ঢাকা, ২৫ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৫ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২
good-food

তীব্র তাপ ও বন্যার ঝুঁকিতে দক্ষিণ এশিয়া, শীর্ষে বাংলাদেশ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:৫৫ ২৪ নভেম্বর ২০২৫  

ঘন জনসংখ্যা, উচ্চ তাপমাত্রা এবং ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল। এর মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ চরম তাপের ঝুঁকিতে এবং প্রায় এক চতুর্থাংশ মানুষ তীব্র বন্যার ঝুঁকিতে পড়বে।

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এই আশঙ্কার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর জলবায়ু সহনশীলতা বা অভিযোজন প্রক্রিয়া মূলত বেসরকারি খাতের নেতৃত্বে পরিচালিত হবে।

বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস থেকে ‘ঝুঁকি থেকে স্থিতিস্থাপকতা: দক্ষিণ এশিয়ায় মানুষ এবং সংস্থাগুলিকে অভিযোজিত করতে সহায়তা করা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, উপকূলীয় অঞ্চলে পানি ও মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ু সংকট বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের জীবনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। জলবায়ু অভিযোজনের মূল ভার মূলত পরিবার এবং বিভিন্ন সংস্থার ওপরই পড়েছে।

জনগণের মধ্যে জলবায়ু ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা রয়েছে। তিন চতুর্থাংশেরও বেশি পরিবার এবং সংস্থা আগামী ১০ বছরে আবহাওয়ার বড় ধরনের পরিবর্তনের আশঙ্কা করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬৩ শতাংশ সংস্থা এবং ৮০ শতাংশ পরিবার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এদের বেশিরভাগই উন্নত প্রযুক্তি বা সরকারি অবকাঠামো ব্যবহারের পরিবর্তে নিজেদের মতো করে মৌলিক ও কম খরচের সমাধানের ওপর নির্ভর করছে।

বাংলাদেশের ২৫০টি উপকূলীয় গ্রামে পরিচালিত জরিপের তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো সবচেয়ে জরুরি, যার অভাব রয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদে ৫৭ শতাংশ পরিবার দুর্যোগ প্রতিরক্ষামূলক অবকাঠামোর অভাবকে এবং ৫৬ শতাংশ পরিবার অভিযোজনের জন্য সীমিত আর্থিক সম্পদকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এর প্রভাব কেবল পরিবেশগত নয়, বরং গভীরভাবে মানবিক। কারণ দরিদ্র ও কৃষিজীবী পরিবারগুলো এতে আনুপাতিক হারের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

প্রতিবেদনে জলবায়ু অভিযোজনের জন্য বহুমুখী পদ্ধতির আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থার উন্নতি এবং আনুষ্ঠানিক ঋণ ও বীমার প্রাপ্তিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু চাপের প্রতিক্রিয়ায় বেসরকারি খাত যদি সম্পদ এবং বিনিয়োগ প্রয়োজনীয় খাতে স্থানান্তর করতে পারে, তবে জলবায়ুজনিত ক্ষতির প্রায় এক তৃতীয়াংশ এড়ানো সম্ভব।

বিশ্বব্যাংক বলছে, সীমিত বাজেটের মধ্যেও দক্ষিণ এশিয়ার সরকারগুলো অর্থায়নের সুযোগ বৃদ্ধি, পরিবহন এবং ডিজিটাল নেটওয়ার্ক উন্নত করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে। এছাড়া সামাজিক সহায়তা ব্যবস্থাকে লক্ষ্যভিত্তিক ও নমনীয় করার মাধ্যমেও এটি করা সম্ভব।

সরকারের এমন অভিযোজন কৌশল গ্রহণ করা উচিত যাতে নতুন স্থিতিস্থাপক প্রযুক্তি বা জনসাধারণের সহায়তা জড়িত থাকে। যেমন রাস্তা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, যা কর্মসংস্থানে সহায়তা করে এবং মানব সম্পদ রক্ষা করে। বাঁধ এবং ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের মতো সরকারি বিনিয়োগ জীবন বাঁচিয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতি কমিয়েছে।

বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানের কেস স্টাডিতে দেখা গেছে, হালনাগাদ তথ্যের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট সামাজিক সহায়তা কর্মসূচি দ্রুত বৃদ্ধি করা যেতে পারে। যাতে যে কোনো দুর্যোগে সাড়া দেওয়া যায় এবং দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণদের সহায়তা প্রদান করা যায়। তবে আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে সরকারগুলোর কাজের সুযোগ সীমিত। তাই একটি বিস্তৃত নীতি প্যাকেজের মাধ্যমে বেসরকারি খাতের অভিযোজন সহজতর করা প্রয়োজন।

ভবিষ্যতের জন্য স্থিতিস্থাপকতা তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামনে অনন্য সুযোগ রয়েছে। প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থা এবং ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে বিনিয়োগ বড় ঝড়ের সময় প্রাণহানি কমাতে সাহায্য করেছে। এটি প্রমাণ করে যে লক্ষ্যভিত্তিক বিনিয়োগ এবং কার্যকর প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় অভিযোজনকে সফল করতে পারে।

সরকার, বেসরকারি খাত এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে অংশীদারত্ব শক্তিশালী করার মাধ্যমে বাংলাদেশ জলবায়ু সহনশীল সমাধান গ্রহণকে ত্বরান্বিত করতে পারে। এটি কেবল ঝুঁকি হ্রাস করবে না, বরং টেকসই উন্নয়নকেও ত্বরান্বিত করবে।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটান বিভাগের পরিচালক জিন পেসমে বলেন, “পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্থিতিস্থাপকতা বা টিকে থাকার সক্ষমতা ক্রমাগত পরীক্ষার মুখে পড়ছে। জলবায়ু ঝুঁকি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অভিযোজন ব্যাপক হলেও আরও অনেক কিছু করা প্রয়োজন।”

তিনি আরও বলেন, “দেশের স্থিতিস্থাপকতা নির্ভর করবে প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থা বৃদ্ধি, সামাজিক সুরক্ষা, জলবায়ু সহনশীল কৃষি এবং অভিযোজন অর্থায়নের ওপর। যার মধ্যে রয়েছে উদ্ভাবনী ঝুঁকি অর্থায়ন সমাধানের পাশাপাশি লক্ষ্যবস্তু ঠিক করে নগরে হস্তক্ষেপ বা উন্নয়ন কাজ পরিচালনা।”

বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং প্রতিবেদনের সহ লেখক সিদ্ধার্থ শর্মা বলেন, “বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু অভিযোজনের জন্য শিক্ষা এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা উভয়ই প্রদান করে।”

তিনি বলেন, “দেশের জনগণ এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু জলবায়ু সংকটের মাত্রা এবং জটিলতা সরকার ও বেসরকারি খাতের জরুরি ও সমন্বিত পদক্ষেপের দাবি রাখে।”