ঢাকা, ১৯ মে সোমবার, ২০২৫ || ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
good-food
৭৪০

সিমেন্টের বদলে বালি, রডের বদলে বাঁশ দিয়ে বড় হবার স্বপ্ন নয়

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:৩৩ ১৯ মার্চ ২০১৯  

দেশের চলমান উন্নয়ন কর্মসূচি জনবান্ধব ও টেকসই করায় সহায়তা করতে প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদদের প্রতি আহ্বান জানালেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

 

মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একাদশ সমাবর্তনে ডিগ্রিপ্রাপ্তদের উদ্দেশে তিনি বললেন, কখনো সত্যের সঙ্গে মিথ্যার আপস করবে না। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার সৎ সাহস রাখবে। সিমেন্টের বদলে বালি আর রডের বদলে বাঁশ দিয়ে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখবে না।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ নবীন প্রকৌশলীদের উদ্দেশে বলেন, সবসময় বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতে হবে। সেই স্বপ্ন হবে দেশ, জাতি, সমাজ, পরিবার ও নিজের কল্যাণে।

তিনি বলেন, সাফল্যের পেছনে না ছুটে কর্মের পেছনে ছুটবে। দেখবে তোমার কর্ম তোমার জন্য সাফল্য আর সুনাম বয়ে আনবে। মনে রাখবে, অন্যায় ও অসৎ পথের যে-কোনো অর্জন ক্ষণস্থায়ী। তাতে সম্মান নেই, আছে ঘৃণা আর জীবনভর অনুশোচনা। তাই জীবনে সবকিছু করবে নিজের মেধা, সততা ও আন্তরিকতাকে কাজে লাগিয়ে। চিন্তা চেতনায় সৎ থাকলে আর আত্মবিশ্বাস মজবুত হলে জয় তোমাদের অনিবার্য। তখন সাফল্যই তোমাকে খুঁজে নেবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে উন্নয়ন পরিকল্পনা ‘ভিশন-২০২১ এবং ভিশন-২০৪১’ গ্রহণ করেছেন। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে উন্নয়ন কাজ জনবান্ধব ও টেকসই করতে প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদদের ভূমিকা রাখতে হবে।

দেশ থেকে মেধা পাচার বন্ধের ওপর গুরুত্বারোপ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক প্রকৌশলী, প্রযুক্তিবিদ, স্থপতি এবং পরিকল্পনাবিদ উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপ, আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলোতে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেকেই আর দেশে ফিরে আসছেন না। এ কারণে, দেশ ও জনগণ তাদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

তিনি দেশ ও জনগণের কল্যাণে আরো বেশি করে অবদান রাখতে তাদের সকলের প্রতি আহ্বান জানান।  

 

রাষ্ট্রপতি ও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর বলেন, যুদ্ধবিদ্ধস্থ বাংলাদেশেএরই মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছে। দেশের সাহসী জনগণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে।

তিনি বুয়েটকে দেশের প্রকৌশল ও কারিগরি শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ উল্লেখ করে আশা প্রকাশ করেন যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটরা সময়ের দাবি পূরণে প্রকৌশল শিক্ষা ও গবেষণা আরো এগিয়ে নিতে আরো অবদান রাখবে।

রাষ্ট্রপতি সদ্য গ্রাজুয়েটদের অভিনন্দন জানিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ করতে তাদের মেধা ও সৃষ্টিশীলতা কাজে লাগাতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর আহবান জানান। তিনি তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সবসময় আন্তরিক হতে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, তোমরা চাকরির সুবাধে বিশ্বের যে প্রান্তেই থাক না কেন নিজ মাতৃভূমিকে কখনো ভুলবে না। তিনি বলেন, সর্বদাই বড় হবার স্বপ্ন দেখবে এবং দেশ, জাতি, সমাজ, পরিবার এবং নিজের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সফল উৎক্ষেপণের পর বাংলাদেশ এখন মহাকাশ স্যাটেলাইট জগতের গর্বিত অংশীদার।

তিনি বলেন, সরকার বহুমুখি পদ্মাসেতু, বিভিন্ন বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা সমূদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়েসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ ক্ষেত্রে বুয়েট প্রকৌশলীদের অবশ্যই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে হবে।

বন্যা, নদী ভাঙ্গন, নদী শাসন, পানি সরবরাহ ও স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাপনা ও জলাবদ্ধতাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলায় সরকারের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসাবে ‘বাংলাদেশ ডেল্টা-প্লান ২১০০’ বাস্তবায়নে অবদান রাখতে প্রকৌশলীদের প্রতি আহবান জানান রাষ্ট্রপতি।

তিনি বলেন, গ্রাজুয়েটদের জন্য বুয়েট সারা বিশ্বে অধিক পরিচিত। ইতোমধ্যেই এই প্রতিষ্ঠান থেকে ৩২ হাজারের অধিক প্রকৌশলী, স্থপতি এবং পরিকল্পনাবিদ বের হয়েছে।

কনভোকেশনে ২০১১সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পযর্ন্ত শিক্ষাবর্ষের বিভিন্ন বিভাগ থেকে ৫ হাজার ২৮৪ জন শিক্ষার্থী গ্রাজুয়েট, পোস্ট গ্রাজুয়েট এবং পিএইসডি ডিগ্রি সনদ গ্রহন করেন। ১৮ জন শিক্ষার্থী সবোর্চ্চ নম্বর প্রাপ্তির জন্য স্বর্ণপদক লাভ করেন।

অনুষ্ঠানে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সমাবর্তন বক্তব্য রাখেন। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি, বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম, ফ্যাকাল্টির ডিনগন যথাক্রমে অধ্যাপক মো. রফিক উল্লাহ, অধ্যাপক ড. শেখ সেকেন্দার আলী, অধ্যাপক ড. মো. মাহাবুবুল আলম, অধ্যাপক ড. মো. সাইফুর রহমান এবং অধ্যাপক ড. ফরিদা নিলুফার উপস্থিত ছিলেন।