ঢাকা, ০৮ অক্টোবর মঙ্গলবার, ২০২৪ || ২৩ আশ্বিন ১৪৩১
good-food
৩১৭

বর্তমান শেয়ারবাজার: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি 

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০১:২৭ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

১.আজ ঢাকার শেয়ারবাজারে ১৭০০ কোটি টাকার শেয়ার ক্রয় বিক্রয় হয়। চলতি সপ্তাহে এটি গড়ে দৈনিক প্রায় ১৪০০ কোটি টাকা ছুঁয়েছে। অথচ মাস দুয়েক আগেই এটি গড়ে দৈনিক ৩০০ কোটি টাকা ছিল। 

 

২.শেয়ার মার্কেট সম্প্রতি অনেক জুজুর ভয়কে জয় করেছে। মারণঘাতী কোভিডের দাহ না শুকাতে ইউক্রেন যুদ্ধের দামামা শোনা গেল। পৃথিবীর যেকোনও গোলার্ধে যুদ্ধ হলে কিছুটা প্রভাব আমাদের দেশে কম বেশি পড়বে এটিই বাস্তবতা। কিন্তু প্রতিবেশী দেশসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের শেয়ার মার্কেট ইউক্রেন জুজুর ভয়কে জয় করতে সক্ষম হয়।

 

তবে এই অশরীরীকে পুঁজি করে কিছু দুষ্ট লোকেরা শেয়ারের মূল্য কমিয়ে মধ্যবিত্তদের কষ্টার্জিত লগ্নীকৃত শেয়ার কম মূল্যে হাতিয়ে নিল। ডলার সমস্যা, ব্যাংকের অস্থিরতা, মার্কিনিদের স্যাংশনের ভয়, বিগত নির্বাচন ঘিরে অস্থিতিশীলতার ভয় সবকটি উপাদানকে এই দুষ্ট লোকজন নিজ সবার্থে ব্যবহার করে। প্যানিক ছড়িয়ে শেয়ারের মূল্য প্রতিনিয়ত কমিয়ে তারা অল্প মূল্যে কিনতে থাকে। আশু বিপর্যয় রোধে "ফ্লোর প্রাইস" বেঁধে দেওয়া হয়। 

 

৩.নির্বাচনোত্তর সময়ে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন স্টকের উপর এক এক করে ফ্লোর উঠিয়ে নেয়া হয়। আপাতভাবে এই প্রক্রিয়ার মাঝে প্রজ্ঞা আর দূরদর্শিতার ছাপ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। চুন খেয়ে মুখ পুড়ে যাওয়া ক্রেতারা দইয়ের আশায় আবার শেয়ার মার্কেটে যুক্ত হচ্ছেন। ইন্সটিটিউটগুলোও শেয়ারে লগ্নি বাড়িয়ে সামনের দিকে যাচ্ছে। বিদেশি ক্রেতাদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। 

 

৪. শেয়ার মার্কেট সারা পৃথিবীতেই ঝুঁকিপূর্ণ। সংসারের খরচ নির্বাহের পর বাড়তি অর্থ থাকলে তাদের জন্য শেয়ার মার্কেট উপযোগী জায়গা। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার আশংকাজনক কমে যাওয়া, ব্যাংকের মুনাফা মুদ্রাস্ফীতির সাথে পাল্লা দিয়ে দিনশেষে প্রায় অলাভজনক হওয়ায় পুঁজিবাজারই লগ্নিকারীদের অন্ধের যষ্ঠী হিসেবে সামনে দাঁড়িয়েছে। 

 

৫. দীর্ঘদিন ফ্লোরে থাকাসহ নানাবিধ কারণে এখনও অনেক শেয়ার অবমূল্যায়িত। কারও কথা শুনে অন্ধের মতো নয়, জেনেবুঝে বিনিয়োগ করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুঁজি সুরক্ষিত রাখা সম্ভব হতে পারে। 

 

৬. পুঁজিবাজার বলতে আপাতভাবে আমরা সেকেন্ডারি মার্কেটকেই বুঝি। কিন্তু এই মার্কেটের অলিগলি না জানলে মিউচুয়াল ফান্ড,ট্রেজারি বিল-বন্ড ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করলে মোটামুটি আশাব্যঞ্জক মুনাফা পাওয়া যেমন সম্ভব, তেমনই কষ্টার্জিত সঞ্চয় তস্করদের হাত থেকে সুরক্ষা করাও অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হতে পারে। 

 

৭. সম্প্রতি এক সামাজিক অনুষ্ঠানে পাঁচ তারকা হোটেলে রাতের খাবারের সময় বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের কর্ণধার অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম এই মার্কেটকে ঘিরে অনেক স্বপ্নের কথা বললেন। খোদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই বাজারের প্রতি সানুগ্রহ প্রদর্শন করেন। তিনি নিজেও প্রতীকীভাবে বি ও একাউন্ট খোলেন। 

 

৮. বাংলাদেশের শেয়ারবাজার নি:স্ব হয়ে যাওয়া মানুষের অশ্রুসিক্ত।  এমন কি আত্মদহনের তীব্র অনলে পুড়েছে ঋণ জর্জর মানুষ।  বিগত সময়ে পূঁজি হারিয়ে ফেলা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সহনীয় সময়ে রক্ত ঘামের অর্থ অনেকটা ফিরে পাবে এটিই সাধারণ নাগরিকদের প্রত্যাশা।

 

মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ 
ক্লাসিফাইড স্পেশালিস্ট বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সেস।