ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৬৮৩

সেই ঈদ, এই ঈদ

আনহারুল ইসলাম

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০০:০৭ ১৪ মে ২০২১  

ঈদ। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। বাঙ্গালি মুসলমানের সবচেয়ে বড় উৎসব। কোভিড উন্মাদনায় কিছুটা সংকুচিত, কতকটা ম্লান। হয়ত টিভি-রেডিও তে সংবাদ পাঠকরা বলতে পারবেন না যে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা আর ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে পালিত হচ্ছে ঈদ।


ঈদের তিন দিনের ছুটি। সকাল থেকে ঈদের মুড আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ভালো লাগছে, কিন্তু ঠিকঠাক  ঊচ্ছ্বাস টা আনতে পারছি না। দু-চার বার  'মন রমজানের ও রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ' গুন গুন করলাম - গানের প্রাণ টেনে বার করতে পারলাম না।

 

আসলে ঈদের আনন্দ তো একা একা অনুভব কিংবা উপভোগ কোনটাই করা যায় না। তাই তো বাঙ্গালি সব বাধা ডিঙ্গিয়ে, জান প্রাণ তুচ্ছ করে ছুটে যায় প্রিয়জন সান্নিধ্যে। কারো কারো জন্যে ঈদের আনন্দ পরিণত হয় আশুরার মাতম-এ। 


ছোটবেলায় ঈদে বাড়ি যাওয়াটা ছিল অবশ্য কর্তব্য। সেটা ছিলো সত্যি সত্যি প্রবল উৎসাহ - লটবহর নিয়ে লম্বা ট্রেন জার্নিতে উদ্দীপনারও কমতি থাকত না। রেল স্টেশনে  কখনো আয়েশ চাচা, কখনো আজহার ভাই একগাল হাসি দিয়ে অভ্যর্থনা জানাতো। মনে হত যেন এইমাত্র বিশ্বজয় করে আসলাম।


ঈদের দিন সকালে উঠে গোসল করতে হত কসকো গ্লিসারিন সোপ দিয়ে। শীতকালে দাঁতে দাঁতে ঠকঠক তালের সাথে উচ্চাঙ্গসংগীত বেরিয়ে আসতো বিনা কসরতে। অতঃপর সাত্তার খলিফার বানানো সিল্কের পাঞ্জাবি আর চোস্ত পায়জামা পরে দু'মাইল দূরের ঈদগাহে যাওয়া ঈদের নামায পড়তে। মিঞাদের আমবাগানে তিনদিক  ঘেরা ঈদগাহ; ঈদের দিন খড় বিছানো হত, আমরা তার ওপর চাদর বিছিয়ে বসতাম - গ্রামের অনেকে ঘাড়ের গামছাটাকেই জায়নামাজ বানিয়ে নিত।

 

নামাজ-এর সুনির্দিষ্ট কোন টাইম ছিলোনা। মাঝে মাঝে কেউ গলা উঁচিয়ে দেখতো দূরে কাউকে  আসতে দেখা যাচ্ছে কিনা, দেখা গেলে তার জন্য অপেক্ষা।

 

এদিকে সুরত আলি মুন্সির সুদীর্ঘ বয়ান চলতেই থাকতো, মাঝে মাঝে লোকজনের অমনোযোগিতা টের পেলে ’বুঝলেন কিনা" বলে একটু কাশি। আমরা ছোটরা উসখুস করলে বড়দের ধমক শুনতে হত। আমাদের মন তখন পড়ে আছে ঈদগাহের বাইরে  ঝুরি আর 'ঝাইটন' নাপিতের বিশ্ববিখ্যাত পাঁপর ভাজার কাছে। 

 

নামাযের পর বাসায় ফিরে ভালো মন্দ খাবার মধ্য দিয়েই শেষ ঈদের আনুষ্ঠানিকতা।


কী সাদামাটা ছিল আমাদের বালক বেলার সেই ঈদ। অথচ স্মৃতির উঠানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা খোলামকুচির মাঝে সেগুলোই পান্না-হীরার মত জ্বলজ্বল করছে।