ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৩০৬

কভিড ১৯ : অ্যালকোহল তত্ত্ব

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৩:১২ ১৩ এপ্রিল ২০২০  

অধ্যাপক মুনীরউদ্দিন আহমদ

ভেবেছিলাম কিছু বলব না। কারণ এ বিষয়ে মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু বলতে হলোই।

প্রথমত, অ্যালকোহল সহজলভ্য কোনো জিনিস নয় যে ইচ্ছে করলেই সবাই ব্যবহার করতে পারবে। চোরাই পথ ছাড়া অ্যালকোহল কিনতে গেলে লাইসেন্স লাগে।

দ্বিতীয়ত, আমার অনেক সুপ্রিয় অভিজ্ঞ ছাত্রছাত্রী ইতোমধ্যে কভিড ১৯ চিকিৎসায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক কর্তৃক উদ্ভাবিত অ্যালকোহল ইনহেলেশন(শ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে অ্যালকোহল ভেপার ফুসফুসে টেনে নেয়া ) তত্বের বিরুদ্ধে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে অসম্ভব সুন্দর বিশ্লেষণ প্রয়োগ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপস্থাপন করে ফেলেছেন। এখানে তাঁদের জোরালো সমর্থন করা ছাড়া আমার আর কিছু বলার নেই।

মানুষ যখন বিপদে পড়ে, মরার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, তখন মাথা কাজ করে না, যুক্তি বিবেকবুদ্ধি অসাড় হয়ে যায়, জ্ঞানবিজ্ঞানের ধার ধারে না। মৃত্যুসজ্জায় একজন বিজ্ঞানমনস্ক নাস্তিককে আল্লাহর নামে পানিপড়া দিলেও সে তা পান করবে ক্ষণকাল বেঁচে থাকার জন্য। আমাদেরও হয়েছে এখন সেই একই ডেস্পারেট অবস্থা।


অপরিশোধিত অ্যালকোহল পান করে ইরানে কয়েকশত লোক মারা যাওয়ার ঘটনাটি আমার বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী তাদের লেখায় উল্লেখ করেছে। ইরান যাওয়ার দরকার নেই। বেশ কয়েক বছর আগে ভারত বাংলাদেশেও দলবদ্ধভাবে মেথানল মিশ্রিত রেক্টিফাইড স্পিরিট(denatured)(95% ethanol) পান করে শত শত লোকের মৃত্যুকাহিনী আমি পত্রপত্রিকায় লিখেছিলাম। সেসব মৃত্যু ছিল অ্যালকোহল পানের কারণে। অার অনিয়ন্ত্রিত অ্যালকোহল ইনহেলেশনের পরিনাম কী হতে পারে একটু ভাবুন।

আমার ছাত্রছাত্রীরা লিখেছে - অ্যালকোহল পানের চেয়ে ইনহেলেশন আরও মারাত্মক। কারণ অ্যালকোহল ইনহেল করলে তা পরিপাকতন্ত্র ও লিভারকে বাইপাস করে ফুসফুসের সমূহ ক্ষতিসাধনপূর্বক ফুসফুস হয়ে সরসরি রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়। বেশি মাত্রার অ্যালকোহল মস্তিষ্কের শ্বাসপ্রশ্বাস কেন্দ্রকে (Respiratory centre) অবস(depress) করে দিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ করে দিতে পারে। এবং তা হতে পারে মৃত্যুর কারণ। অনেকে বলেন, অ্যালকোহলের মাত্রা ও ইনহেলেশনের সময় সঠিক হলে অসুবিধা নেই। কিন্তু জাতি হিসেবে আমাদের সেই মাত্রা জ্ঞান কি আছে? আর থাকলেও অ্যালকোহলের মারাত্মক ক্ষতিকর প্বার্শপ্রতিক্রিয়ার কথা কি আমরা ভাবব না!! জাতি হিসেবে আমরা বেপরোয়া, অধৈর্যশীল, স্বার্থপর, উশৃংখল, যুক্তিহীন এবং বিজ্ঞান মনস্কতাহীন।

অথরিটির ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার আগে এবং বারবার প্রদত্ত সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেই ক্লোরোকুইন ও হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে দেশেবিদেশে কী মাতামাতি শুরু হয়েছে একবার ভাবুন। বড় ধরনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ছাড়া এসব ওষুধের কার্যকারিতা ও প্বার্শপ্রতিক্রিয়ার কথা কী আমরা এখনো জানতে পেরেছি?

প্রিয় পাঠক, যেকোনো রোগে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে, কোনো প্রতিকার বা প্রতিষেধক গ্রহণ করার আগে গভীরভাবে একটু ভাবুন, নীতিনির্ধারক ও বিশেষজ্ঞদের মতামত শুনুন ও জানুন। হুজুগের বশে কিছু করতে গিয়ে জীবন বিপন্ন করবেন না। আর যাঁদের যে বিষয়ে কোনো জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে মতামত দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না প্লিজ।

 

অধ্যাপক মুনীরউদ্দিন আহমদ  #  [email protected]