ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৮৪৬

বাঁচানো গেল না অধ্যক্ষের লালসার শিকার মাদ্রাসাছাত্রী রাফিকে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:১৮ ১০ এপ্রিল ২০১৯  

দেশবাসীর দোয়া আর চিকিৎসকদের সর্বাত্মক চেষ্টার পরেও ফেরানো গেল না রাফিকে। অধ্যক্ষের লালসার শিকার ফেনীর সোনাগাজীর অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি সবাইকে কাঁদিয়ে চিরতরে বিদায় নিল।

বুধবার রাত সাড়ে ন’টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন ঢামেক বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসক অধ্যাপক রায়হানা আওয়াল।

 

ওই অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী ঢামেক হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। তাঁর শরীরের ৭৫ শতাংশ আগুনে পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মেয়েটির ফুসফুসকে স‌ক্রিয় করতে গতকাল মঙ্গলবার অস্ত্রোপচার করা হ‌য়।

 

রাফি এ বছর আলিম পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন। সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী ছিলেন তিনি। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে ‘শ্লীলতাহানিরঅভিযোগ এনে গত মার্চে সোনাগাজী থানায় মামলা করে তার পরিবার।

 

সেই মামলা তুলে না নেয়ায় অধ্যক্ষের অনুসারীরা গত শনিবার পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে ডেকে নিয়ে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে মেয়েটির পরিবারের অভিযোগ।

অগ্নিদগ্ধ রাফিকে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখান থেকে ফেনী সদর হাসাপাতালে এবং পরে শনিবার রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

 

শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় সোমবার তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। ওইদিনই তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা রাফির শারীরিক অবস্থা নিয়ে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। বিভিন্ন মেডিকেল রিপোর্ট পাঠানোর পর ভিডিও কনফারেন্সে কথা হয় তাদের। এই অবস্থায় নুসরাত ওরফে রাফিকে না পাঠানোর পক্ষে মত দেন সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা।

 

দুপুরেও নুসরাতের শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে সামন্ত লাল সেন বলেছিলেন, সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন ইউনিটের চিকিৎসকদের সাথে কথা হয়েছে আমাদের। রোগীর যে শারীরিক অবস্থা, তাতে সিঙ্গাপুরে নেয়ার জন্য ৫ ঘণ্টা এয়ার জার্নি করার মতো অবস্থা তার নাই।

নুসরাত ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে পুরো ঘটনা বর্ণনা করেছেন।

 

সেখানে তিনি বলেছেন, গত শনিবার সকালে তিনি ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রে আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিতে গেলে তাকে ছাদে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বোরকা পরা চার নারী তাকে মামলা তুলে নিতে বলে। তাতে রাজি না হওয়ায় ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

 

জবানবন্দিতে নুসরাত বলেন, বোরকায় মুখ ঢাকা থাকায় ওই চারজনের কাউকে তিনি চিনতে পারেননি। তবে এক পর্যায়ে তাদের একজন আরেকজনকে শম্পা নামে ডেকেছে, সেটা তার মনে আছে।

 

এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাসহ দশজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে সিরাজের ভাগ্নি উম্মে সুলতানা পপিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

 

তার বিষয়ে সোনাগাজী মডেল থানার পরিদর্শক কামাল হোসেন বলেন, জবানবন্দিতে নাম আসা শম্পাকে খুঁজতে গিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নুসরাতের সহপাঠী পপিকে আটক করা হয়েছে। নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা আছে কি না এবং এ ঘটনায় জড়িতদের সন্ধান পেতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

 

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা এখন রিমান্ডে আছেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা এখন রিমান্ডে আছেন স্থানীয়রা জানান, শ্লীলতাহানির মামলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার বিচারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করলে তাতে বাধা দিয়েছিলেন পপি। অধ্যক্ষের পক্ষে মানববন্ধনেও তাকে দেখা যায়।

নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়ার ঘটনায় তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান যে মামলা করেছেন, সেখানে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

 

আসামির তালিকায় নাম থাকা বাকি সাতজন হলেন - পৌর কাউন্সিলর মাকসুল আলম, প্রভাষক আবছার উদ্দিন, সাবেক ছাত্র শাহাদাত হোসেন শামীম, সাবেক ছাত্র নূর উদ্দিন, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহম্মদ ও হাফেজ আবদুল কাদের।

 

এদের মধ্যে জোবায়েরকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

 

এছাড়া ঘটনার সময়  ‘হাতমোজা, চশমা ও বোরকা’ পরিহিত আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে এ মামলায়।

 

আসামি গ্রেপ্তারে গড়িমসি এবং কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনসহ সেখানকার পুলিশ সদস্যদের অপসারণের দাবি তুলেছিলেন স্থানীয়রা। এ প্রেক্ষাপটে মোয়াজ্জেমকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়েছে।

আর নুসরাতকে হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্তভার থানার হাত থেকে দেয়া হয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হাতে।