ঢাকা, ২৮ ডিসেম্বর রোববার, ২০২৫ || ১৪ পৌষ ১৪৩২
good-food

ভারতের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান, পাল্টা আয়না দেখাল বাংলাদেশ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৯:২৩ ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫  

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে ঢাকা। শুধু তাই নয়, উল্টো ভারতে মুসলিম ও খ্রিস্টানসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর গণপিটুনি, হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এই কঠোর অবস্থান তুলে ধরা হয়। মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম বলেন, "ভারতের মন্তব্যগুলো বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না এবং বাংলাদেশ এ ধরনের 'ভুল, অতিরঞ্জিত বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বর্ণনা' স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করছে, যা দেশের দীর্ঘদিনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে।"

মন্ত্রণালয় দুঃখ প্রকাশ করে জানায়, বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া কিছু বিচ্ছিন্ন অপরাধমূলক ঘটনাকে ব্যবহার করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর পদ্ধতিগত নিপীড়নের একটি চিত্র তৈরির অপচেষ্টা চলছে। 

অভিযোগ করা হয়, এসব ঘটনাকে "দুরভিসন্ধিমূলকভাবে ব্যবহার করে" ভারতে বাংলাদেশবিরোধী মনোভাব উসকে দেওয়া হচ্ছে। কিছু মহলের নির্বাচনী ও পক্ষপাতদুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকে অতিরঞ্জিত ও বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে ভারতীয় জনগণের মধ্যে বাংলাদেশ, এমনকি ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের বিরুদ্ধেও বিদ্বেষ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ভারতের উল্লেখ করা একটি নির্দিষ্ট ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে মাহবুবুল আলম জানান, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি একজন তালিকাভুক্ত অপরাধী ছিলেন এবং তিনি এক মুসলিম সহযোগীর সঙ্গে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে নিহত হন। এই ঘটনাকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের রূপ দেওয়া "তথ্যভিত্তিক নয়, বরং বিভ্রান্তিকর"।

বাংলাদেশ স্পষ্টভাবে ভারতকে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রচারণা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সতর্ক করে বলেছে, এই ধরনের কর্মকাণ্ড দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং পারস্পরিক আস্থার চেতনাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ করে।

একই ব্রিফিংয়ে ভারতে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে পাল্টা চিত্র তুলে ধরেন মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, ভারতে মুসলিম, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণপিটুনি, হত্যা, ভাঙচুর এবং ধর্মীয় আচার পালনে বাধা দেওয়ার মতো ঘটনা বাংলাদেশের জন্য গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। 

তিনি সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে ওডিশায় চুরির অভিযোগে এক মুসলিম যুবককে গণপিটুনিতে হত্যা, বিহারে মোহাম্মদ আত্তার হোসেন নামে আরেক মুসলিম যুবককে পিটিয়ে হত্যা এবং বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগের সন্দেহে কেরালায় একজন নিরীহ ব্যক্তিকে হত্যার কথা তুলে ধরেন। এমনকি খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন উদযাপনের সময়ও ভারতজুড়ে তাদের বিরুদ্ধে হামলা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এসব সহিংসতা ও অসহিষ্ণুতার ঘটনায় বাংলাদেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জানিয়ে মাহবুবুল আলম বলেন, "আমরা এসব ঘটনাকে ঘৃণাজনিত অপরাধ ও লক্ষ্যভিত্তিক সহিংসতা হিসেবে দেখি। আমরা আশা করি, ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনবে। প্রতিটি দেশের দায়িত্ব হলো তার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা, এবং প্রত্যেক দেশকে এই দায়িত্ব পালন করতে হবে।"

সম্প্রতি দিল্লিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “এ ধরনের হামলাগুলোকে কেবল  ‘সংবাদমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বা ‘রাজনৈতিক সহিংসতা’ বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।

সম্প্রতি ময়মনসিংহে দীপু দাস নামে এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার কড়া নিন্দা জানায় নয়াদিল্লি।

জয়সওয়াল বলেন, “আমরা ময়মনসিংহে হিন্দু যুবককে হত্যার ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। আশা করি এই অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।”