ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১৬৬১

সম্রাটকে নিয়ে যা বললেন দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিন (ভিডিও)

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৮:১৮ ৬ অক্টোবর ২০১৯  

ক্যাসিনোকাণ্ডে তুমুল আলোচিত আওয়ামী যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে গ্রেফতার করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানালেন, তার দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিন চৌধুরী। বললেন, এই অভিযান আরো চালালে ভালো হতো। কারণ দুর্নীতিবাজের হাতে দেশ যাক, সেটা চাই না।   

রোববার বিকেলে রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএস-এর বাসায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ও (সম্রাট) অন্য লাইনে চলে গেছে। তবে ক্যাসিনোর টাকা সে সংসারে খরচ করতো না। অবৈধ টাকা পরিবারের সদস্যদের দিত না। আর দল পালতে কিন্তু টাকা না দিলে ছেলেরা মিছিল-মিটিংয়ে আসতো না। সেজন্য বিশাল অংকের টাকা লাগতো। আমার মনে হয়, সে জন্যই সে ক্যাসিনোতে গেছে।

রাজনীতিতে সম্রাটের জনপ্রিয়তার কথা জানিয়ে তার স্ত্রী বলেন, সম্রাট ক্যাসিনোর অর্থ দলের জন্য খরচ করতো। আপনারা জানেন দলের জন্য কী পরিমাণ খরচ করতো সে।

সম্রাটের স্ত্রী শারমিন সাংবাদিকদের আরও বলেন, ওর সম্পদ বলতে কিছুই নেই। ক্যাসিনো চালিয়ে ও যে আয় করে তা দলের জন্য খরচ করে, দল পালে। আর যা থাকে তা দিয়ে সিঙ্গাপুরে গিয়ে জুয়া খেলে।

ক্যাসিনো ব্যবসা চালাতে নিষেধ করতেন কিনা জানতে চাইলে সম্রাটের স্ত্রী বলেন, না। আমার সঙ্গে ওর মিলতো কম। ছেলেপুলে নিয়ে ও চলতে বেশি ভালোবাসত।

তিনি বলেন, সম্রাট অ্যারেস্ট হয়েছে আমি জানি। ওর সঙ্গে আমার দুই বছর ধরে কোনো সম্পর্ক নেই। ও যে ক্যাসিনো গডফাদার তা আমি জানি না। আমি জানি ও যুবলীগ করে, ও ভালো একটা নেতা। উত্তর-দক্ষিণের সবাই জানে ও ভালো একটা নেতা। আর আমিও সেটা জানি। আমার সঙ্গে দুই বছরের দূরত্ব হওয়ায় ও যে এত বড় ক্যাসিনো চালাইতো তা জানি না।

সম্রাটের রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে শারমিন বলেন, ‘ওর নাম যেমন সম্রাট, ও শুরু থেকেই সম্রাট। ও কিন্তু সহ-সভাপতি বা অন্যদের মতো না। ও খুব ভালোভাবে চলাফেরা করে। কিন্তু ক্যাসিনোতে ও কীভাবে আসল তা জানি না।

সম্রাট সিঙ্গাপুরে কেন যেতেন - এমন প্রশ্নে শারমিন বলেন, ও জুয়া খেলতে সিঙ্গাপুরে যেত। জুয়া খেলা তার নেশা। সম্পত্তি করা তার নেশা নয়। দোকান, গাড়ি. ফ্ল্যাট - এগুলো তার নেশা নয়।

সিঙ্গাপুরে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে সম্রাটের ছবি আছে - এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্ত্রী বলেন, আমাকে দুই বছর ধরে সিঙ্গাপুরে নেয় না। ওখানে বোধ হয় চায়না প্লাস মালয়েশিয়া ব্রোনমিক্সড মেয়ের সঙ্গে ওর সম্পর্ক হয়েছে। সিঙ্গাপুর গেলে ওর সঙ্গে সময় কাটায়।

আপনাদের বিয়ে হয়েছে ১৯ বছর। তখন সম্রাটদের পারিবারিক অবস্থা কেমন ছিল, আর এখন কেমন? - এ বিষয়ে শারমিন বলেন, ‘সম্পদের দিক থেকে আগে যেমন ছিল এখন ঠিক তেমনই। আমি বলি সম্রাটের কোনো নেশা নেই - ফ্ল্যাট করার, গাড়ি করার, একমাত্র নেশাই জুয়া খেলা।’
আপনি যে বাসায় আছেন এটা কি সম্রাটের -  প্রশ্ন করা হলে শারমিন বলেন, ‘না, এটা সম্রাটের না। আবার সম্রাটেরও। আমি যখন কিনছি, তখন ২৫ লাখ থেকে ২৬ লাখ টাকায় ঠিকায় বিক্রি হতো। তখন কেনা হইছে।’

আপনি কত নম্বর স্ত্রী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সম্রাটের দ্বিতীয় স্ত্রী। আমার আগে ও একটা বিয়ে করেছিল, ওটা ডিভোর্স হয়ে গেছে। সে বাড্ডাতে থাকত। 
প্রথম স্ত্রীর ডিভোর্সের বিষয়ে শারমিন বলেন, ওই আপুটা এ্যাডভোকেট ছিল। সম্রাট যখন অফিস থেকে রাতে বাসায় আসতো, তখন তিনি ঘুম থেকে (আগে ঘুমিয়ে পড়তেন) উঠতেন। এজন্য তাকে ডিভোর্স দিয়ে দেন।

রোববার ভোরে সহযোগী আরমানসহ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রাম থেকে সম্রাটকে গ্রেফতার করা হয়।

আলোচিত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ঢাকার জুয়াড়িদের কাছে ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত। জুয়া খেলাই তার পেশা ও নেশা। প্রতি মাসে ঢাকার বাইরেও যেতেন জুয়া খেলতে।

সম্প্রতি রাজধানীতে ক্লাব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে র্যা বের হাতে ধরা পড়েন সম্রাটের ডান হাত হিসেবে পরিচিত যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া।

এর পর ধরা পড়েন রাজধানীর টেন্ডার কিং আরেক যুবলীগ নেতা জিকে শামীম। এ দুজনই অবৈধ আয়ের ভাগ দিতেন সম্রাটকে। তারা গ্রেফতার হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাটের অবৈধ ক্যাসিনো সাম্রাজ্য নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। প্রকাশ্যে চলে আসে সুন্দর অবয়বের আড়ালে সম্রাটের কুৎসিত জগৎ। এতে করে বেকায়দায় পড়েন সম্রাট।

এর পর গাঢাকা দেন যুবলীগ নেতা সম্রাট। আড়ালে থেকেই গ্রেফতার থেকে বাঁচতে নানা তৎপরতা শুরু করেন। ফন্দি-ফিকির শুরু করেন কীভাবে নিজেকে বাঁচানো যায়।