ঢাকা, ০৮ মে বৃহস্পতিবার, ২০২৫ || ২৫ বৈশাখ ১৪৩২
good-food
১৭

পাক-ভারত যুদ্ধের পূর্বাভাস ৬ বছর আগেই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণায়

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০২:০৮ ৮ মে ২০২৫  

কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জেরে পাকিস্তানে ভারতের হামলা এবং পাল্টা জবাবের উত্তেজনার মধ্যে বাংলাদেশের ফেইসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিবিসি বাংলার বছর ছয়েক আগের এক প্রতিবেদন। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণার তথ্যে পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে ২০২৫ সালে পরমাণু যুদ্ধ লেগে যাওয়া ও প্রাণহানির পূর্বাভাস রয়েছে সেই প্রতিবেদনে।

 

কাকতালীয়ভাবে ২০২৫ সালে এসেই যুদ্ধাবস্থার মুখোমুখি দুই দেশ। ভারত মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যার জবাব দিয়েছে পাকিস্তানও। ‘শান্ত’ এ উপমহাদেশে পরমাণু শক্তিধর দেশ দুটি ক্রমান্বয়ে সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে গড়ালে শেষ পরিস্থিতি কী দাঁড়াতে পারে, তা নিয়েই আলোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

 

এমন অবস্থার মধ্যে ‘পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধ ২০২৫ সালে, সাড়ে ১২ কোটি মানুষের প্রাণহানি: যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা’ শিরোনামে বিবিসি বাংলার পুরনো প্রতিবেদন শেয়ার করে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করছেন, পূর্বাভাস তাহলে বাস্তবে ঘটতে চলেছে কিনা।

 

মিজানুর রহমান খানের করা প্রতিবেদনটি প্রকাশ পেয়েছিল ২০১৯ সালের ১৯ অক্টোবর। সেখানে বলা হয়, ভারত-পাকিস্তান পারমাণবিক যুদ্ধে জড়াতে পারে ২০২৫ সালে, যার সূত্রপাত হবে কাশ্মীর বিরোধের জের ধরে। যুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি মানুষের প্রাণহানি ঘটবে।

 

গবেষকদের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, সরাসরি প্রাণহানি ছাড়াও পারমাণবিক যুদ্ধের ফলে জলবায়ুর ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়বে, তাতে অনাহারে মারা যাবে আরও ‘বহু কোটি’ মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এসব আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। আর যুদ্ধ কীভাবে শুরু হবে তার কিছু কাল্পনিক দৃশ্যপটও দেখান গবেষকরা।

 

যেমন- ভারতীয় পার্লামেন্টে বোমা হামলা চালাবে একজন সন্ত্রাসী। তাতে ভারতীয় নেতাদের প্রাণ যাবে। জবাবে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের ভেতরে প্রবেশ করে আক্রমণ চালাবে। নিজেদের রক্ষার্থে পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করবে পাকিস্তান। এরপর ভারতও পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করবে। দুটো দেশই তখন সব পরমাণু অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে নেমে যাবে।

 

প্রতিবেদনে আরেকটি দৃশ্যপট তুলে ধরা হয়েছে। যেমন- কাশ্মীরে আক্রমণ করবে ভারত। তারপর শুরু হয়ে যাবে পারমাণবিক যুদ্ধ। তবে উভয় দেশে যদি বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন নেতারা ক্ষমতায় থাকেন, তাহলে হয়ত এরকম কিছু হবে না এবং এ কারণেই এখন পর্যন্ত সেরকম কিছু হয়নি। কিন্তু এরকম আরও নানা রকমের কাল্পনিক দৃশ্য তৈরি করা যায়, যার ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

 

গবেষণার সঙ্গে জড়িত যুক্তরাষ্ট্রের রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অ্যালান রোবোক বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ভারত ও পাকিস্তান তাদের পরমাণু অস্ত্র ভাণ্ডার বাড়িয়ে চলেছে। শুধু সংখ্যার বিচারেই নয়, এসব অস্ত্রের বিস্ফোরণের শক্তিও তারা ক্রমাগত বৃদ্ধি করছে। ফলে তাদের আশঙ্কা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেই এই যুদ্ধের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।”

 

যুদ্ধ শুরুর দৃশ্যকল্প কীভাবে তৈরি করা হয়েছে? এমন প্রশ্নে অ্যালান রোবোক বলেন, কিছু পেশাজীবীকে নিয়ে তারা ওয়ার্কশপ করেছেন যেখানে এসব সম্ভাব্য কারণের কথা উঠে এসেছে। “ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়া কয়েকজন জেনারেলকে আলাদা আলাদা দুটো কক্ষে বসিয়ে দেওয়া হয়। এক পক্ষকে বলা হয়, যেসব কারণে যুদ্ধ হতে পারে তার কিছু ধারণা দিতে। তারপর সেগুলো অন্য আরেকটি কক্ষে অপর গ্রুপের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় সেরকম কিছু হলে তারা কী করবেন? এরকম আলোচনার ভিত্তিতেই এসব সিনারিও তৈরি করা হয়েছে।”

 

তবে তিনি বলেন, “এগুলো কিছু দৃশ্যকল্প। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়ত কিছু হয় না। নেতারা ঠান্ডা মাথায় সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখেন। কিন্তু কখনও কখনও পরিস্থিতি তো নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যেতে পারে!”

 

পূর্বাভাসে ২০২৫ সালই কেন?

কাশ্মীর নিয়ে ভারত পাকিস্তান এর আগেও যুদ্ধে জড়িয়েছে। সবশেষ ২০২৫ সালে এসে ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানির পর পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। হামলার ঘটনায় পাকিস্তানের দায় দেখছে ভারত। যদিও পাকিস্তান সব অভিযোগ অস্বীকার করছে।

 

ঘটনাটি নিয়ে উত্তেজনার মধ্যেই পাকিস্তানে মঙ্গলবার রাতে হামলা চালিয়েছে ভারত, যার পাল্টায় সামরিক জবাব দিয়েছে পাকিস্তানও। ভারতের আক্রমণের সমুচিত জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে দেশটি।

 

 

এমন সময়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বড় সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে, যার আভাস দেওয়া হয়েছিল ছয় বছর আগেই। যুক্তরাষ্ট্রের রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা তখন বলেছিল, ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধতে পারে ২০২৫ সালে। কিন্তু এই সময়টা গবেষকরা কীভাবে নির্ধারণ করলেন, সেই প্রশ্ন করে বিবিসি বাংলা।

 

জবাবে অধ্যাপক রোবোক বলেছিলেন, “ভবিষ্যৎ থেকে তারা শুধু একটি বছরকে বেছে নিয়েছেন। এই যুদ্ধ যেকোনো সময়ে লাগতে পারে, হতে পারে আগামীকালও। ভবিষ্যতের ব্যাপারে কোন তথ্য থাকে না। কখন কী হবে সেটাও কেউ বলতে পারে না। সেকারণে আমরা কিছু দৃশ্যকল্প ব্যবহার করেছি কী হতে পারে সেটা বোঝার জন্যে। সেই সম্ভাবনার কথা চিত্রিত করতে আমরা শুধু একটা সময়কে বেছে নিয়েছি।”

 

বাস্তবেই পরমাণু যুদ্ধ হতে পারে?

এই প্রশ্নের উত্তর দেন ভারতীয় সেনা বাহিনীর একজন সাবেক কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল দীপঙ্কর ব্যানার্জি। তিনি বলেন, “এই গবেষণা একেবারেই কাল্পনিক, যার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। লোকেরা ভাবছেন দুটো দেশের আণবিক বোমা আছে, তাদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো নয়, তার মানে পাঁচ-ছয় বছর পর তাদের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যাবে।”

 

তিনি এও বলেন, “২০২৫ সালে না হলেও যেকোনো সময় এই দুটো দেশের মধ্যে যুদ্ধ হতে পারে।” বিবিসি বাংলা লিখেছে, ১৯৯৮ সালে ভারত ও পাকিস্তান আণবিক বোমা পরীক্ষা চালিয়েছে। এর পরে ১১ বছর চলে গেছে। এর মধ্যে কারগিল যুদ্ধ হয়েছে ঠিকই কিন্তু সেসময় এবং তার পর থেকে কখনোই আণবিক বোমা ব্যবহারের কথা উঠেনি।

 

দীপঙ্কর ব্যানার্জি বলেন, “কোনো দেশ ইচ্ছে করে কিছু করতে চায় না। কিন্তু দুর্ঘটনাবশত বিভিন্ন কারণে- যেমন ভয়ে, রাগে অনেক সময় অনেক কিছুই হয়ে যায়।”

 

 

রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন পাকিস্তানের কায়েদে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরমাণু বিজ্ঞানী পারভেজ হুডভাই। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধের সম্ভাবনা সবসময়ই আছে। “কোনো পরিকল্পনা থেকে নয়, বরং দুর্ঘটনাবশতই এরকম যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। দুটো দেশের মধ্যে যদি অনন্তকাল ধরে উত্তেজনা বিরাজ করে এবং তাদের কাছে পরমাণু অস্ত্র থাকে, তাহলে তো অনেক কিছুই ঘটতে পারে।”

 

পুরনো ঘটনার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “কাশ্মীরের পুলওয়ামার পর বালাকোটে যা হয়েছে, পাকিস্তান এর আরও কঠোর জবাব দিতে পারত। তখন ভারতও কিছু একটা করত। এরকম একের পর এক ঘটনায় উত্তেজনা এতটাই ছড়িয়ে পড়তে পারত যে পারমাণবিক যুদ্ধও শুরু হয়ে যেতে পারত।

 

“শীতল যুদ্ধের সময় যা হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তানের বিরোধ তার চাইতেও খারাপ। আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে কয়েক হাজার মাইলের দূরত্ব কিন্তু ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্ত একই, যেখানে প্রায় প্রতিদিনই একে অপরকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়, ফলে উত্তেজনা শীতল যুদ্ধের চাইতেও বেশি।”

 

কারণ কাশ্মীর?

পরমাণু যুদ্ধ শুধু ভারত ও পাকিস্তান নয়, ভারত-চীন অথবা যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মধ্যেও হতে পারে বলে ধারণা দেন গবেষক অ্যালান রোবোক। তার কথায়, “তবে আমরা ভারত ও পাকিস্তানকে বেছে নিয়েছি, কারণ কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে এ দুটো দেশের মধ্যে অব্যাহত বিরোধ চলছেই। সামরিক যুদ্ধে জড়ানোর অতীত ইতিহাসও তাদের রয়েছে।”

 

তবে পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানী হুডভাইও ধারণা দিয়েছিলেন, অন্যান্য কারণ থাকলেও কাশ্মীরই হবে যুদ্ধের প্রধান কারণ। তিনি বলেন, “কাশ্মীরের পরিস্থিতি যতই শান্ত করা যাবে, পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকিও ততটা কমে আসবে। দুর্ভাগ্যজনক হল সেরকম কিছুই হচ্ছে না। এ ছাড়া পরিবেশগত কিছু পরিবর্তনও পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে দিতে পারে।

 

“পাকিস্তানের বেশিরভাগ পানি আসে হিমালয় থেকে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমালয়ের সব হিমবাহ গলে উধাও হয়ে গেলে কাশ্মীর পাকিস্তানের জন্যে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে পানির উৎসের জন্যে। এ নিয়ে যদি সমঝোতা না হয় তাহলে তো যুদ্ধের আশঙ্কাও বেড়ে যায়।”

 

সাবেক ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল দীপঙ্কর ব্যানার্জি সন্ত্রাসবাদের মত আরও কিছু ইস্যুও যুদ্ধের কারণ হিসেবে বলেছিলেন। তার কথায়, ২০০৮ সালে পাকিস্তান থেকে সন্ত্রাসীরা এসে মুম্বাইয়ে আক্রমণ করেছিল। এরকম আক্রমণ আবারও হলে তখন পরিস্থিতি অন্য রকমের হয়ে যেতে পারে।

 

ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাত শুরু হয়েছে ঠিক সন্ত্রাসী আক্রমণের কারণেই। গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হলে ২৬ জনের প্রাণ যায়। এ ঘটনার পরই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়েছে।

 

আবার দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধের জন্য পানিকেও কারণ বলে মনে করেন দীপঙ্কর ব্যানার্জি। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেছিলেন, “১৯৬০ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল তাতে দুটো দেশের কেউই খুশি নয়। যখন উভয়পক্ষ সমান সমান অখুশি হয়, তখন মেনে নিতে হয় যে আমি যদি আরও বেশি খুশি হতে চাই তাহলে আমার প্রতিপক্ষ আরও বেশি অখুশি হবে। তখন যুদ্ধের সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।”

 

 

লন্ডনভিত্তিক ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট পর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ’ এর তথ্যের ভিত্তিতে ভারত-পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা শক্তির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে রয়টার্স। বার্তা সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পারমাণবিক বোমার সক্ষমতার দিক থেকে প্রায় সমানে সমান দেশ দুটি। ভারতের কাছে রয়েছে ১৭২টি, বিপরীতে পাকিস্তানের আছে ১৭০টি।

 

পরমাণু বিজ্ঞানী হুডভাই ছয় বছর আগে বলেছিলেন, এই দুটো দেশের মধ্যে পরমাণু অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বেড়েই চলেছে। “যদিও এসব তথ্য অত্যন্ত গোপনীয় তারপরেও ধারণা করা হয় যে পাকিস্তানের কাছে হয়ত দশ/বিশটি বেশি বোমা আছে। ভারতের এখন পারমাণবিক ডুবোজাহাজও আছে। পাকিস্তানও এরকম ডুবোজাহাজ নির্মাণ করছে। ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে এসব অস্ত্র নিক্ষেপের ক্ষমতা ও সংখ্যা দুটো দেশেরই বৃদ্ধি পাচ্ছে।”

 

পরমাণু যুদ্ধ হলে কী হবে?

বিবিসি বাংলাকে গবেষক অ্যালান রোবোক বলেছিলেন, “এর আগেও বেশ কয়েকবার পারমাণবিক যুদ্ধ লেগে যাওয়ার মত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। ভবিষ্যতে কী হবে সেটা তো আমি বলতে পারব না। পারমাণবিক অস্ত্রের অস্তিত্বের অর্থ হচ্ছে এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হতে পারে। আমরা যদি এসব ব্যবহার না করি, এগুলো ব্যবহারের যদি যৌক্তিক কোনো কারণ না থাকে, তাহলে এসব ধ্বংস করে ফেলা উচিত।”

 

তিনি বলেন, “২০১৭ সালে জাতিসংঘে পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার রোধে একটি চুক্তি সই হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত ৩২টি দেশ এই চুক্তি অনুমোদন করেছে। ৫০টি দেশ অনুমোদন করলেই এটি কার্যকর হবে। তাই এখন বাকি বিশ্বের এগিয়ে আসা উচিত।” পারমাণবিক বোমা কেবল মানুষই নয়, গোটা বিশ্বের জন্যেই হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এর ব্যাখ্যায় জলবায়ু বিজ্ঞানী অ্যালান রোবোক বলেন, “পারমাণবিক বোমার ফলে আগুন লেগে যাবে, সেই আগুন থেকে যে পরিমাণ ধোঁয়া তৈরি হবে সেটা ছড়িয়ে পড়বে সারা পৃথিবীতে। এই ধোঁয়ার কারণে আমাদের এই গ্রহে সূর্যের আলোও ঠিক মত এসে পৌঁছাতে পারবে না। ফলে পৃথিবী অনেক ঠাণ্ডা আর অন্ধকারময় হয়ে পড়বে।

 

“ধোঁয়া যখন পৃথিবীর আরও উপরের আবহমণ্ডলে চলে যাবে তখন সেটা সূর্যের আলোতে উত্তপ্ত হয়ে আরও বেশি ছড়িয়ে পড়বে যা সেখানে স্থায়ী হবে কয়েক বছর। বৃষ্টিপাত কমে যাবে। তেজস্ক্রিয়তার ঘটনা ঘটবে। এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে খাদ্য উৎপাদনের ওপর। ফলে যুদ্ধের পরেও অনাহারে আরও বহু মানুষের মৃত্যু হবে।”

 

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ লাগতে পারে কিনা, এমন প্রশ্নে রোবোক বলেছিলেন, পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যাপারে ভারতের নীতি হচ্ছে তারা এই অস্ত্র আগে ব্যবহার করবে না। কিন্তু তারাও এখন এই নীতি পুনর্বিবেচনার কথা বলছে। পাকিস্তান সবসময় বলেছে, এরকম অঙ্গীকার করতে তারা রাজি নয়। ফলে দুটো দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, এর ফলে পারমাণবিক যুদ্ধ যে কখনোই ঘটবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই, লিখেছে বিবিসি বাংলা।

বিশ্ব বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর