ঢাকা, ২৫ মে রোববার, ২০২৫ || ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
good-food
২২

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক, যা বললো বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৫:০৯ ২৫ মে ২০২৫  

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার বাসভবন ও রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠকের আলোচনা ও দাবি বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপির প্রতিনিধি দলের নেতারা। শনিবার (২৪ মে) রাতে বৈঠক শেষে দলগুলোর প্রতিনিধিরা সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।

 

যা বলছেন বিএনপি নেতারা

বিএনপি নেতারা বলেছেন, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সংস্কার কার্যক্রম অবিলম্বে সম্পূর্ণ করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দ্রুত একটি রোডম্যাপ প্রদানের দাবি জানিয়েছেন তারা। বৈঠকে তিনটি বিষয় প্রধান্য পেয়েছে উল্লেখ করে নেতারা বলেন, নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার এই তিনটি মূল এজেন্ডা নিয়ে আজকে আলোচনা হয়েছে। তবে আমরা পূর্বে অবগত না থাকায় লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেছি।

 

বৈঠক করে বিএনপি সন্তুষ্ট কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতারা বলেন, এখনো প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় হয়নি। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস ব্রিফিংয়ের পর প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে জানা যাবে। তখন সন্তুষ্ট কিনা বলতে পারবো। এখানে আমাদের দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে।

 

 

চলমান রাজনৈতিক সংকট নিয়েও প্রধান উপদেষ্টার সাথে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে সালাউদ্দিন বলেন, বিএনপি কখনো প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি। বরং বর্তমান সরকারকে প্রথম দিন থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে বিএনপি। বিএনপি নেতারা জানান, নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও দুই ছাত্র উপদেষ্টাকে বাদ দেওয়ার জন্য আজকেও তারা লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন।

 

যা বলেছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা

সংস্কারের পর জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে জামায়াতের আমির বলেছেন, নির্বাচনের আগে অবশ্যই সংস্কার এবং দৃশ্যমান বিচারের প্রক্রিয়া থাকতে হবে। কারণ, সংস্কারের আগে নির্বাচন হলে জনগণ তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না।

 

সব সংস্কারও এই সরকারের পক্ষে করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাত্র ৫টা বিষয়ে সরকার সংস্কারে হাত দিয়েছেন। সুতরাং এতটুকু নিষ্পত্তি হওয়া উচিত সন্তোষজনকভাবে। এছাড়া জুলাই প্রক্লেমেশনও এই সংস্কারের সাথে জড়িত।

 

“আবার সব সংস্কার এই সরকারের পক্ষে করা সম্ভবও নয়” বলেও উল্লেখ করেন তিনি। দেশ ভালো থাকলে আমরা সবাই ভালো থাকবো উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, হঠাৎ পাল্টে যাওয়া রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন মুহাম্মদ ইউনূস।

 

“আমরা বলেছি, দুইটা বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকার। নির্বাচনটা কখন হবে? আপনি যে সময়সীমা দিয়েছেন, এর ভেতরে জনগণের কোনো বড় ধরনের ভোগান্তি না হয়ে একটা কমফোর্টেবল টাইমে নির্বাচন হওয়া উচিত। আর দুই নম্বর হলো, নির্বাচনের আগে সংস্কার ও দৃশ্যমান বিচারের কিছু প্রক্রিয়া জনগণের সামনে আসতে হবে। সংস্কার শেষ না করে যদি নির্বাচন হয়, জনগণ এই নির্বাচনে তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না।”

জামায়াতের আমির বলেন, সমাজের অস্থিরতা আপতদৃষ্টিতে তার সমাধান হয়েছে। আর ২টি রোডম্যাপ প্রকাশ করলে এটি স্থায়ী সমাধান হয়ে যাবে। বিএনপি যে তিনজন উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়েছে, সে বিষয়ে জামায়াতের অবস্থান জানতে চান সাংবাদিকরা।

 

উত্তরে তিনি বলেন, “পদত্যাগ চাইলো বিএনপি, আর ফতোয়া দেবে জামায়াতে ইসলামী। এটা কি মানায়? যারা পদত্যাগ চেয়েছে, তারাই ব্যাখ্যা করবে। আমরা কারও কোনো পদত্যাগ চাইনি।” রাত সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধি দলে রয়েছেন সংগঠনের আমির ডা. শফিকুর রহমান এবং নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

 

যা বলেছেন এনসিপির নেতারা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জুলাই গণহত্যার বিচার এবং সংস্কার প্রক্রিয়ার চলমান রাখার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি। দলটির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, সরকারের কাছে জুলাই গণহত্যার বিচার বা জুলাই সনদ, সংস্কার এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছে এনসিপি।

 

নাহিদ ইসলাম বলেন, বৈঠকে শেখ হাসিনার আমলে হওয়া সকল নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে এনসিপি। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ওই নির্বাচনগুলো ছিল ডামি নির্বাচন। অথচ সেই নির্বাচন নিয়ে এখন বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। সুতরাং বিশৃঙ্খলা এড়াতে সেই নির্বাচনগুলো আইনগতভাবে অবৈধ ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে তারা।

 

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল নয়, জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা ছাত্র এবং সাধারণ মানুষের আকাঙ্খা পূরণে প্রধান উপদেষ্টাকে যেকোন সিদ্ধান্ত বিবেচনায় রাখার কথা জানিয়েছেন তারা।

 

এসময় সাংবাদিকের করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার হতাশার কারণ, নতুন বাংলাদেশের গঠনের যে প্রতিশ্রুতি বা আকাঙ্খা নিয়ে ড. ইউনূস সরকারে এসেছেন। সে প্রতিশ্রুতি থেকে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল সরে এসেছেন। যার ফলে, সংস্কার বা নতুন বাংলাদেশ গঠনে কাজ করতে ব্যহত হচ্ছে বলে মনে করছেন। এতে তিনি হতাশ হচ্ছেন। আমরা বলেছি, কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য নয়, তিনি যেন জনগণের জন্য কাজ করেন।

 

এসময় নাহিদ বলেন, জুলাই মাসের মধ্যে জুলাই সনদ আসবে বলে প্রধান উপদেষ্টা তাদের আশ্বস্ত করেছে।

রাজনীতি বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর