ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
২৫৬

বিমানবন্দরে যাত্রীদের মালামাল চুরি হচ্ছে কেন?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০০:১৪ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২  

রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের লাগেজ এবং তা কেটে মালামাল চুরি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এতে তাদের ভোগান্তি বেড়েছে।সেখানে সম্প্রতি সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়দের ডলার চুরি হয়েছে। ফলে বিষয়টি আবারো সামনে এসেছে। 

 

এ নিয়ে অনেক যাত্রী বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ করেন। তবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, এখান থেকে যাত্রীদের লাগেজ চুরি অসম্ভব। যে বিমানবন্দর থেকে যাত্রীরা যাত্রা করেন, সেখানে এ ঘটনা ঘটতে পারে।    

 

গত বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ বিমানে নেপাল থেকে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে নামেন সাফ চ্যাম্পিয়ন ফুটবল দলের মেয়েরা। পরে ফুটবলার কৃষ্ণা রানী সরকার দেখতে পান, তার লাগেজ কাটা। সেটি থেকে ডলার, টাকা ও উপহারসামগ্রী উধাও হয়েছে।

 

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) জানায়, কৃষ্ণার ব্যাগ থেকে ৫০০ ডলার এবং ৫০ হাজার টাকা চুরি হয়েছে। এছাড়া সানজিদা আক্তারের ব্যাগ থেকে ৫০০ ডলার এবং শামসুন্নাহারের ব্যাগ থেকে ৪০০ ডলার হারিয়েছে। এ নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

 

গত ৮ জুলাই নিজের লাগেজ ভাঙা দেখতে পান সৌদি প্রবাসী এস এম ইসহাক। পরে  এর ভেতরে থাকা জিনিস ফেরত পাননি তিনি। এর আগে গত ১০ জানুয়ারি বিমানবন্দরে লাগেজ হারান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাঈদ-সেঁজুতি দম্পতি। এখনো তা ফিরে পাননি তারা। গত বছরের নভেম্বরে বিমানবন্দরে লাগেজ খোয়ান সৌদি প্রবাসী শ্যামল আহমেদ। মালামাল ফেরত পাননি তিনিও।

 

বিমানবন্দরে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে। সেটির নাম ‘ম্যাজিস্ট্রেটস, অল এয়াপোর্ট গ্রুপ'৷ তাতে বিদেশ ফেরত যাত্রীদের লাগেজ চুরির প্রচুর অভিযোগ আসে। গত মাসে এ বিষয়ে গণশুনানি করে সিভিল অ্যাভিয়েশেন। এতে প্রচুর অভিযোগ পেয়েছে তারা।

 

লাগেজ গায়েব বা মালামাল চুরিতে বিমানবন্দরের কর্মীরা জড়িত বলে অভিযোগ আছে। অতীতে যার প্রমাণও পাওয়া গেছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এ চক্রের ২০-২৫ জন একাধিকবার সিআইডি ও এপিবিএনের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। 

 

অনেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। তবে তাদের কেউ কেউ আবার আইনের ফাঁক গলে বিমানবন্দরে ফিরেছেন। গত এক বছরে বিমান এবং সিভিল অ্যাভিয়েশনের কয়েকজনকে হাতেনাতে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। দোষীদের তারা শাস্তি দিয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুতেই শাহজালালে চুরি থামছে না।

 

বিমানবন্দরের দায়দায়িত্ব মূলত তিনটি বিভাগের হাতে রয়েছে। সেগুলো হলো সিভিল অ্যাভিয়েশন, এয়ারলাইন্স ও এপিবিএন। শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেদেরসহ সব বিদেশি এয়ারলাইন্সের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের দায়িত্ব পালন করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

 

সার্বিক দায়িত্ব পালন করে সিভিল অ্যাভিয়েশেন। আর মনিটরিং করে এপিবিএন। আর বিমান অবতরণের পর মালামাল কনভেয়ার বেল্টে নিয়ে আসে বিমানের হ্যান্ডেলাররা। প্রতিটি পর্যায়ে মনিটরিং করেন এপিবিএন সদস্যরা। অধিকন্তু সবখানেই সিসি ক্যামেরা আছে। এছাড়া বিমানন্দরে হারানো মালামাল উদ্ধারে সহযোগিতায় রয়েছে লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড বিভাগ।

 

একাধিক সূত্র জানায়, কর্মচারীদের মধ্যেই বিমানবন্দরে একটি চোর চক্র আছে। তারা বেশ শক্তিশালী।  বিমানবন্দর সূত্র জানায়, প্রতিদিন সেখানকার লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড বিভাগে ১০০ এরও বেশি অভিযোগ আসে। সেগুলোর ৯০ ভাগেরও বেশি চুরি সংক্রান্ত।  তবে এর একটি অংশ পরে পাওয়া যায়।

 

নিয়ম হলো, মালামাল পাওয়া না গেলে ২০ কেজির জন্য প্রতি কেজিতে ২০ ডলার করে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। এছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে ৫০ ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়ারও নিয়ম আছে।  কোনো যাত্রী হারানো মালামালের জন্য মামলা করতে চাইলে বিমানবন্দর থানায় যেতে হয়। ফলে অনেক যাত্রীই হয়রানির ভয়ে থানা পুলিশ করতে যান না। পাশাপাশি চুরি হওয়ার পর দায়িত্ব নিয়ে শুরু হয় টানাহেঁচড়া। ফলে যাত্রীরা ঠিকমতো বুঝতে পারেন না, কার কাছে গেলে প্রতিকার পাবেন।

 

বিমানবন্দর এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক বলেন, প্রতিদিন লাগেজ চুরি বা কাটার অভিযোগ নিয়ে আমাদের কাছে আসেন যাত্রীরা। তবে সংখ্যাটা কম। কিন্তু আমি জানি না, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে না গিয়ে কেন আমাদের কাছে আসেন তারা। হয়তো সেখানে ঠিক সেবা পান না ভুক্তভোগীরা।

 

তিনি বলেন, বিষয়টা হলো; আমাদের কাছে এলে আমরা তাদের ফিরিয়ে দিতে পারি না। সিভিল অ্যাভিয়েশন আইন অনুযায়ী, ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করি। আর আমরাও তদন্ত করি। সত্যতা পেলে সেই অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করি।

 

তবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, সাড়ে ৫ মাস আগে আমি দায়িত্ব নিয়েছি। এসময়ে বিমানবন্দর থেকে কোনো লাগেজ চুরি বা কাটার লিখিত অভিযোগ পাইনি। 

 

তিনি বলেন, নারী ফুটবলারদের ঘটনা আমাদের এখানে হয়নি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তা নিশ্চিত হয়েছি। বিমানবন্দরে সব জায়গায় সিসি ক্যামেরা এবং মনিটরিং ব্যবস্থা আছে। সবমিলিয়ে এখানে চুরি প্রায় অসম্ভব।

 

এ কর্মকর্তা বলেন, যাত্রী যে বিমানবন্দর থেকে ফ্লাই করেন, সেখান থেকেই চুরি হতে পারে। আবার কোনো যাত্রীর লাগেজে কন্ট্রাব্যান্ড আইটেম থাকতে পারে। তাই তাতে তালা মারা থাকলে কেটে চেক করা হয়। আবার বক্স করা থাকলে তা ভাঙা হয়।

 

তার ভাষ্যমতে, সর্বোপরি এ নিয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ করতে হবে। সেটা না করলে তো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নয়। তাই যাত্রীদের উদ্দেশে বলব, আপনারা অভিযোগ করুন এবং সমাধান নিন।