ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ৭ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৫৩৯

রমজানে অসুস্থদের কিছু পরামর্শ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:৩১ ২৫ এপ্রিল ২০২১  

পবিত্র মাহে রমজান আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাস। মুসলমানদের জন্য রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের বার্তা নিয়ে বছর ঘুরে ফিরে এলো তা। ইসলাম ধর্মের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম হলো রোজা। আর তাকওয়া অর্জনের মাস রমজান। রোজা আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ নিয়ামত।  অনেকে জটিল রোগে ভোগেন, কিন্তু আত্মার শান্তি এবং ধর্মীয় নির্দেশনার প্রয়োজনে তা রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। 


আবার এমনও লোক দেখা যায় যারা অজুহাত খোঁজেন রোজা না রাখার জন্য। কিন্তু অনেক রোগের ক্ষেত্রে তা রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে তীব্র অসুস্থতায় অথবা কোনও জটিল রোগে রোজা রাখা না রাখার ব্যাপারেও ধর্মীয় নির্দেশনা আছে। তবে কোনও অজুহাতে বা সামান্য অসুস্থতায় তা না রাখার কোন যৌক্তিকতা নেই।

 

গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগী
যারা গ্যাস্ট্রিক আলসার বা পেপটিক আলসারে ভোগেন, তারা অনেকেই মনে করেন খালি পেটে থাকলে এসিডিটির সমস্যা বাড়বে। এ ধরনের রোগীরা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন যে রোজা রাখবেন কিনা। আসলে তা রাখলে সাধারণত এসিডিটি বাড়ে না। রোগীদের প্রধান কাজ হলো নিয়মিত খাবার খাওয়া, নিয়মিত ঘুমানো এবং নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ। রোজায় মানুষের জীবন একটা নিয়মে চলে আসে। বিধায় এ সময় এসিডিটির সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়। অবশ্যই ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। প্রয়োজনে ইফতার এবং সেহেরির সময় রেনিটিডিন বা ওমিপ্রাজল গ্রুপের ওষুধ একটা করে খেয়ে নিতে পারেন। এমনকি রাত্রে দুই-তিনবার এন্টাসিড ওষুধ খেলেও কোন অসুবিধা হবে না।

 

ডায়াবেটিস রোগী
ডায়াবেটিস হলে রোগী রোজা রাখতে পারবেন না এ কথা মোটেই ঠিক নয়। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকগণ এবং ইসলামী আলেমগণ উভয়েই তা রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। মোটামুটিভাবে নিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে খুব সহজেই রোজা রাখা সম্ভব। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতি ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য রোজা রাখা অনেক সহজ করে দিয়েছে। তবে তা রাখার জন্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ইনসুলিন কিংবা কোনো ওষুধ গ্রহণের সময়টা একটু পরিবর্তন করে সেহরি ও ইফতারের সঙ্গে সমন্বয় করে নিতে হবে। যেসব ডায়াবেটিক রোগী ঝুঁকির কথা জেনেও ধর্মীয় কারণে রোজা রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তারা তা শুরুর আগেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে জটিলতা এড়িয়েই রাখতে পারেন।

 

হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের রোগী
রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের রোগীদের রোজা রাখতে কোনো বাধা নেই। তা কোনোভাবেই হাঁপানি রোগ বাড়িয়ে দেয় না। যদি হাঁপানি বাড়তেই থাকে, তাহলে রোগী ইফতার এবং সেহরির সময় দীর্ঘস্থায়ী জাতীয় বড়ি খেয়ে নিতে পারেন। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, দিনের বেলায় শ্বাসকষ্ট হলে ইনহেলার নেয়া যাবে। তাতে রোজার কোনও ক্ষতি হবে না।

 

কিডনি রোগী
যারা কিডনির রোগে আক্রান্ত তাদের রোজা রাখা যাবে না এমন কোনো কথা নেই। যে সমস্ত রোগী ক্রনিক কিডনি ফেইল্যুরে আক্রান্ত, তাদেরকে সুনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে হয়, নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়, এমনকি পানি পানের ক্ষেত্রেও সতর্কতা ও পরিমাণ অনুযায়ী পান করতে হয়। তাই রোজা রাখার ক্ষেত্রে তাদের বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। যাদের কিডনি ফেইল্যুরের মাত্রা একেবারে শেষ পর্যায়ে, তাদের পক্ষে রোজা রাখা সম্ভব নয়। তেমনি যারা ডায়ালাইসিসের রোগী অথবা ইতোমধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন, তাদের পক্ষেও রোজা রাখা প্রায় অসম্ভব। অল্প থেকে মধ্যম মাত্রার কিডনি ফেইল্যুর রোগীরা রোজা রাখলে কোনো ক্ষতি হয় না। তবে কিডনি আক্রান্ত রোগীদের শারীরিক অবস্থা যা-ই থাকুক না কেন, সর্বাবস্থায় একজন কিডনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়াই শ্রেয়।

 

উচ্চ রক্তচাপের রোগী
উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের বেলায় রোজা আরও উপকারী। আজকাল অনেক ওষুধ পাওয়া যায় যেগুলো দিনে একবার বা দুইবার খেলেই চলে। ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী ইফতার বা সেহরির সময় বা প্রয়োজনে দুইবারই ওষুধ খেলে রক্তচাপ পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। অনেক রোগীর রক্তে কোলেস্টেরল বা অন্যান্য চর্বির মাত্রা বেশি থাকে। এসব নিয়ন্ত্রণেও রোজা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

 

 

হৃদরোগী
হৃদরোগ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই রোজা রাখতে কোনও নিষেধ নেই। তবে একিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন, হার্ট ফেইলিউর ইত্যাদি রোগ থাকলে রোজা না রাখাই শ্রেয়। আবার একথাও সত্য যে অনেক ক্ষেত্রে হৃদরোগীদের জন্য রোজা রাখা খুবই উপকারী। ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলা, চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করা এবং ইফতারের দুই ঘণ্টা পর একটু ব্যয়াম করা উচিত। যারা নিয়মিত তারাবির নামাজ আদায় করেন, তারা ব্যায়াম নাও করতে পারেন। যারা নিয়মিত ওষুধ খান, তারা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সম্ভব হলে সব ওষুধ রাতের বিভিন্ন সময়ে ভাগ ভাগ করে খেলে যদি অসুবিধা না হয় তো সেভাবেই ওষুধ খাবেন। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, দিনে যদি এনজাইনার ব্যথা হয়, তবে জিহ্বার নিচে স্প্রে জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যাবে, তাতে রোজার ক্ষতি হবে না।

 

লিভারের রোগী
লিভারের রোগীদের রোজা রাখা নির্ভর করে রোগটির ধরনের ওপর। কেউ যদি ভাইরাল হেপাটাইটিস নামক রোগে আক্রান্ত হন, তারা খেতে পারেন না, ঘন ঘন বমি হয়, রুচি নষ্ট হয়, জন্ডিস দেখা দেয়। অনেক সময় তাদের শিরায় স্যালাইন বা গ্লুকোজ দিতে হয়। তাদের পক্ষে রোজা না রাখাই ভালো। আবার যারা লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত, তাদের যদি রোগের লক্ষণ কম থাকে, তবে রোজা রাখতে পারেন।

 

চোখ, কান বা নাকের রোগী
রোজায় চোখের বা নাকের রোগীরা যে সমস্যায় পড়েন সেটি হল রোজা রাখা অবস্থায় ড্রপ ব্যবহার করতে পারবেন কিনা। চোখ বা নাকে ড্রপ দিলে তা মুখে চলে যেতে পারে, তা ফেলে দিয়ে কুলি করে ফেলা উচিত। ফলে ওষুধ গলায় বা পেটে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা থাকে না। সেক্ষেত্রে রোজা রেখে অনায়াসে চোখে বা নাকে ড্রপ দেয়া যায়। কানের ড্রপ দিলেও রোজার কোনও ক্ষতি হবে না। এমন মতামতই ব্যক্ত করেছেন ইসলামী চিন্তাবিদগণ। এছাড়া যারা রোজা রাখেন, তাদের খাবারের সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দৈনন্দিন লাইফস্টাইলেও পরিবর্তন আসবে। সারাদিন কোনও খাবার বা পানি না খেয়ে ব্যয়াম করার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। তার ওপর এবার রমজান হচ্ছে গরমের সময়ে, ফলে এখানেও দরকার বাড়তি সতর্কতা।

 

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ সময় তিনটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তা হলো, খাবার ও পানির বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি হালকা ব্যয়াম করতে হবে এবং যতটা বেশি সময় সম্ভব বিশ্রামে থাকতে হবে।