ঢাকা, ১০ ফেব্রুয়ারি সোমবার, ২০২৫ || ২৭ মাঘ ১৪৩১
good-food
১৩৩

সিরামিক শিল্প রক্ষায় জ্বালানি গ্যাসের দাম না বাড়ানোর দাবি

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:২১ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫  

দেশীয় সিরামিক শিল্প রক্ষায় জ্বালানি গ্যাসের মূল্য পুনরায় বৃদ্ধি না করাসহ ৩ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ)।

 

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান, অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মইনুল ইসলাম।

 

অপর দুই দাবি হচ্ছে, সিরামিক শিল্পে গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা এবং সিরামিক টাইলস ও স্যানিটারি পণ্যের ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্কহার প্রত্যাহার করা।

 

মইনুল ইসলাম বলেন, এই শিল্পে ক্রমাগত গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত ৯ (২০১৫-২০২৩) বছরে শিল্পখাতে প্রায় ৩৪৫ শতাংশ গ্যাসের মূল্য বেড়েছে। ২০২৩ সালে প্রায় ১৫০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির কারণে প্রতি কেজি সিরামিক পণ্যের গড় উৎপাদন ব্যয় ১৮ থেকে ২০ শতাংশ বাড়ে। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তৈরি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বিদেশি পণ্যের সঙ্গে মূল্য প্রতিযোগিতা করে দেশীয় তৈরি পণ্যের দর ইচ্ছেমতো বাড়ানো যায় না। ফলে প্রতিযোগী বাজারে উৎপাদককে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।

 

তিনি বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, সরকার আরেক দফা গড়ে ১৫২ শতাংশ গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে। এতে শিল্প ও কেপটিভ প্লান্টের জন্য যথাক্রমে প্রতি ঘনমিটার ৩০ থেকে ৭৫.৭২ টাকা হতে পারে। ফলে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় আরও ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বেড়ে যাবে। জ্বালানি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে পরিবহন ব্যয়সহ সব ক্ষেত্রে খরচ বৃদ্ধি পাবে। তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সিরামিক শিল্প। ফলে দেশীয় তৈরি-পণ্যের মূল্য প্রতিযোগিতায় বিদেশি পণ্যের সঙ্গে টিকে থাকতে পারবে না। যে কারণে উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সর্বোপরি দেশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিসিএমইএ সভাপতি বলেন, সিরামিক শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাস কাঁচামালের উপকরণ হিসেবে গণ্য হয়। এই শিল্পে গ্যাসের বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ নেই। পণ্য প্রস্তুত করতে নির্দিষ্ট মাত্রার চাপে কারখানায় ২৪ ঘণ্টাই নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ থাকতে হয়। নির্দিষ্ট মাত্রার চাপে গ্যাসের সরবরাহের ঘাটতি হলে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় থাকা সব পণ্য তৎক্ষণাৎ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কোম্পানির বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়। কারখানায় নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ না থাকা সত্ত্বেও আমাদের গ্যাসের বিল দিতে হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে প্রয়োজনীয় গ্যাসের চাপের অভাবে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় বিশ্ববাজারে নামি-দামি কোম্পানি আমাদের থেকে অর্ডার বাতিল করেছে।

 

মইনুল ইসলাম বলেন, বিগত প্রায় ১ বছর ধরে ঢাকা জেলার মিরপুর, সাভার, ইসলামপুর, ধামরাই ও কালামপুর; নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ, মেঘনাঘাট; গাজীপুর জেলার টঙ্গী, কাশিমপুর, ভবানীপুর, ভাওয়াল মির্জাপুর, শ্রীপুর, মাওনা; নরসিংদী জেলার পাঁচদোনা; এবং ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা ও ত্রিশাল এলাকায় অবস্থিত ২২ থেকে ২৫টি সিরামিক তৈজসপত্র, টাইলস্, স্যানিটারিওয়্যার সিরামিক ব্রিকস্ কারখানায় তীব্র গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সিরামিক কারখানায় যেখানে গ্যাসের ১৫ পিএসআই প্রেসার প্রয়োজন হয়, সেখানে তা কখনো কখনো ২/৩ পিএসআই থেকে শূন্যের কোঠায় নেমে আসছে। এতে প্রতিদিন ক্ষতির পরিমাণ ২০ কোটি টাকার অধিক। ফলে উৎপাদকরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

 

তিনি বলেন, বর্তমানে সব দেশীয় টাইলস উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক এবং দেশীয় স্যানিটারি পণ্য উৎপাদন পর্যায়ে ১০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপিত রয়েছে। সিরামিক টাইলস ও স্যানিটারি পণ্য এখন আর বিলাস দ্রব্য হিসেবে বিবেচিত হয় না। পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলে সাধারণ লোক স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। এটি সরকারের ঘোষিত ‘সকলের জন্য স্যানিটেশন’ কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্ত করবে।

 

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মইনুল ইসলাম বলেন, সিরামিক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতিতে যে বিরূপ প্রভাব পড়বে তা অনুধাবন করে এ শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণ, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মেইড ইন বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিং প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য গ্যাসের মূল্য পুনরায় বৃদ্ধি না করা, সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা এবং সিরামিক টাইলস্ ও স্যানিটারি পণ্যের ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্কহার সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি।

 

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা মীর নাসির হোসেন, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মামুনুর রশীদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল হাকিম সুমন, ডিরেক্টর রাশীদ মাইমুনুল ইসলাম, ফারিয়ান ইউসুফ,  সাধারণ সম্পাদক ইরফান উদ্দিন।