ঢাকা, ১৩ সেপ্টেম্বর শনিবার, ২০২৫ || ২৮ ভাদ্র ১৪৩২
good-food
৭৩৭

সেই সুখস্মৃতি নিয়ে দ.আফ্রিকার বিপক্ষে নামছে বাংলাদেশ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:৫৯ ১ জুন ২০১৯  

দুর্দান্ত এক সুখস্মৃতি নিয়ে রোববার বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু করছে বাংলাদেশ। নিজেদের প্রথম ম্যাচে টাইগারদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়াদের বিশ্বকাপে হারানোর রেকর্ড রয়েছে বাংলাদেশের। তাই দ্বাদশ বিশ্বকাপের শুরুতে তাদের পেয়ে যাওয়ায় সুখস্মৃতি নিয়েই নিজেদের মিশন শুরু করছে মাশরাফির দল। এদিন লন্ডনের কেনিংটন ওভালে বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় শুরু হবে ম্যাচটি।
২০০৭ সালের এপ্রিল। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সুপার এইটের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। ম্যাচে স্পষ্টভাবেই ফেভারিট ছিল প্রোটিয়ারা। কিন্তু ফেভারিটের তকমা তোয়াক্কা না করে বিশ্বকে চমকে দেয় টাইগাররা। হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বাধীন দলটি দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬৭ রানে হারায়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের গায়ানার প্রোভিডেন্স স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্যাট হাতে শুরুতে সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ। ৮৪ রানের মধ্যে উইকেট হারিয়ে ফেলে টাইগাররা। তবে পরের দিকে সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে লড়াইয়ে ফিরে তারা। তাকে সঙ্গ দেন আফতাব আহমেদ। পঞ্চম উইকেটে দুজনে ৭৬ রান যোগ করেন।
আফতাব ২টি করে চার-ছক্কায় ৪৩ বলে ৩৫ রান করে আউট হন। তবে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন আশরাফুল। ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলে থেমে যান অ্যাশ। বাংলাদেশের অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ১২টি চারে ৮৩ বলে ৮৭ রান করেন আশরাফুল। ফলে ৫০ ওভারে উইকেটে ২৫১ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। শেষদিকে চার ছক্কায় ১৬ বলে ২৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন মাশরাফি।
এরপর জয়ের জন্য ২৫২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে বাংলাদেশ বোলারদের তোপের মুখে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা। বাঁহাতি মিডিয়াম পেসার সৈয়দ রাসেল এবং তিন স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক-মোহাম্মদ রফিক-সাকিব আল হাসানের তোপে পড়ে ১৮৪ রানেই অলআউট হয়  তারা।। রাজ্জাক ৩টি, সাকিব-রাসেল ২টি করে এবং রফিক ১টি উইকেট নেন।
তাই ১২ বছর হয়ে গেলেও সেই ম্যাচের সুখস্মৃতি যে বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাসী করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তারপরও বেশ টগবগে মেজাজেই আছে বাংলাদেশ। গেল মাসে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মাশরাফির দল। ডাবলিনে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উইকেটে হারায় তারা। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে মোসাদ্দেক হোসেনের ২৭ বলে অপরাজিত ৫২ রান লাল-সবুজ জাসিধারীদের শিরোপার স্বাদ এনে দেয়। বৃষ্টি আইনে ২৪ ওভারে জয়ের জন্য ২১০ রানের টার্গেট পায় টাইগাররা। সেই টার্গেট বল বাকি রেখেই স্পর্শ করে ফেলে বাংলাদেশ। ফলে প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে কোনো টুর্নামেন্টে শিরোপার স্বাদ নিলো মাশরাফির দল।
আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে অপরাজিত চ্যাম্পিয়নের স্বাদ নিয়ে ইংল্যান্ডের মাটিতে পা রাখে বাংলাদেশ। মূল পর্বের জন্য অংশ নেয়া প্রত্যক দলের জন্যই দুটি করে প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ থাকে। সেই সুবাদে বাংলাদেশের দুটি প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ ছিল পাকিস্তান ভারতের বিপক্ষে। দুটি ম্যাচই ছিল কার্ডিফে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়ে যায়। তবে ভারতের বিপক্ষে নিজেদের গা গরম করার সুযোগ পায়।
কিন্তু ওই ম্যাচে জয় তুলে নিতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। ৯৫ রানে ভারতের কাছে হারে টাইগাররা। নিজেদের দ্বিতীয় প্রস্তুতিমূলক ম্যাচে টস জিতে প্রথমে বোলিং করতে নামে বাংলাদেশ। ১০২ রানে ভারতের চার ব্যাটম্যানকে বিদায় দিয়ে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিল টাইগাররা। তবে পঞ্চম উইকেটে ১৬৪ রানের বড় জুটি গড়ে ভারতকে খেলায় ফেরান চার নম্বরে নামা লোকেশ রাহুল সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। শেষ পর্যন্ত দুজনই সেঞ্চুরি তুলে নেন।
রাহুল ১২ চার ছক্কায় ৯৯ বলে ১০৮ এবং ধোনি চার ছক্কায় ৭৮ বলে ১১৩ রান করেন। ফলে ৫০ ওভারে উইকেটে ৩৫৯ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় ভারত। জবাবে ব্যাট হাতে ভারতীয় বোলারদের শাসন করতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ওপেনার লিটন দাস উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম লড়াই করার চেষ্টা করেছিলেন। লিটন ৭৩ মুশফিক ৯০ রানে থেমে যান। এরপর বল বাকি রেখে ২৬৪ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
তাই প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ হারের স্বাদ নিয়েও বিশ্বকাপ শুরু করতে হবে সাকিব-তামিমদের। তবে এসব হারকে দূরে সরিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে নতুন উদ্যমে যে বাংলাদেশ শুরু করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, এখন মাশরাফি-তামিম-সাকিবদের নিয়ে গড়া দলটি ভিন্ন চিত্রের এক বাংলাদেশ। যেকোনো দলকে হারানোর সামর্থ্য রাখে টাইগাররা। সেই সামর্থ্যটা কতটুকু বাংলাদেশের, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
এখন পর্যন্ত ২০ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকা। ৩টিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ১৭টি জিতেছে প্রোটিয়ারা। ২০১৭ সালের অক্টোবরে সবশেষ দেখা হয়েছিল দুদলের। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের অন্য দুটি জয় এসেছিল ২০১৫ সালে। দেশের মাটিতে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ম্যাচের সিরিজে - ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ দল : মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, মোহাম্মদ মিঠুন, মাশরাফি বিন মুর্তজা(অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান (সহ-অধিনায়ক), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদি হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মোসাদ্দেক হোসেন, আবু জায়েদ রাহী, রুবেল হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান।
দক্ষিণ আফ্রিকা দল : ফাফ ডু প্লেসিস(অধিনায়ক), এইডেন মার্করাম, কুইন্টন ডি কক, হাশিম আমলা, রাসি ভ্যান ডরি ডুসেন, ডেভিড মিলার, আন্দিল ফেলুকুয়াও, জেপি ডুমিনি, ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস, ডেল স্টেইন, কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডি, ক্রিস মরিস, ইমরান তাহির ও তাবরিজ শামসি।

খেলাধুলা বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর