ঢাকা, ২৫ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৫ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২
good-food
১৫

দেশের কোন অঞ্চল বেশি ভূমিকম্প ঝুঁকিতে?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৭:০৮ ২৪ নভেম্বর ২০২৫  

দেশে অল্প সময়ের ব্যবধানে তিনবার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে, শুক্রবারের ভূমিকম্পে ১০ জনের মৃত্যু এবং বিভিন্ন এলাকায় ভবন হেলে পড়া ও ফাটলের ঘটনায় অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

এ অবস্থায় নিজেদের নিরাপদ রাখতে ভূমিকম্প সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য জানার চেষ্টা করছেন সাধারণ মানুষ। এক্ষেত্রে তথ্য জানার সহজ মাধ্যম হিসেবে অনেকেই আশ্রয় নিচ্ছেন সার্চ ইঞ্জিন গুগলের।

বাংলাদেশে গত তিন দিনে ভূমিকম্প নিয়ে গুগলে যেসব বিষয় সবচেয়ে বেশি খোঁজ করেছেন মানুষ, ভূতত্ত্ববিদ ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে সেগুলোর মধ্য থেকে শীর্ষ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করেছে বিবিসি বাংলা।

ভূকম্পনের ঝুঁকি বিবেচনায় বাংলাদেশকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি অংশকে 'উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল' হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সিলেট, ময়মনসিংহ এবং রংপুর, ঢাকা, কুমিল্লা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের কিছু অংশ ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট বিভাগের চারটি জেলায় বড় মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে।

একইভাবে ময়মনসিংহ বিভাগের পাঁচটি জেলাও ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ঢাকা বিভাগের মধ্যে টাঙ্গাইল, গাজীপুর, নরসিংদী জেলার অংশ বিশেষ, পুরো কিশোরগঞ্জ জেলা এবং কুমিল্লা বিভাগের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বড় মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলার উত্তরাংশও ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।

অন্যদিকে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের অংশ বিশেষ এবং চট্টগ্রাম মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। আর ভূমিকম্পের তুলনামূলক কম ঝুঁকিতে রয়েছে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলো।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্পের প্রধান দু'টি উৎসের একটি হলো 'ডাউকি ফল্ট'। এটি ভারতের শিলং মালভূমির পাদদেশে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ-জামালগঞ্জ-সিলেট অঞ্চলে বিস্তৃত যা প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ।

আরেকটি হলো- সিলেট থেকে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, টেকনাফ পর্যন্ত যা সব মিলিয়ে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই উৎসটিকে খুব ভয়ংকর বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

টেকটনিক প্লেটে বাংলাদেশের যে অবস্থান তাতে দু'টি প্লেটের সংযোগস্থল রয়েছে- পশ্চিমে ভারতীয় প্লেট আর পূর্ব দিকে বার্মা প্লেট। আর বাংলাদেশের উত্তরদিকে আছে ইউরেশিয়ান প্লেট।

এর মধ্যে ভারতীয় প্লেটটি ধীরে ধীরে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বার্মা প্লেটের নিচে অর্থাৎ চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার।

তিনি বলেন, "তলিয়ে যাওয়ার কারণে একটা সাবডাকশান জোনের তৈরি হয়েছে। আর নটরিয়াস (ভয়ংকর অর্থে) এই জোনের ব্যাপ্তি সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত। পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চল এর মধ্যে পড়েছে। এখানে বিভিন্ন সেগমেন্ট আছে। আমাদের এই সেগমেন্টে আট দশমিক দুই থেকে নয় মাত্রার শক্তি জমা হয়ে আছে আজ হোক, কাল হোক- এটা বের হবেই।"

তার মতে, নরসিংদীর মাধবদীতে যে ভূমিকম্পের উৎস ছিলো সেটা এই সেগমেন্টেরই এবং নরসিংদীতে দুই প্লেটের যেখানে সংযোগস্থল, সেখানেই ভূমিকম্প হয়েছে। তিনি বলেন, "এখানে প্লেট লকড হয়ে ছিল। এর অতি সামান্য ক্ষুদ্রাংশ খুললো বলেই শুক্রবারের ভূমিকম্প হয়েছে। এটিই ধারণা দেয় যে সামনে বড় ভূমিকম্প আমাদের দ্বারপ্রান্তে আছে।"