ঢাকা, ২৪ এপ্রিল বুধবার, ২০২৪ || ১১ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৫৪৯

কুল চাষে ভাগ্য বদল

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:৩১ ২ জানুয়ারি ২০২১  

উন্নত জাতের কুল চাষ করে ভাগ্য বদলেছেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার কদমপুর গ্রামের কৃষক সামাউল। তার পরিবারে ফিরেছে সুদিন। পাশাপাশি এ কুল বাগানে কাজ করে খেয়ে পরে ভালো আছেন আরো ৩০ পরিবার। জেলার অন্য কৃষকেরা এ ধরনের আরো কুল বাগান করে নিজেদের ভাগ্য বদলাবেন এমনটি প্রত্যাশা কৃষি বিভাগের।


কৃষক সামাউল ওই এলাকার বিভিন্ন মালিকের কাছ থেকে সাড়ে ৩ একর কৃষি জমি লিজ নিয়ে এ বছরের প্রথমদিকে শুরু করেন উন্নত জাতের কুল চাষ। তিনি ওই জমিতে ২ হাজার ৮ শ’ চারা লাগিয়েছেন। চাষ শুরুর পর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বাগানের কুল গাছে ফল ধরেছে। কুল বাগানে ছোট ছোট গাছে কুল ভরে গেছে। মাত্র ২ লাখ টাকা খরচ করে কুল বাগানের কৃষক সামাউল এখান থেকে ১৫ লাখ টাকার কুল বিক্রি করার আশা করছেন।


বলসুন্দরী বা কাশ্মিরী জাতের ছাড়া এ কৃষক সিডলেসসহ ৪ প্রকার কুল চাষ করেছেন। এসব খেতে মিষ্টি, সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। সামাউলের এ সাফল্যে ইতোমধ্যেই এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এলাকার অনেক যুবক কুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

 

মুকসুদপুরের কমলাপুর গ্রামের মেহেবুবা হোসেন, মেহের মামুন, দাসের হাট গ্রামের পরেশ বিশ্বাস এসেছেন সামাউলের কুল ক্ষেত দেখতে। তারা এ বাগান দেখে অভিভূত। তারাও তাদের জমিতে এ ধরনের কুল বাগান করবেন। জানান, ওরা এ কুল বাগানের কথা শুনে দেখতে এসেছেন। আগামী বছর এখান থেকে কুলের চারা ও পরামর্শ নিয়ে কুলের চাষ করবেন।

 

কৃষক সামাউল জানান, সাড়ে ৩ একর জমিতে কুল চাষ করেছি। এ বাগানে নিয়মিত ৩০ জন লোক কাজ করেন। অনেকে আমার কাছে পরামর্শ নিতে আসে। আমি তাদের কুল চাষ করতে বলি। আমার চাষকৃত কুল নতুন জাতের। এতে অনেক বেশী ফলন। কুলের চারা বানিয়েছি। কেউ চারা ও পরামর্শ নিতে আসলে আমি তাদের পরামর্শ দেই। বিশেষ করে যারা বেকার রয়েছেন, ওদের আমি পরামর্শ দিয়ে থাকি এ জাতের কুল চাষ করতে। 

 

তিনি বলেন, একদিকে নিজের বেকারত্ব ঘুচবে, পাশাপাশি আরো অনেককে কুল বাগানে কাজ দিতে পারবেন। আমি বেকার যুবকদের কম দামে চারা দেয়াসহ পরামর্শ দেয়ার কথা এলাকায় জানিয়ে দিয়েছি। আমার এখান থেকে কুলের চারা নেয়ার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন আসছেন। তাদের কাছে আমি চারা বিক্রি করেও বেশ অর্থ উপর্জন করতে পারছি। আমি এ কুলের চাষ করে বেশ লাভবান।


বেশ কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয় কুল বাগানে। তারা জানান, এ বাগানে কাজ করে প্রতিদিন যা আয় করি তাতে আমরা পরিবার নিয়ে খেয়ে পরে ভালো আছি। এখানে গাছে যেভাবে কুল ধরেছে তাতে মন ভরে যায়। আগামীতে আমরাও এ জাতের কুল বাগান করবো বলে আশা করছি। কীভাবে চাষাবাদ করতে হয় তা তো শিখেই যাচ্ছি। যা পরবর্তীতে আমাদের কাজে লাগবে। তখন আর অন্যের জমিতে নয়, নিজের জমিতেই শ্রম দিতে পারবো। অন্যদেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যাবে।


মুকসুদপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, কৃষক সামাউল আমাদের একটি মডেল। তার সাফল্য দেখে অনেক শিক্ষিত বেকার এ পেশায় আসছে। শিক্ষিত লোক যদি কৃষিকাজে আসে তাহলে কৃষির সম্প্রসারণ হবে অনেক বেশী। বাংলাদেশ কৃষির সম্ভবনা আরও বেগবান হবে।

 

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, কৃষকেরা যদি এ কুল চাষে উদ্বুদ্ধ হন, তাহলে আমাদের দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে। কৃষক উপকৃত হবেন। আমি সবাইকে এরকম বাগান করার পরামর্শ দিচ্ছি।