ঢাকা, ২৪ এপ্রিল বুধবার, ২০২৪ || ১০ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৭২৩

উত্তরে বানের থাবা

ত্রাণের জন্য হাহাকার

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১২:১৪ ২২ জুলাই ২০১৯  

‘৮ দিন হইলো নদীত বাড়ি ভাঙ্গি গেইছে, নিরুপায় হয়া ব্যাটা, ব্যাটার বউ আর ছোট দুকনা ছাওয়া নিয়ে নাওতে থাকি নাওতে খাই। মেম্বর-চেয়ারম্যান কেউ হামার খোঁজ না নেয়।’ কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নের খরখরিয়া এলাকার মৎস্যজীবী সুনীল চন্দ্রের স্ত্রী যাত্রী বালা।

এভাবেই সীমাহীন দুঃখ-কষ্টে দিন কাটছে বানভাসি মানুষের। বিভিন্ন স্থানে ত্রাণের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। ত্রাণের আশায় নৌকা দেখলেই ছুটে যান তারা। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানিতে দাঁড়িয়ে থাকেন।

সরকারিভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আশ্রয় কেন্দ্রে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও বাঁধে বা উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়া কিংবা বন্যায় পানিতে আটকে পড়া মানুষ ত্রাণ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও বলছেন তারা পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দ পাচ্ছেন না। গবাদিপশু ও গোখাদ্য নিয়েও চরম বিপাকে পড়েছেন বন্যার্তরা।

অনেকে কোরবানির ঈদের জন্য লালনপালন করা গরু লোকসানে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এদিকে প্রকৃতির ডাক এলেই চরম ভোগান্তিতে পড়েন বানভাসি নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। অনেকে পানিতেই সারছেন প্রাকৃতিক কাজ। ফলে ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগবালাই ছাড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে ছয় জেলায় আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বন্যায় ৭১ জনের প্রাণহানি হল। বিভিন্ন জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ লাখ পরিবার।

এদিকে পানি নামা অব্যাহত থাকায় বিভিন্ন জেলায় বন্যার উন্নতি হচ্ছে। বন্যাপ্রবণ দুই অববাহিকা ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং মেঘনায় এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কিন্তু এরপরও এখনও ২৫ জেলা কমবেশি বন্যাকবলিত। বিশেষ করে উত্তরের বিভিন্ন জেলায় এখনও বড় ধরনের বন্যা চলছে। নদীগুলোর নাব্য কমে যাওয়ায় বানের পানি নামার হার আগের তুলনায় কম।

ফলে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে ধীরগতিতে। উত্তরের জেলাগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম নীলফামারীতে বন্যার পানি অনেকটাই নেমে যায়। কিন্তু দু’দিন ধরে ভারতের সিকিমে বৃষ্টি হওয়ায় তিস্তায় পানিপ্রবাহ বেড়ে গেছে। এতে ডালিয়া পয়েন্টে রোববার পানি আবার বিপদসীমার উপরে চলে গেছে। ফলে ওই জেলার নিুাঞ্চল নতুন করে আবারও বন্যার কবলে পড়েছে। অপরদিকে টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী ও মুন্সীগঞ্জসহ মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোয় বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে।

আবহাওয়া ও বন্যা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিন ভারতের মেঘালয়, আসাম ও ত্রিপুরায় ব্যাপক বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস নেই। ফলে উত্তরের জেলাগুলোয় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকবে। কিন্তু বানের সেই পানি নেমে আসছে মধ্যাঞ্চলে। এ কারণে এই অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে আরও এক সপ্তাহ উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা বন্যার পানির নিচে থাকবে।