ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৩৯৬

শাহেদ-মাসুদ ১০ দিনের, তরিকুল সাত দিনের রিমান্ডে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৭:২৫ ১৬ জুলাই ২০২০  

রিজেন্ট গ্রুপ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. শাহেদ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসুদ পারভেজকে প্রতারণা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। একই মামলায় শাহেদের প্রধান সহযোগী তরিকুলের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম মো. জসিম প্রতারক ত্রয়ীর এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিন তাদের আদালতে হাজির করা হয়। উত্তরা পশ্চিম থানার মামলা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য প্রত্যেকের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক এস এম গাফ্ফার আলম। 

অন্যদিকে আসামিদের আইনজীবীরা তাদের রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মো. জসিম এ আদেশ দেন।

বুধবার ভোরে মো. শাহেদ ওরফে শাহেদ করিমকে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত এলাকা ইছামতি নদী থেকে আটক করে এলিট ফোর্স র‌্যাব। এর সদস্যরা ২টি হেলিকপ্টারে করে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। প্রথমে ওকে ঢাকার পুরাতন বিমানবন্দরে আনা হয়। 
এরপর শাহেদকে জিঞ্জাসাবাদের জন্য ঢাকার র‌্যাবের সদরদপ্তরে নেয়া হয়েছে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল উত্তরায় অভিযান পরিচালনা করে তারই গোপন আস্তানা থেকে ১ লাখ ৪৬ হাজার টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়েছে।

জিজ্ঞাবাদ ও চিকিৎসা শেষে বুধবারই শাহেদকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে সোপর্দ করা হয়। র‌্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের মুখপাত্র (পরিচালক) লেফটেন্ট্যান্ট কর্ণেল আশিক বিল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ওই দিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত এলাকা কোমরপুর গ্রামের ইছামতি নদী দিয়ে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে পালিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে শাহেদকে র‌্যাব সদস্যরা গ্রেফতার করে। এসময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি অবৈধ পিস্তল ও ম্যাগজিনভর্তি গুলি উদ্ধার করা হয়।

আশিক বিল্লাহ জানান, শাহেদ ছদ্মবেশে বোরকা পরে নৌকা দিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তার বাড়িও সাতক্ষীরায়।

গত ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় অভিযান চালায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাতে নেতৃত্ব দেন র‌্যাব সদরদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। অভিযানে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম উঠে আসে। পরে রিজেন্টের উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দেয়া হয়। 

পরবর্তীতে এ ঘটনায় র‌্যাব সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ৮ জনকে গ্রেফতার করে। গত ৮ জুলাই দিবাগত রাতে রাজধানীর নাখালপাড়া থেকে শাহেদের প্রধান সহযোগী তারেক শিবলী ওরফে তরিকুলকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

এছাড়া শাহেদের প্রতারণা কাজের অন্যতম সহযোগী মাসুদ পারভেজকে মঙ্গলবার রাতে গাজীপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত ৮ জন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

এদিকে করোনাভাইরাস পরীক্ষা না করে সার্টিফিকেট প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে শাহেদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে র‌্যাবের দায়ের করা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্থান্তর করা হয়েছে।

তদন্তকারী দলের সদস্যরা উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টর রিজেন্ট হাসপাতালের মূল অফিসে অভিযান চালিয়ে শাহেদের পাসপোর্ট জব্দ করেছে। ওই সময় তার আরও ২৩ মামলার হদিস মিলেছে। এখন পর্যন্ত আলোচিত এ প্রতারকের বিরুদ্ধে মোট ৫৯টি মামলার হদিস পেয়েছে র‌্যাব, ডিবি ও পুলিশ।

জানা গেছে, ২০১০ সালের দিকে শাহেদ ধানমন্ডি এলাকায় বিডিএস ক্লিক ওয়ান এবং কর্মমুখী কর্মসংস্থান সোসাইটি (কেকেএস) নামে দু’টি এমএলএম কোম্পানি খুলে গ্রাহকদের কাছ থেকে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে গা ঢাকা দিলে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহকরা তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০১১ সালে তাকে প্রতারণা মামলায় একবার গ্রেফতারও করা হয়েছিল। পরে তিনি জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন। 

এরপর প্রতারণার অর্থ দিয়ে রিজেন্ট গ্রুপ নামে ব্যবসা শুরু করেন শাহেদ। চালু করেন রিজেন্ট হাসপাতাল। এদিকে তার সব ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া শাহেদের দুর্নীতির অনুসন্ধানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

অপরাধ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর