ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ৭ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১৩৬৬

অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আওয়াজ উঠেছে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৫:২৭ ২৭ জানুয়ারি ২০১৯  

ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

২৯ বছরের বন্ধাত্বকাল উতরে আগামী মার্চের ১১ তারিখ অনুষ্ঠিত হবে  কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল নির্বাচন। ১৯৯০ সালের ৬ জুন সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

২০১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ জন শিক্ষার্থীর করা একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন করতে আদেশ দেন। পরের মাসে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নেয়, ২০১৯ সালের মার্চের মধ্যে এই নির্বাচন হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হওয়ার পর থেকে ডাকসু নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়।

ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সিদ্ধান্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পৌছাতে পারলেও গড়িমসি বা সিদ্ধান্তহীনতায় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়।

১৯৮৯ সালে রাকসু, ১৯৯০ সালে চাকসু ও ১৯৯২ সালে জাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনের উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও তা ভেস্তে যায়। এবার ডাকসু নির্বাচনের বাতাস বইতে শুরু করার পর দাবি উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগও নিয়েছে। কিন্তু অন্য দুটিতে প্রশাসনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ চোখে পড়েনি এখনো।

২৪ জানুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোয় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছে, রাকসু নির্বাচন উপলক্ষে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্কিত ছাত্রসংগঠনসমূহের গঠনতন্ত্র, রেজিস্ট্রেশন এবং পূর্ণাঙ্গ হল কমিটির তালিকা ২৯ জানুয়ারির মধ্যে জমা দিতে হবে। আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষরা এই বিজ্ঞপ্তিতে সই করলেও তাতে বলা হয়েছে, ডাকসু নির্বাচন–সম্পর্কিত মতবিনিময় কমিটির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের পাঠানো পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে এই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান জানান, ‘আমরা ছাত্রসংগঠনগুলোর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য জানার জন্য গঠনতন্ত্রগুলো দেখব। সংগঠনগুলোর মধ্যে কোনোটি দেশবিরোধী কার্যকলাপ বা জঙ্গিবাদে জড়িত কি না, তা-ও দেখব।’ তিনি জানান, গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা করতে কিছুদিন সময় লাগবে। এরপর কবে সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে, তা জানিয়ে দেয়া হবে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রসংগঠনগুলোর কেউ কেউ সমালোচনা করছেন।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি দেয়া যায় কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জি এম জিলানী শুভ এ বিষয়ে গণমাধ্যমে ক্ষোভ জানিয়ে বলেছেন, ‘এটা শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করার একটা পাঁয়তারা বলে মনে করি। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা তাঁদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেন, এখানে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা টেনে আনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেমন আচরণ?’

রাকসু নির্বাচনের দাবিতে ২০১৭ সাল থেকে বিভিন্ন সময় আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, বিক্ষোভ, গণস্বাক্ষর ও স্মারকলিপির মতো বেশ কয়েক ধাপে সেখানে আন্দোলন হয়েছে।

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯২ সালে সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়। ১৯৯৩ সালের ২৯ জুলাই শিক্ষক ক্লাবে ছাত্ররা শিক্ষকদের ওপর হামলা চালান। এর জের ধরে প্রশাসন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ভেঙে দেয়। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি।

২০১৩ সালে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন জাকসু নির্বাচনের ঘোষণা দেন। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম শাহনাওয়াজকে প্রধান করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। পরবর্তী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচনের তারিখও ঘোষণা করা হয়। ১৯ থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার শ মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের কেউ মনোনয়নপত্র নেননি। মনোনয়নপত্র বিতরণের শেষ দিনে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্বাচন কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

সকরারের স্বদিচ্ছার অভাব দেখিয়ে একন পর্যন্ত বন্ধ আছে জাকসু তবে ডাকসুর জোয়ারে আবারো পালে হাওয়া পেয়েছে জাকসুর ছাত্র সংগঠন গুলা। চলেছে দেওয়াল লিখন মানব বন্ধন সহ বিভান্ন কর্মসূচি।

এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে জাকসু নির্বাচনের পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। অন্যগুলোয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন হোক। তারপর আমরা পরিবেশ–পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগামী বছর জাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে ভাবব।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২৮ বছর আগে।

বিভিন্ন সময়ে ছাত্র সংগঠন গুলা চাকসুর দাবিতে আন্দোলন করলেও ফল মেলিনি এক আনা ।

গত ১৫ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে চকসু চেয়ে আবারও মানববন্ধন করে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

তার পরিপেক্ষিতে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী জানান, ‘নির্বাচনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিনষ্ট হবে না, সহিংসতা, সংঘাত, সন্ত্রাস ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটবে না—ছাত্রসংগঠনগুলো এই নিশ্চয়তা দিয়ে যদি ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে, তবেই কর্তৃপক্ষ নির্বাচন দিতে প্রস্তুত।’