ঢাকা, ২৪ সেপ্টেম্বর রোববার, ২০২৩ || ৯ আশ্বিন ১৪৩০
good-food
৩৮২

এক ম্যাচেই দুবার হারের লজ্জায় বাংলাদেশ!

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১২:১০ ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮  

সংগৃহীত

সংগৃহীত

বাংলাদেশের স্কোর তখন ৪ ওভারে ১ উইকেটে ৬২ রান৷

সেখান থেকে স্কোরকার্ডে লেখা থাকবে বাংলাদেশ ৫০ রানে হার।

কিন্তু ক্রিকেট শুধু রান বা উইকেটের খেলা তো নয়। ক্রিকেট কখনো কখনো রান-উইকেটের ঊর্ধ্বে উঠে যায় বলেই ক্রিকেটকে বলা হয় ভদ্রলোকের খেলা।


গতবছর নিদাহাস ট্রফিতে যে বাংলাদেশ এক প্রাপ্য নো বলের দাবিতে মাঠে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিল, আজ সেই বাংলাদেশের খাতাতেই অন্যায় নো বল লেখা হলো।

আম্পায়ার তানভীর আহমেদের ভুলের দায় অবশ্যই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের না। তবুও এই ভুলের দায় বাংলাদেশ ক্রিকেটের!

এই ন্যক্কারজনক মুহূর্তের খেসারত কি বাংলাদেশ দলকেও দিতে হয়েছে অন্যভাবে।

বাংলাদেশ যেখানে উড়ন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মাটিতে নামাতে শুরু করেছিল ব্যাট হাতে, ছুটছিল যেন মিগ টোয়েন্টি নাইনে সওয়ার হয়ে; এরপর পরপর দুটি অন্যায় নো বলের অভিশাপে পুড়তে হল বাংলাদেশকে।

এই খেলায় উদারপন্থি যদি নাও হন, ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যাতেও বুঝবেন। ওই বিতর্কিত ওভারটি খেলার পুরো রিদম নষ্ট করে দিয়েছে। মানসিকভাবে নুয়ে পড়া ক্যারিবীয়দের ভীষণভাবে উজ্জীবিত করেছে। এরই ফলাফল, ২ রানের মধ্যে বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলল ৩ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে। যেখানে ১ উইকেটে ৬৫ তুলে ফেলা বাংলাদেশ তখন ৪ উইকেটে ৬৬।


দারুণ একটা ম্যাচ দেখার অপেক্ষায় ছিল যেখানে দর্শকেরা, বাংলাদেশের ইনিংসের ১০ ওভারের মধ্যেই তাদের অর্ধেকের বেশি ঘরে ফেরার পথ ধরল। ৯.৪ ওভারে ৭ উইকেটে ৮৯ রান!

শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ১৪০ রানে, ১৭ ওভারে।

লিটনের ব্যাট থেকে এসেছেন সর্বোচ্চ ৪৩ রান। এর বাইরে সর্বোচ্চ আবু হায়দারের ২২। মেহেদী হাসান মিরাজ করেছেন ১৯।


অথচ হয়তো ট্রেবল জেতাটা হয়েই যেতো বাংলাদেশের। ২ উইকেটে ১২২ রান তুলে ফেলা ক্যারিবীয়দের বাংলাদেশ প্রথম আটকে দিয়েছে ১৯০ রানে। ৭৮ রানে তুলে নিয়েছে তাদের শেষ ৮ ব্যাটসম্যানকে। বোলারদের এই উজ্জীবিত পাল্টা লড়াইয়ে সওয়ার বাংলাদেশ এরপর ব্যাট হাতেও দারুণ শুরু করে। ৪ ওভারে ১ উইকেটে ৬২ রান বাংলাদেশের।


এই চতুর্থ ওভারটাতেই যত ঘটনা। টমাসকে দুই বল আগেও ‘নো’ ডেকেছিলেন তানভীর আহমেদ, পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা গেল টমাসের পা দাগের ভেতরেই ছিল। শেষ বলেও ঠিক একই ঘটনা, আবারও টমাসের বলটা নো ডাকেন আম্পায়ার। পর পর দুটি ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ব্রাফেট ব্রাথওয়েট। পরে একে এর খেলোয়াড়েরাও সামীল হয়। ৮ মিনিট খেলা বন্ধ থাকে।


এক পর্যায়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নেমে আসতে হয়েছিল ম্যাচ রেফারি জেফ ক্রোকে।

পুরো সিরিজে আম্পায়ার তানভীরের কিছু হাস্যকর ভুল সিদ্ধান্ত চোখে পড়েছে আগেও। আজ দৃষ্টিকটু লাগল বোলারের পা দাগের বেশ ভেতরে থাকার পরও পর পর দুবার নো বল ডাকলেন। দ্বিতীয়বার ডাকা নো-এর সময় লিটন দাস মিড অফে ক্যাচও দিয়ে ফেলেছিলেন। ক্যারিবীয় খেলোয়াড়েরা মাঠের বড় পর্দায় দেখে বলটি নো ছিল না। এরপরই অধিনায়ক কার্লোস ব্রাফেটের নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলা চালিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায়।


অবস্থা এমনই দাঁড়ায়, ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়কত্বের নেতৃত্বে খেলোয়াড়েরা মাঠ থেকে বেরিয়ে যান! ব্রাফেট আম্পায়ার তানভীরকে রিভিউ নেওয়ার কথা বলেন। আম্পায়ার জানান, রিভিউ নেওয়ার সুযোগ নেই। ব্রাফেট আরও চটেন। চলে যান মাঠের বাইরে। কথা বলেন উইন্ডিজ টিম ম্যানেজমেন্টের, রিজার্ভ আম্পায়ার শরফুদ্দৌলার সঙ্গে। ব্রাফেটের অভিব্যক্তি দেখে যেটা বোঝা গেল, তাঁর একটাই দাবি, আম্পায়ার বারবার ভুল 'নো' বল দিচ্ছেন।

এক পর্যায়ে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে আসেন ম্যাচ রেফারি জেফ। ব্রাফেট, ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিম ম্যানেজমেন্ট, ম্যাচ রেফারি, রিজার্ভ আম্পায়ারের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও। সাকিব অবশ্য বেশি সময় নীরব দর্শক ছিলেন।

সাকিবকে এই ঘটনার দৃশ্যপটে দেখতে পেয়ে অনেকের মনে পড়ার কথা গত মার্চের নিদাহাস ট্রফিতে বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচটির কথা। উদানার একই ওভারের দ্বিতীয় বাউন্সার নো হয় ক্রিকেটীয় আইনে। কিন্তু লেগ আম্পায়ার নো বল না ডাকায় খেপে যায় বাংলাদেশ। ড্রেসিংরুম থেকে সাকিবের ইশারায় বাংলাদেশ দল মাঠ ছাড়ে। সেদিন বাংলাদেশ ক্রিকেটীয় চেতনার পক্ষে লড়াই করেছিল। আজ বাংলাদেশ হয়ে থাকল দর্শক। লিটন ওয়াক করে বের হয়ে আসতে পারতেন হয়তো। যদিও সে সময় দারুণ ব্যাট করতে থাকা লিটনের পক্ষে যুক্তি থাকবে, আম্পায়ারের নো শুনেই তিনি মেরে খেলতে চেয়েছেন। বাংলাদেশ সর্বোচ্চ যা করতে পারত, ক্রিকেটীয় চেতনায় ওই নো বলের সুবাদে পাওয়া ফ্রি হিটটি মেরে না খেলে ডিফেন্স করলে। কিন্তু সেটিও হয়নি।


বাংলাদেশ দলকে এই মুহূর্তে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো ভুলই হবে। যখন অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ওই ঘটনায় মূল শিকার শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশই হলো। ওই একটা মুহূর্ত ম্যাচ থেকে বাংলাদেশকে ছিটকে দিল। তাতে ক্যারিবীয়দের কৃতিত্ব অবশ্যই বেশি।


এই টি-টোয়েন্টি সিরিজেই অভিষিক্ত তানভীর ঘরোয়া ক্রিকেটে বাজে আম্পায়ারিংয়ের জন্য বিশেষভাবে সুখ্যাত। এর আগেও খোদ সাকিব ও তামিমের সঙ্গে মাঠেই বাদানুবাদ হয়েছিল তানভীরের। এই সিরিজেও সাকিব তানভীরের একটি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে ম্যাচ ফির ১৫ শতাংশ জরিমানা গুনেছেন।


আম্পায়ারদের জরিমানা গোনার নিয়ম নেই। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বিশ্ব ক্রিকেটের কাছে হাস্যোষ্পদ করার দায় তানভীর নেবেন কি?

খেলাধুলা বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর