ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৭১২

পুঁথির গল্পের মতো অশ্রুমতী তাঁর কথা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:০৯ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০  

তিনি যখন তাঁর পিতার কথা বলেন তখন তা হয়ে ওঠে সারা বাঙালি জাতির, সারা বাংলাদেশের। ১৫ আগস্টের পর যাদের গল্প শোক, দুঃখ আর সংগ্রামের। কি অপার বিস্ময় এ ঘটনার মধ্য দিয়ে যারা বাঙালি জাতির ইতিহাস করেছে কলংকিত, যারা মুছে ফেলতে চেয়েছিল বাংলা ও বাঙালির পরিচয়; সেখানে বেঁচে যাওয়া দুই সৌভাগ্যের নাম শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।  

 

যাদের জেগে ওঠা ছাইয়ের ভেতর থেকে ফিনিক্স পাখির জন্মকথা। কি অপরিসীম এক লড়াই। দেশে না ফেরার অনিশ্চয়তা, আশংকা, বেঈমানদের ষড়যন্ত্র, শোষকের রক্তচক্ষু। তার থেকেও মন উচাটন ধানমন্ডির সেই ৩২ নম্বর বাড়িটির জন্য। যে বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাস, নেতৃত্বের ইতিহাস। যে বাড়ি বাঙালির মুক্তির সনদের প্রতীক, বাংলাদেশের আত্মপরিচয়ের সূতিকাগার। 

 

তাঁদের স্বপ্নের আলোয়, হাসিতে মিশে থাকা বসন্ত দিনগুলো। ফেরা হবে? পিতা-মাতা হারানোর কঠিন শোক বুকে ধারণ করে অহর্নিশ সীমাহীন যন্ত্রণা সাথে নিয়ে পথ চলেছেন তারা। ছোট্ট শেখ রাসেলের প্রিয় হাসু বুবু আর দেনা আপা কেমন করে ফিরবে ভাইয়ের রক্তের স্রোত মাড়িয়ে। চোখ ভেসে গিয়েছে পানিতে, বুক দুমড়েমুচড়ে গিয়েছে ব্যাথায়। মন ভেঙে পড়ছে বারবার। 

 

তবু সাহস ছিল, ছিল বাংলার দুঃখী মানুষদের কাছে ফেরার এক অদম্য ইচ্ছাশক্তি। দুই বোন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছেন। দিনের পর দিন যন্ত্রণায় কাতর হয়েছেন। তবু শক্ত হয়ে একে অন্যের সাথে ছায়া হয়ে থেকেছেন। মাথার ওপর পিতা-মাতার ছায়া নেই, সান্ত্বনার ভাষা নেই,পাশে নেই কেউ, নেই স্বজন-পরিজনদের স্নেহের বেষ্টনি। চারিদিকে নানা অসহযোগিতা, বিভিন্ন ষড়যন্ত্র।  

 

শত বাধা সত্বেও প্রাণ হারানোর ভয় তুচ্ছ করে বাংলার জনগণের জন্য দেশে ফিরেছেন। ফেরার পথ যেমন ছিল কঠিন, তেমনি জটিল ছিল ফেরার পরের প্রেক্ষাপট। প্রবেশ অধিকার ছিল না তাদের ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে। যে বাড়ি একসময় মুখরিত ছিল জন কোলাহলে, মানুষের ভীড় সমাগমে, এক লহমায় সেই বাড়িতে  আছড়ে পড়ল সুনসান নীরবতা। সেই বাড়িটির সঙ্গে বাংলার মানুষের ভাগ্যও যেন স্থবির হয়ে গিয়েছিল, থেমে গিয়েছিল। 

 

তবু পিতার আর্দশ ও মূল্যবোধকে  ধারণ করে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার নেতৃত্বের গুরুভার মাথায় তুলে নিয়ে বাংলার মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে, এক উন্নত ভবিষ্যৎ বির্নিমাণে, এক ক্ষুধা ও দ্রারিদ্র্যমুক্ত জাতি গঠনের লক্ষ্যে অটুট থেকে মানুষের মাঝে মিশে রয়েছেন, মানুষের মাঝে জুড়ে রয়েছেন অতি আপন হয়ে। বাংলার দুঃখী মানুষের কথা তাঁরা ছাড়া আর নিবিড়ভাবে কে ভাবতে পারতো! 

 

জাতির পিতার স্মৃতির ঘ্রাণকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ করে ‘সোনার বাংলাদেশ’ নির্মাণের দৃঢ অঙ্গীকারে জাতির দৃপ্ত পথচলা এ আলোর মানুষদের সাথে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই বরেণ্য আত্মজার বাংলার আজ ও আগামী। বাংলার ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। যাদের হাত ধরে বারবার ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। পথ খুঁজে পায় অতল অন্ধকারে। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা অশেষ, ভালোবাসা নিরন্তর।  

 

লেখক: নবনীতা চক্রবর্তী
শিক্ষক, সংস্কৃতি কর্মী