ঢাকা, ২৭ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৭৭৭

ড্রাইভার মালেকের যত অজানা কাহিনী

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৯:৪৩ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০  

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তৃতীয় শ্রেণির সাধারণ কর্মচারী তিনি। চালান ডিজির গাড়ি। এ পদে চাকরি করেই অগাধ সম্পদের মালিক আব্দুল মালেক। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণে অর্থ গচ্ছিত আছে তার। অবশেষে রোববার ভোরে দেশব্যাপী বহুল আলোচিত-সমালোচিত এ কর্মচারীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

 

এরপরই আরও গুমর ফাঁস হচ্ছে। মালেকের স্ত্রীর নামে রাজধানীর দক্ষিণ কামারপাড়ায় দুটি ৭তলা বিলাসবহুল ভবন, ছেলের নামে তুরাগে ১৫ কাঠা জমিতে ডেইরি ফার্ম, ধানমন্ডির হাতিরপুলে সাড়ে ৪ কাঠা জমিতে নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন রয়েছে। ঢাকায় তার ২৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে।


স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, মালেক দীর্ঘদিন অধিদফতরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। বিশেষ করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য তার অন্যতম কাজ। কোনো কর্মকর্তা সুপারিশ না শুনলে তাকে ঢাকার বাইরে বদলিসহ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। নানা পন্থায় বিভিন্ন পদে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন নিজের ২৭ জন আত্মীয়কে। তার বিরুদ্ধে দুদকেও অভিযোগ আছে।

 

কর্মকর্তারা চক্ষুলজ্জার ভয়ে এসব বিষয় কখনও প্রকাশ করেননি। অধিদফতরের গাড়ির চালক হয়েও মালেক পাজেরো জিপ ব্যবহার করেন। স্বাস্থ্যের ক্যান্টিন প্রিয় পরিচালনা করেন তিনি। তার রয়েছে তেল চুরির সিন্ডিকেট। অধিদফতরের গাড়ির চালকদের তেল চুরির অংশ তাকে দিতে হয়। 

 

মালেক নিজে গাড়ি চালক হলেও মহাপরিচালকের জন্য বরাদ্দকৃত একটা সাদা পাজেরো জিপ গাড়ি নিয়মিত ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের আরও দুটি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন। 

 

র‌্যাব জানায়, আব্দুল মালেক ওরফে ড্রাইভার মালেকের বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত রয়েছে। র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, সম্প্রতি আমাদের প্রাথমিক গোয়েন্দা অনুসন্ধানে রাজধানীর তুরাগ এলাকায় মালেকের (৬৩) বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র, জাল টাকা ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ পাওয়া যায়। 

 

তিনি বলেন, মালেক ওই এলাকায় সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শক্তির মহড়া ও দাপট দেখিয়ে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছেন। তার দাপটে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ওর ভয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষের মনে সবসময় আতঙ্ক বিরাজ করে।

 

গতকাল ভোরে র‌্যাব-১ এর একটি দল তুরাগ থানাধীন কামারপাড়ার বামনেরটেক এলাকার বাসা নম্বর-৪২, হাজী কমপ্লেক্স থেকে মালেককে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে বিদেশি পিস্তল, ম্যাগজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দেড় লাখ বাংলাদেশি জাল নোট, ল্যাপটপ ও মোবাইল জব্দ করা হয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ভিত্তিতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনুসন্ধানে তার আয়-ব্যয়ের সঙ্গে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মান ও সম্পদের বিস্তর অসামঞ্জস্যতা উঠে আসে।

 

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, মালেক পেশায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিবহন পুলের একজন চালক। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাস। ১৯৮২ সালে সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পে চালক হিসেবে যোগদান করেন। পরে ১৯৮৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিবহন পুলে চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি প্রেষণে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদফতরে কর্মরত। 

 

লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, মালেকের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও জাল টাকার ব্যবসায় জড়িত থাকা এবং উদ্ধারের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট আইনে পৃথক দুটি মামলা হবে। তাকে রাজধানীর তুরাগ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

অপরাধ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর