ঢাকা, ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০
good-food
১৬৯৫

ডাকসুর ইতিহাস

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৮:২৫ ১২ মার্চ ২০১৯  

২৮ বছর পর হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। নতুন ভিপি নির্বাচিত কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুর। জিএস হয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী

ডাকসু নির্বাচনের অতীত ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই জানা নেই। ১৯২১ সালে ঢাবি প্রতিষ্ঠার এক বছর পরই প্রতিষ্ঠিত হয়ে এটি। ১৯২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নামে প্রতিষ্ঠিত হয় সেটি।

১৯৫৩ সালে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে আগের নাম পরিবর্তন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ(ডাকসু) রাখা হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন, সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এটি। ৫২ ভাষা আন্দোলন, ৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯ গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে ৭১ স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ৯০ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে চালিকাশক্তির ভূমিকায় অবতীর্ন হয় এ সংসদ।

প্রথম নির্বাচন

১৯২৪-২৫ সালে ডাকসুর প্রথম ভিপি মনোনীত করা হয়। ১৯৫৩ সালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসে এর প্রথম নিবার্চন হয়। ডাকসুর প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন এস এ বারী এবং জিএস নির্বাচিত হন জুলমত আলী খান।

মোট নির্বাচন

প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন হয়েছে মোট ৩৬বার। এর মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশে ডাকসু নির্বাচন হয়েছে মাত্র সাতবার। ২০১৯ সালের আগে সবশেষ ১৯৯০ সালে হয় নির্বাচন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ডাকসুর সহসভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এবং সাধারণ সম্পাদক হন মাহবুবুর জামান। ওই বছরের ৬ জুন নির্বাচন হয়। সেবার ডাকসু ও ১৮টি আবাসিক হল সংসদের নির্বাচন হয়। স্বাধীনতা লাভের পর সেই নির্বাচন ছিল সপ্তম। ওই নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ২৮ হাজার ৬৯০ জন। তবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ১৮ হাজার ৩৪ জন। ডাকসুর ২০টি পদে ৪৮৯ জন এবং ১৪টি পদে ১০৪০ জন প্রার্থী সেদিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

ডাকসু সংগ্রহশালা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে ডাকসু ভবন। এর নিচতলায় আছে সংগ্রহশালা। বাংলাদেশের সামগ্রিক ইতিহাসের স্থিরচিত্র সংরক্ষণ করা হয়েছে এখানে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসবেষ্টিত বিভিন্ন তথ্য ছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের ছবি, লেখা, খবরের কাগজের সংগ্রহ রয়েছে।

ডাকসু ভবনের দেয়ালে রয়েছে একটি ম্যুরাল চিত্র। সেটি  চেতনায় একুশ নামে পরিচিত। চিত্রটিতে চারজন ভাষাশহীদের ছবি রয়েছে। সংগ্রহশালায় প্রবেশ করে বরাবর সামনে তাকালে দেখা যাবে ঐতিহাসিক আমতলা। সেখানে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে প্রতিবাদী ছাত্র সভা হয়। এখান থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ছাড়া আছে ঢাবি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সংরক্ষিত ছবি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র দুদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর রাজাকারদের সহায়তায় পাকহানাদারদের হাতে শহীদ হন।

ডাকসুর গঠনতন্ত্র

ডাকসুর গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে-নির্বাচনের পর মাত্র এক বছর পর্যন্ত এ সংসদের কার্যকারিতা থাকবে। এক বছর পর নির্বাচন না হলে পরের তিন মাস পর্যন্ত এর কার্যকারিতা থাকবে। এরপর আপনাআপনিই বাতিল হয়ে যাবে। কেবল নিয়মিত শিক্ষার্থীরাই ডাকসুর কর্মকর্তা ও সদস্য হতে পারবেন। কর্মকর্তা নির্বাচিত হওয়ার পর ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তার পদ বাতিল হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ পুনরায় ওই পদে নির্বাচনের উদ্যোগ নেবেন।

এছাড়া গঠনতন্ত্রে উল্লেখ আছে-

১.         যেসব শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষ স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ঢাবিতে ভর্তি হয়ে অনার্স/মাস্টার্স/এমফিল পর্যায়ে অধ্যয়নরত আছেন, যারা বিভিন্ন আবাসিক হলে আবাসিক/অনাবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে সংযুক্ত রয়েছেন এবং তফসিল ঘোষণার দিন যাদের বয়স ৩০ বছরের অধিক হবে না, কেবল তারাই ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটার হতে পারবেন। সব ভোটারই প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।

২.         সান্ধ্যকালীন বিভিন্ন কোর্সে অধ্যয়নরত কোনো শিক্ষার্থী ভোটার হতে পারবেন না।

৩.         সরকারি/বেসরকারি অথবা দেশে বা বিদেশের যেকোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো শিক্ষার্থী ভোটার হতে পারবেন না।

৪.         অধিভুক্ত কলেজের কোনো শিক্ষার্থী ভোটার হতে পারবেন না।

৫.         গঠনতন্ত্রের/প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আবাসিক হলেই ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে।

৬.         সময়ের চাহিদা বিবেচনায় ডাকসু ও হল সংসদে কয়েকটি সম্পাদক ও সদস্য পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।