ঢাকা, ১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার, ২০২৪ || ৩ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৩৪২

‘আব্বা বলতেন, আমাকে কি বাক্সবন্দি হয়ে স্বাধীন করা দেশে যেতে হবে’

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:৩৭ ৭ নভেম্বর ২০১৯  

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও অবিভক্ত ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকার জানাজার আগে আবেগঘন বক্তৃতা দিয়েছেন তার বড় ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন। বাবার স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি বলেন, প্রায় সময়ই আব্বু বলতেন- যে বাংলাদেশ নিজ হাতে স্বাধীন করেছি, সে দেশে আমাকে কি বাক্সবন্দি হয়ে ফিরতে হবে…। শেষ পর্যন্ত বাবার কথাই সত্যি হলো। তাকে দেশে আনা হলো, তবে সুস্থ অবস্থায় নয়, একেবারে কফিনে মুড়িয়ে বাক্সবন্দি করে। 
এ কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন ইশরাক। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে জানাজার আগমুহূর্তে সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন তিনি। তার বক্তৃতার সময় খোকার রাজনৈতিক সহকর্মীদের মধ্যে অনেককেই কাঁদতে দেখা গেছে।
এর আগে সাদেক হোসেনের লা’শ সকাল ৮টা ২৮ মিনিটে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে। তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী বিএনপির নেতা মির্জা আব্বাস ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু তার মরদেহ গ্রহণ করেন। 
বিমানবন্দর থেকে খোকার মরদেহ জাতীয় সংসদ ভবনে নেয়া হয়। সেখানে বেলা ১১টায় তার জানাজা হয়। এটিই দেশের মাটিতে খোকার প্রথম জানাজা। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়রের  প্রথম জানাজা জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার মসজিদে হয়। জানাজায় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সর্বস্তরের বাংলাদেশিরা অংশ নেন। জানাজা শেষে তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়।
বাংলাদেশ সময় গেল বুধবার সকালে সাদেক হোসেনের মরদেহ নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয় তার পরিবার। তিনি গেল সোমবার বেলা ১টা ৫০ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান। ক্যান্সারে আক্রান্ত এ রাজনীতিবিদ প্রায় পাঁচ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত ছিলেন।
১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে খোকা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ছিলেন একজন গেরিলা যোদ্ধা। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম বিএনপি থেকে এমপি নির্বাচিত হন। তার দল সরকার গঠন করলে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। 
পরবর্তী সময়ে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালেও সাদেক হোসেন সাংসদ নির্বাচিত হন। পরে তাকে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী করা হয়।২০০১ সালে তার দল সরকার গঠন করলে তিনি মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। 
২০০২ সালে খোকা অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হন। মৃত্যুর আগে বারবার দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছিলেন তিনি। সবশেষ হাসপাতালে ভর্তির আগে বন্ধু বিএনপি নেতা টুকুকে টেলিফোনে বলেছিলেন, জীবনবাজি রেখে যে দেশ স্বাধীন করেছিলাম, সে দেশের মাটিতে ফিরতে পাব কি না আল্লাহ জানেন।
প্রসঙ্গত, এদিন জুরাইনে মার কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন সাদেক হোসেন । এসময় তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেয়া হয় । এর আগে ধূপখোলা মাঠ, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব ও নগর ভবনে অগনিত মানুষের উপস্থিতিতে তার নামাজে জানাযা হয়। প্রতিটিতেই দল-মত নির্বিশেষে হাজারো মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন। 
শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী প্রিয় মাতৃভূমিতেই সমাহিত হলেন সাদেক হোসেন। সবার প্রিয় খুব কাছের ‘খোকা ভাই’। যে দেশ স্বাধীন করতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন হাতে, সেই লাল-সবুজের মাটিতেই শেষ ঠিকানা হলো বীর এ মুক্তিযোদ্ধার। বাবার কবরের পাশে, মায়ের কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বরেণ্য এ রাজনীতিবিদ। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেয়া হয় রাষ্ট্রীয় সম্মাননা।
  
 

ফিচার বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর