ঢাকা, ২৪ জুন মঙ্গলবার, ২০২৫ || ১০ আষাঢ় ১৪৩২
good-food
৪৫

বি-টু বোমারু বিমান কী, কীভাবে কাজ করে?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:১৬ ২৩ জুন ২০২৫  

ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাতের মধ্যে গত শনিবার রাতে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হামলায় স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এই অভিযানকে একটি "দর্শনীয় সামরিক সাফল্য" হিসাবে বর্ণনা করেছেন। ইরানের ফোর্দো, নাতাঞ্জ এবং ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে এই হামলা চালায় আমেরিকা।

 

যদিও বলা হচ্ছিল ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনা ভূপৃষ্ঠের এতটা গভীরে যে- শুধুমাত্র আমেরিকার "বাঙ্কার বাস্টার" বোমা দিয়েই এটাতে আঘাত করা সম্ভব। প্রায় ১৩ হাজার কেজির এই "বাঙ্কার বাস্টার" বোমা রয়েছে আমেরিকার কাছে এবং এটিকে বহন করে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম এমন বিমানও রয়েছে শুধুমাত্র আমেরিকার কাছে, যার নাম 'বি-টু স্টেলথ বোমারু বিমান'। 

 

ইরানে পরিচালিত অভিযান নিয়ে রোববার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আমেরিকা জানিয়েছে- এই অভিযানে ১২৫টি যুদ্ধ বিমান অংশ নিয়েছে, যার মধ্যে এই বি-টু স্টেলথ বোমারু বিমানও ছিল। এই 'বি-টু স্টেলথ বোমারু বিমান'কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে উন্নত সামরিক সরঞ্জামগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কারণ ভেদ করতে কঠিন এমন লক্ষ্যবস্তুতে গোপনে এবং নির্ভুলভাবে আক্রমণ করতে পারে এই বিমান।

 

মহাকাশ এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সংস্থা নর্থরপ গ্রুমম্যান এই বিমানের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। বিমানটি সম্পর্কে তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছে- "বি-টু স্টেলথ বোমারু বিমান, দূরপাল্লার আক্রমণ পরিচালনার জন্য মার্কিন বিমান বাহিনীর অস্ত্রাগারের একটি অন্যতম প্রধান অস্ত্র এবং যুদ্ধে বেশি সময় ধরে টিকে থাকা বিশ্বের বিমানগুলির মধ্যে একটি।"

 

মার্কিন বিমান বাহিনী তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছে- "বি-টু একটি মনুষ্যবাহী বোমারু বিমান, যেটি সাবলীলভাবে যে কারও আকাশসীমায় অনুপ্রবেশের দক্ষতা রয়েছে। রাডারে সবচেয়ে কম দৃশ্যমান বা এর স্টেলথ বৈশিষ্ট্যের কারণে বিমানটি সবচেয়ে সুরক্ষিত শত্রু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে পারে এবং শত্রুর সবচেয়ে মূল্যবান এবং গভীরভাবে সুরক্ষিত লক্ষ্যবস্তুতেও হামলা করতে পারে।"

 

কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিশ্বের যে কোনও স্থানে পৌঁছাতে পারে 

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের মতে, প্রতিটি মার্কিন বি-টু এর দাম প্রায় দুইশো কোটি ডলার, ফলে এটি বিশ্বে এখন পর্যন্ত নির্মিত সবচেয়ে ব্যয়বহুল সামরিক বিমানগুলোর একটি। জ্বালানি রিফুয়েলিং ছাড়াই বোমারু বিমানটি টানা ৬,০০০ নটিক্যাল মাইল বা ১১,১১২ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে, এবং উড়ন্ত অবস্থায় এটি জ্বালানি রিফুয়েলিং করতে পারে, ফলে মার্কিন ঘাঁটি থেকে এক টানা উড়ে গিয়ে এটি বিশ্বের যে কোনও স্থানে আক্রমণ করতে সক্ষম।"

 

নর্থরপ গ্রুমম্যানের মতে, আন্তঃমহাদেশীয় রেঞ্জের কারণে এটি "কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিশ্বের যেকোনো স্থানে পৌঁছাতে পারে"। আফগানিস্তান, ইরাক এবং লিবিয়ায় মার্কিন সামরিক অভিযানেও এই বি-টু বোমারু বিমান ব্যবহার করা হয়েছিল।

 

বিমানটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে- "১৯৯৯ সালে কসোভোতে ন্যাটো পরিচালিত 'অপারেশন অ্যালাইড ফোর্স' অভিযানে এই বিমান প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল। দুটি বি-টু বিমান যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরির হোয়াইটম্যান বিমান ঘাঁটি থেকে ৩১ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে উড়েছিল। কসোভোতে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করেছিল এবং তারপর সরাসরি ঘাঁটিতে ফিরে এসেছিল।"

 

কোনও যুদ্ধ বিমানের সবচেয়ে দীর্ঘতম সময় ধরে উড়ার রেকর্ডও রয়েছে বি-টু স্টেলথ বোমারু বিমানের। "২০০১ সালে, 'স্পিরিট অফ আমেরিকা' এবং আরও পাঁচটি বি-টু স্টেলথ বোমারু বিমান আফগান আকাশসীমায় অভিযান চালিয়েছিলো। এই অভিযানের মোট উড্ডয়নকাল ছিলো ৪৪ ঘণ্টা, যা একটি রেকর্ড।"

 

মার্কিন বিমান বাহিনীর দাবি বি-টু বিমানগুলিকে অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা শনাক্ত করা, নজরদারি করা এবং আক্রমণ করা কঠিন। কারণ এর সীমিত ইনফ্রারেড, অ্যাকোস্টিক, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক এবং রাডার সংকেত ফাঁকি দেওয়ার কৌশলের কারণে বিমানটি নজরদারি ব্যবস্থায় প্রায় অদৃশ্য থাকে।

 

"প্রতিরক্ষা নজরদারি ব্যবস্থা বা রাডারে এই বিমান প্রায় অদৃশ্য থাকার কৌশলটি কী, তা এখনও গোপনীয়, তবে, বি-টু নির্মাণে ব্যবহৃত উপকরণ, এর বিশেষ আবরণ এবং ডানার নকশার কারণে এটি নজরদারি ব্যবস্থায়ে ফাঁকি দিতে পারে" এমনটাই জানিয়েছে বিমানটির নির্মাতা সংস্থা নর্থরপ গ্রুমম্যান। এই বিমান চালাতে দুজন পাইলট থাকে- "বাম আসনে একজন পাইলট এবং ডানদিকে মিশন কমান্ডার।"

 

ভারী বোঝা বহনের সক্ষমতা 

বি-টু স্টেলথ বোমারু বিমানটি ২১ মিটার লম্বা এবং ৫ মিটার উঁচু এবং ডানার দৈর্ঘ্য ৫২ মিটার যা একটি ফুটবল মাঠের দৈর্ঘ্যের অর্ধেকের সমান। এটি উচ্চ সাব-সনিক গতি বা শব্দের গতির কাছাকাছি গতি এবং ১৫,০০০ মিটারেরও বেশি উচ্চতায় উড়তে পারে। এছাড়া প্রায় ২০ টনের ভার বহন করতে পারে বি-টু স্টিলথ বোমারু বিমান।

 

ইরানে চালানো মার্কিন অভিযানে এই বিমান ব্যবহার করে নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করতে পেরেছে বলে দাবী করেছে আমেরিকা। উপগ্রহ চিত্রেও দেখা গেছে ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনা এলাকায় বোমার আঘাতে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তবে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি।
 

বিশ্ব বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর