালে ও লাভ হবে বলে বোঝানোর চেষ্টা করছে।
৩. আবদুল পিতৃহারা মায়ের দুই ছেলের মধ্যে বড়। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে লেখাপড়া করানোর চেষ্টা করেছে। লেখাপড়ায় খুব ভালো ছিল আবদুল। এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করেই কলেজে ভর্তি হয়। ছেলে পড়া শেষ করে চাকুরী করবে, সংসারের দায়িত্ব নেবে। ছোট ছেলেটা ইতোমধ্যে নাইনে উঠেছে। সংসারে আর্থিক কষ্ট থাকলে ও তিনজনের সংসার ভালোই চলছিল। কলেজে কি কি হচ্ছে সবই গল্প করতো সে। ছোট ভাইকে ও খুব ভালোবাসতো, পড়া দেখিয়ে দিত।
ছেলেটি কেমন চুপচাপ হয়ে যায়, আগের মত গল্প করে না। কলেজে যাওয়ার পর একদিন আর ফিরে আসে না। আত্মীয়-স্বজনের বাসায় যায় নি, সহপাঠীদের থেকে জানতে পারে আবদুল একমাস হলো কলেজে যায় না। মা পাগলের মত এখানে সেখানে খোঁজ করেও ছেলের দেখা পায় না। নীরবে মা চোখের জল ফেলে।
পাশের বাড়ির মকবুল সন্ধ্যার পর দৌড়ে এসে খবর দেয় যে আবদুলকে টিভিতে দেখেছে। পূজা মন্ডপে হামলা করতে গিয়ে বোমাসহ গ্রেফতার হয়েছে। মায়ের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে, ছুটে যায়। ঘন্টাখানেক পরে খবর শুরু হলে নিজের চোখে ছেলেকে দেখে। প্রতিজ্ঞা করে আর কোনদিন ছেলের খোঁজ করবে না।
বাড়িতে পুলিশ আসে, তন্ন তন্ন করে কি যেন খোঁজে। নানা কথা জিজ্ঞাসা করে। মা প্রতিজ্ঞা রাখতে পারে না, পরবর্তী শুনানীর দিন কোর্টে যায়। মায়ের হাত ধরে আবদুল কাঁদে, বাঁচতে চায়। সংসার চালাতে কষ্ট হয়, মামলার খরচ কিভাবে চালাবে।
একদিন কেউ একজন যোগাযোগ করে, সংগঠনের পক্ষ থেকে মামলা ও পরিবারের দায়িত্ব নিতে চায়। যাদের কুপরামর্শে ছেলে ভুল পথে পা দিয়েছে তাদের সাথে কোনভাবেই মা সম্পর্ক রাখবে না। মায়ের ভয় ছোট ছেলেকে ও যদি তারা ফুঁসলিয়ে নেয়। তারা হাল ছাড়ছে না, মাঝে মধ্যেই গোপনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে যাচ্ছ। ছেলে এখন কলেজে, পড়ার খরচ বেড়েছে।
নামগুলো প্রকৃত না হলেও ঘটনাগুলো কিন্তু সত্যি। জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়া তিনজন মানুষ ও তাদের পরিবারের গল্প।
CTTC এর পক্ষ থেকে নানারকম যাচাই বাছাই শেষে আজ সাত (৭) টি পরিবারকে তাদের প্রয়োজন বিবেচনা করে আজ পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহন করলাম। তিনটি ঘটনা বর্ননা করা হলেও অন্যান্যদের ঘটনাগুলোও কমবেশী একই রকম। অর্থ প্রদানের পাশাপাশি তাদের বেশ কিছু বই যার অর্থ অনুধাবন করতে পারলে তাদের পুরোনো পথে অর্থাৎ নতুন করে জঙ্গীবাদে জড়িয়ে সম্ভাবনা কমে আসবে। সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে (Re-integration) আনতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
Counterterrorism Literature অনুযায়ী জঙ্গীবাদ দমনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বটে। কাউন্টার টেরোরিজমের একজন ছাত্র হিসেবে আমি অনেকদিন থেকেই বলে আসছি যে, Counterterrorism একটি জটিল ও দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। Comprehensive Approach নিয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস অব্যাহত রাখতে পারলেই জঙ্গীমুক্ত বাংলাদেশ সম্ভব হবে।
# মনিরুল ইসলাম : ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-এর অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান
- যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিচারপতি সোমা সাইদ
- শিগগিরই অবসর নেবো, সেদিন কাঁদবোও: রোনালদো
- যাকে ভয় পেতেন, তার নায়িকা মৌ খান
- অ্যাপল–স্যামসাং নয়, সেরা ক্যামেরা কোন ফোনগুলোর
- প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ল
- এইচএসসি পাসে ২০০ এসআর নেবে আবুল খায়ের গ্রুপ
- সেন্টমার্টিন ভ্রমণের নতুন ওয়েবসাইট
- ইতিহাসের প্রথম নির্বাচন: কবে ও কোথায়?
- ওমর সানীকে ‘স্যরি’ বললেন মৌসুমী
- নতুন দলের হয়ে সেরাটা দিতে মুখিয়ে সাকিব
- ব্যালটে মামদানির নাম দুইবার, জেতানোর চক্রান্ত বলছেন মাস্ক
- মেট্রোরেলে চাকরি পাচ্ছেন নিহত কালামের স্ত্রী
- বিএনপিতে যোগ দিলেন মুগ্ধের ভাই স্নিগ্ধ
- নাসীরুদ্দীনের বিরুদ্ধে যুবদলের নয়নের মামলা, তদন্তে ডিবি
- এক চামচ অলিভ অয়েলেই সমাধান
- বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং কোচের দায়িত্বে আশরাফুল
- ক্ষমা চাইলেন শাহরুখ
- বিএনপি জিতলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন?
- যারা পেলেন বিএনপির মনোনয়ন [তালিকাসহ]
- বাজার কাঁপাতে আসছে রয়্যাল এনফিল্ডের ই-বাইক
- সাগরে নতুন লঘুচাপ, পাঁচ দিন বৃষ্টির আভাস
- নির্বাচনে জিতলে ‘দুই বাংলা’ এক করার ঘোষণা বিজেপি নেতার
- শাপলা কলি প্রতীকে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে এনসিপি
- নাক ডাকা কমানোর সহজ কিছু টিপস
- শাকিব খান চমকের বড় উদাহরণ: চঞ্চল চৌধুরী
- প্রোটিয়াদের হৃদয় ভেঙে প্রথম বিশ্বকাপ জিতল ভারতের মেয়েরা
- বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গেয়ে ভারতে তোপের মুখে কংগ্রেস নেতা
- আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না কোটি মানুষ:রয়টার্সকে হাসিনা
- ঐকমত্য কমিশন প্রতারণা করেছে: ফখরুল
- ওজন কমবে ভাতের মাড়ে
- বিএনপি জিতলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন?
- নাসীরুদ্দীনের বিরুদ্ধে যুবদলের নয়নের মামলা, তদন্তে ডিবি
- ইতিহাসের প্রথম নির্বাচন: কবে ও কোথায়?
- সাগরে নতুন লঘুচাপ, পাঁচ দিন বৃষ্টির আভাস
- শাপলা কলি প্রতীকে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে এনসিপি
- বাজার কাঁপাতে আসছে রয়্যাল এনফিল্ডের ই-বাইক
- নাক ডাকা কমানোর সহজ কিছু টিপস
- যারা পেলেন বিএনপির মনোনয়ন [তালিকাসহ]
- এক চামচ অলিভ অয়েলেই সমাধান
- ওমর সানীকে ‘স্যরি’ বললেন মৌসুমী
- শাকিব খান চমকের বড় উদাহরণ: চঞ্চল চৌধুরী
- ক্ষমা চাইলেন শাহরুখ
- নির্বাচনে জিতলে ‘দুই বাংলা’ এক করার ঘোষণা বিজেপি নেতার
- ব্যালটে মামদানির নাম দুইবার, জেতানোর চক্রান্ত বলছেন মাস্ক
- বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং কোচের দায়িত্বে আশরাফুল
- নতুন দলের হয়ে সেরাটা দিতে মুখিয়ে সাকিব
- প্রোটিয়াদের হৃদয় ভেঙে প্রথম বিশ্বকাপ জিতল ভারতের মেয়েরা
- বিএনপিতে যোগ দিলেন মুগ্ধের ভাই স্নিগ্ধ
- মেট্রোরেলে চাকরি পাচ্ছেন নিহত কালামের স্ত্রী
- শিগগিরই অবসর নেবো, সেদিন কাঁদবোও: রোনালদো












