ঢাকা, ০৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার, ২০২৫ || ২২ শ্রাবণ ১৪৩২
good-food
১১৮৫

ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাড় দিতে প্রস্তুত সব ছাত্র সংগঠন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৪:৩৭ ১১ জানুয়ারি ২০১৯  

সংগৃহীত

সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) গঠনতন্ত্র সংশোধন ও পরিমার্জনে গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংগঠনগুলোর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা এগারোটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়৷ সভায় উপস্থিত ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো।
ছাত্রলীগ, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা কমিটির কাছে মৌখিকভাবে গঠনতন্ত্র সংশোধনে তাঁদের সুনির্দিষ্ট সুপারিশ ও প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।

ছাত্রসংগঠনগুলোকে আগামী সোমবার সন্ধ্যার মধ্যে লিখিতভাবে তাদের প্রস্তাব পেশ করতে বলা হয়েছে। সব প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করে আগামী বুধবার ডাকসুর গঠনতন্ত্র পরিমার্জনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও পদাধিকারবলে ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের কাছে চূড়ান্ত সুপারিশ দেবে ৫ সদস্যের কমিটি।
 

সভায় অংশ নেওয়া প্রায় সব সংগঠন ডাকসুর গঠনতন্ত্রের ব্যাপারে মৌখিকভাবে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করলেও ছাত্রদল এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেনি। ছাত্রদলের মূল দাবি ছিল, ক্যাম্পাসে সহাবস্থান ও সমান সুযোগের নিশ্চয়তাবিধান। তারা বলছে তারা ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের কারণে ক্যাম্পাসে নিজেরা ভালমত চলাচলই করতে পারে না।


বাংলা ভাষায় ডাকসুর গঠনতন্ত্র প্রণয়ন ও ক্যাম্পাসে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে ও নির্ধারিত সময়ে ডাকসু নির্বাচন আয়োজন সব সংগঠনের অভিন্ন দাবি।

তবে ডাকসুর নির্বাহী কমিটিতে সভাপতির ক্ষমতায় পরিবর্তন চায় বামপন্থী সংগঠনগুলো। অন্যদিকে ছাত্রলীগ বলছে নিয়মিত শিক্ষার্থীরাই হবেন ডাকসুর প্রার্থী ও ভোটার। ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সব ধরনের ছাড় দিতেও প্রস্তুত ছাত্রলীগ।


এদিকে এসব নিয়ে মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, ক্যাম্পাসে সব ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিতের উপর  জোর দিয়েছেন তাঁরা। উপাচার্য এককভাবে প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ করতে পারবেন না উল্লেখ করে তাঁর ক্ষমতার ভারসাম্য আনার কথা বলেছে জোট।

তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের মাধ্যমে সর্বজনগ্রাহ্য একজনকে নির্বাচন প্রধান নিয়োগ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থরক্ষায় তাঁদের স্বার্থবিরোধী যেকোনো আইন ডাকসু কমিটির ভূমিকার বিষয়টি গঠনতন্ত্রে উল্লেখ থাকতে হবে।


হলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের দখলদারি উল্লেখ করে তাঁরা দাবি জানিয়েছেন, ডাকসু নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হলের ভেতর না হয়ে কাছের একাডেমিক ভবনে রাখতে হবে। এ ছাড়া ডাকসুতে ছাত্র অধিকারবিষয়ক সম্পাদক পদ সৃষ্টি এবং বিদ্যমান গঠনতন্ত্রের সমাজসেবা সম্পাদক ও সামাজিক বিনোদন সম্পাদক পদ দুটির নাম পরিবর্তন করে যথাক্রমে সমাজকল্যাণ ও পরিবেশ সম্পাদক এবং সাংস্কৃতিক সম্পাদক করার কথা বলেছে ছাত্রজোট। গঠনতন্ত্রে উল্লিখিত ধর্মীয় কার্যক্রম আয়োজনের বিষয়টি বাতিল করার দাবিও জানান তাঁরা।

পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্র ইউনিয়ন বলেছে,  ডাকসুর বিদ্যমান গঠনতন্ত্রে থাকা কমনরুম সম্পাদকের তিনটি পদ বিলুপ্ত করে এর স্থলে যথাক্রমে ছাত্রীকল্যাণ সম্পাদক, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদকের পদ অন্তর্ভুক্ত করা; আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের পদ সৃষ্টি; নির্বাচন সুষ্ঠু, প্রভাবমুক্ত ও সর্বজনগ্রাহ্য করতে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন এবং গঠনতন্ত্রে হল সংসদের ২২ নম্বর ধারায় উল্লিখিত ব্যয়ের পরিমাণকে বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির পরিপ্রেক্ষিতে পুনঃসংশোধন করতে হবে।

পদাধিকারবলে ডাকসু সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ক্ষমতার একাধিপত্যের বিষয়ে তার ক্ষমতান পরিবর্তন চেয়ে বলেছে, সভাপতি চাইলেই কোনো সদস্যকে বরখাস্ত করতে পারেন, এমনকি নির্বাহী কমিটিও বাতিল করতে পারেন। এরূপ ধারা গণতন্ত্রের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ৮(এম) ধারা অনুযায়ী  সভাপতির গৃহীত কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের কোনো রায় কার্যকর হবে না, যা আমাদের সংবিধানের ৩১ ধারার পরিপন্থী। এল সমাধান করতে হবে।

এদিকে সভা শেষে ছাত্রলীগ জানিয়েছে, ‘ডাকসুর বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শুধু স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদেরই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। যেহেতু দীর্ঘ দিন পর নির্বাচন হচ্ছে, এই নির্বাচনের স্বার্থে যদি কোনো ধরনের ছাড় দেওয়ার প্রয়োজন হয় বা গঠনতন্ত্রে কিছুটা সংযোজন-বিয়োজনের প্রয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রে আমাদের সায় আছে।

সহাবস্থানের বিষয়ে ছাত্রলীগ বলেছে, ‘আমরা সহাবস্থানে বিশ্বাস করি। কিন্তু ক্যাম্পাসে একটা ছাত্রসংগঠন কীভাবে আসবে, সেটা আমরা নিশ্চিত করতে পারব না। তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রয়েছে। ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমেই সংগঠনগুলো প্রমাণ করুক সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু।’

 


ছাত্র দল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জানায়, আমরা চিঠি পেয়েছি ৮ জানুয়ারি। আমরা মাত্র এক দিন গঠনতন্ত্রটি পর্যালোচনার সময় পেয়েছি৷ অন্যান্য সংগঠন চাইলে আধা ঘণ্টার নোটিশে ক্যাম্পাসে জড়ো হতে পারে, কিন্তু আমরা পারি না। কারণ আমাদের প্রশাসনিকভাবে হয়রানি করা হয়, ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নেই। আমাদের মূল দাবি ছিল ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করা, ক্যাম্পাসে ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা।

ছাত্রসংগ্রাম পরিষদও সহাবস্থান চায়
ছাত্রলীগ ও কয়েকটি বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের জোট ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতারাও মনে করেন না ক্যাম্পাসে সব ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান আছে।

 


সভা শেষে ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনে গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘ডাকসুর গঠনতন্ত্রে যদি কোনো ধরনের পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হয়, সেটি প্রশাসন মনে করতে পারে। কিন্তু ডাকসু যেহেতু শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন, তাই শিক্ষার্থীরা কী ভাবছে, সেটাও খুবই জরুরি। সবার বক্তব্য শুনে এই কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে একটি সুপারিশ দেবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আমাদেরও নেই।
অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘সবার বক্তব্য পর্যালোচনা করে ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন ও যুগোপযোগী করতে আগামী বুধবার উপাচার্যকে আমরা একটি সুপারিশ দেব।’

ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিৎ চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার, ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব দাস, ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীর, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ-মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তমা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন সুজন ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব গান্ধী রায়, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক উলুল আমর অন্তর, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান রাহাত, জাসদ ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পাল প্রমুখ অংশ নেন।