ঢাকা, ০৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৫ || ২১ কার্তিক ১৪৩২
good-food
১০৫৮

নগদ ৫ কোটি উদ্ধার

২ ভাইয়ের ১৫ বাড়ি, জায়গা হয় না টাকা রাখার (ভিডিও)

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৮:৩৮ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

ঢাকার গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের নেতা দুই ভাই, তাদের এক কর্মচারী এবং তাদের এক বন্ধুর বাসায় অভিযান চালিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা, আট কেজি সোনা এবং ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে র্যাব।

এনামুল হক ও রুপন ভূঁইয়া। দুই ভাই। দু’জনেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা। দু’জনই রাজধানীর ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের শেয়ার হোল্ডার। 

সোমবার মধ্যরাত থেকে র‍্যাব-৩ এনামুলের বাসায় অভিযান চালায়। উদ্ধার করে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা ও ৭২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার। মঙ্গলবার দুপুরে অভিযান শেষে অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সফিউল্লাহ বুলবুল সাংবাদিকদের জানান, সূত্রাপুরে এনামুলের ছয়তলায় বাসার দোতলা ও পাঁচতলায় তিনটি ভল্ট পেয়েছেন তারা। এছাড়া এনামুল ইংলিশ রোডে আরও পাঁচটি ভল্ট ভাড়া নিয়েছেন টাকা রাখার জন্য।

অভিযানে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ভল্ট খেলা হয়। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় ১ কোটি ৫ লাখ নগদ টাকা ও ৭২০ ভরি স্বর্ণালংকার। এ ছাড়া পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার করে র‍্যাব।

র‍্যাব জানায়, রাজধানীতে এনামুলদের ১৫টি বাসা আছে। তবে স্থানীয়রা জানান ওয়ারি, সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, বংশাল, কুতুয়ালী এলাকায় এনামুল, রুপনের অর্ধশত বাড়ি আছে। এনামুল এবং রুপন দু’ভাই-ই ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের শেয়ার হোল্ডার। ক্লাব থেকে টাকা এনে তারা বাসায় রাখতেন। টাকার পরিমাণ বিপুল হওয়ায় তা রাখার অনেক বেশি জায়গা লাগায় স্বর্ণালঙ্কার কিনে রাখতেন।

এনামুল হক এক সপ্তাহ আগে থাইল্যান্ড চলে গেছেন। তার ভাই রুপন ভূঁইয়া পলাতক। র‍্যাব তাকে খুঁজছে। 

র‍্যাব আরও জানায়, নারিন্দার একটি বাসায় এনামুলের আরও একটি ভল্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। 


 

এনামুল হক গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং রুপন ভূঁইয়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। গেণ্ডারিয়ার বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে দেয়ালে দুই ভাইয়ের ছবিসহ পোস্টারও দেখা গেছে।
র‌্যাব জানায়, ১৯৮৫ সাল থেকেই এনামুল ও রুপন ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সম্প্রতি ওয়ান্ডারার্স ক্লাব ও আরামবাগ ক্লাবে পরিচালিত অভিযানের সূত্র ধরে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় এ ব্যবসার সঙ্গে।
মঙ্গলবার দুপুরে লালমোহন সাহা স্ট্রিটে এনামুলের কর্মচারী আবুল কালামের বাসায় পাওয়া যায় একটি সিন্দুক। সেটি ভাঙার পর পাওয়া যায় দুই কোটি টাকা। ওই বাসা থেকে একটি পিস্তলও উদ্ধার করে র্যাব।  

পঞ্চম সিন্দুকটি পাওয়া যায় শরৎগুপ্ত রোডে এনুর বন্ধু হারুন-অর-রশিদের বাসায়। সেখানে আরও অন্তত দুই কোটি টাকা পাওয়া গেছে বলে র্যাব কর্মকর্তাদের ভাষ্য।
র্যাব-৩ অধিনায়ক বুলবুল বলেন, এনামুলের স্ত্রীর সংখ্যা একাধিক। তাদের মধ্যে একজন ওই ভবনের পঞ্চম তলায় থাকেন। আর রুপনের মালিকানাধীন দোতলায় থাকেন তাদের এক বোন। ওই দুই বাসা থেকেই টাকার সিন্দুক ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

 ওই বাড়িতে অভিযান শেষ হওয়ার আগেই নারিন্দার লালমোহন সাহা স্ট্রিটে আবুল কালাম এবং শরৎগুপ্ত রোডে হারুন-অর-রশিদের বাসায় র্যাবের অভিযানের খবর আসে।

আবুল কালামের বাসায় একটি সিন্দুকে পাওয়া যায় দুই কোটি টাকা। ওই বাসায় আলমারিতে রাখা একটি ব্যাগের ভেতর থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করার কথাও জানান র্যাব-৩ অধিনায়ক বুলবুল।  

কালামের স্ত্রী শিলা রহমান বলেন, তার স্বামী আওয়ামী লীগ নেতা এনামুলের বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন সাইটের তদারকি করেন। গেল রোববার এনামুলের বডিগার্ড পাভেল এসে একটি ব্যাগ ও সিন্দুকটি রেখে যায়।

দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই অভিযানে বিপুল পরিমাণ টাকা জব্দ করা হলেও তাৎক্ষণিকভবে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি বলে র্যাব কর্মকর্তা বুলবুল জানান।

গত সপ্তাহে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে যুবলীগ নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ঢাকায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের তত্ত্বাবধানে ‘৬০টি ক্যাসিনো চালানোর’খবর আসে সংবাদমাধ্যমে।

এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার ওয়ান্ডারার্স ক্লাবসহ চারটি ক্লাবে অভিযান চালিয়ে জুয়ার সরঞ্জাম, কয়েক লাখ টাকা ও মদ উদ্ধার করে র্যাব। পরে অভিযান চালানো হয় আরও কয়েকটি ক্লাবে।