ঢাকা, ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০
good-food
৪২৬

উইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:৪৬ ২৫ জানুয়ারি ২০২১  

ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্বিতীয়বারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ। সোমবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচে ক্যারিবীয়দের ১২০ রানে বড় ব্যবধানে হারায় তামিম ইকবালের দল। ফলে তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতলো তারা। 


২০০৯ সালে প্রথম ও শেষবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটয়াশ করেছিল বাংলাদেশ।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে টাইগাররা। অধিনায়ক তামিম-সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাফসেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৯৭ রান করে তারা। জবাবে ১৭৭ রানে অলআউট হয়ে হার বরণ করে উইন্ডিজ।


শুরুটা মোটেই ভালো হয়নি বাংলাদেশের। প্রথম ওভারের পঞ্চম বলেই ওপেনার লিটন দাসকে হারায় স্বাগতিকরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডানহাতি পেসার আলজারি জোসেফের বলে লেগ বিফোর হন লিটন। রিভিউ নেয়ার জন্য অপরপ্রান্তে থাকা ড্যাশিং ওপেনার তামিমের সঙ্গে পরামর্শ করছিলেন। কিন্তু ততক্ষণ রিভিউ নেয়ার সময় শেষ হয়ে যায়। ফলে খালি হাতেই বিদায় নিতে হয় লিটনকে।

 

দলীয় ১ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর অপর ওপেনার তামিমের সঙ্গী হন তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত। শুরুর ধাক্কা সামলে ওঠার চেষ্টায় ছিলেন তামিম-শান্ত জুটি। পরের তিন ওভারে তিনটি চার মেরে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন শান্ত। সতীর্থের তিনটি চার দেখার পর পঞ্চম ওভারে প্রথম বাউন্ডারি মারেন তামিমও। তাই শুরুর ধাক্কা সামলে উঠার পথেই ছিলেন তারা। 


কিন্তু নবম ওভারের চতুর্থ বলে তামিম-শান্তর পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান ডানহাতি পেসার কাইল মায়ারস।
তার বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন শান্ত। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে না পরলে ৩০ বলে ৩টি চারে ২০ রানে থামে তার ইনিংস। ভেঙ্গে যায় তামিম-শান্তর ৫০ বলে ৩৭ রানের জুটি।

 

শান্তর বিদায়ে চার নম্বরে ব্যাট হাতে নামেন সাকিব। উইকেটে সেট হতে খুব বেশি সময় নেননি তামিম-সাকিব জুটি। তাদের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ২৩ ওভারে শতরানের কোটা স্পর্শ করেন টাইগাররা। তখন হাফ-সেঞ্চুরির দোড়গোড়ায় ছিলেন তামিম। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদের করা ২৬তম ওভারের প্রথম ও নিজের মোকাবেলা ৭০তম বলে ১ রান নিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪৯তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও ৫০ রান করেন টাইগার অধিনায়ক। 

 

হাফসেঞ্চুরি পাওয়া ওভারেই ইনিংসের প্রথম ছক্কা মারেন তামিম। তবে ২৮তম ওভারের শেষ বলে ব্যক্তিগ ৬৪ রানে আউট হন তিনি। আলজারি জোসেফের বলে মিড উইকেটে আকিল হোসেনের তালুবন্দি হওয়ার আগে ৮০ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন টাইগার কাপ্তান। তৃতীয় উইকেটে সাকিবের সঙ্গে ১২১ বলে ৯৩ রান যোগ করে বাংলাদেশকে ভালো অবস্থায় রেখে যান তিনি। ২৮ ওভার শেষে ৩ উইকেটে ১৩১ রান করে বাংলাদেশ। অধিনায়ককে হারানোর পর সাবধানী হয়ে পড়েন সাকিব। সঙ্গে ছিলেন মুশফিক। ২ ওভার উইকেটে কাটানোর পর দু’টি বাউন্ডারি মেরে ভালো শুরু করেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। এরপর বিশ্বসেরার সঙ্গে রানের চাকা সচল রাখেন তিনি।

 

তবে ৩৬তম ওভারে স্বস্তির হাসি সাকিবের ব্যাটে। ওভারে শেষ বলে ১ রান নিয়ে ২০৯ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪৮তম হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। আইসিসি কৃর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়ার আগে ২০১৯ সালের ৫ জুলাই লর্ডসে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ হাফসেঞ্চুরিসহ ৬৪ রান করেন সাকিব। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা ক্রিকেটার প্রথম দুই ম্যাচে যথাক্রমে ১৯ ও অপরাজিত ৪৩ রান করেন।

 

এ ম্যাচে ৭৮ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করে শেষ পর্যন্ত রেমন রেইফারের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৮১ বলে ৩টি চারে ৫১ রান করেন সাকিব। চতুর্থ উইকেটে মুশফিক-সাকিব ৫৬ বলে ৪৮ রান যোগ করেন। ৩৭তম ওভারে দলীয় ১৭৯ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন সাকিব। এরপর মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ দলের স্কোর বড় করতে থাকেন। ৪৪ ওভারের পর দ্রুত রান তোলায় মনোনিবেশ করেন তারা।

 

৪৪তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৯তম হাফসেঞ্চুরির দেখা পান মুশফিক। ৪৭ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করে দ্রুত রান তোলার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন তিনি। রেইফারের করা ৪৭তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কাও মারেন মুশি। তবে পরের বলেই আউট হন এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ৫৫ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৪ রান করেন তিনি। আউট হওয়ার আগে মাহমুদউল্লাহ’র সঙ্গে ৬১ বলে ৭২ রান যোগ করেন মুশফিক।

 

তার বিদায়ের পর বাংলাদেশের রানের চাকা দ্রুত ঘুরিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। শেষ ওভারের প্রথম বলে ছক্কা দিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২২তম অর্ধশতকের দেখা পান তিনি। অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা ক্যারিবিয় পেসার কিওন হার্ডিং এর করা ইনিংসের শেষ ওভারে দু’টি ছক্কা মারেন মাহমুদউল্লাহ। তার ঝড়ো গতির ইনিংসে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৬ উইকেটে ২৯৭ রানের পুঁজি পায়। ৩টি করে চার-ছক্কায় ৪৩ বলে ৬৪ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন তিনি। সৌম্য সরকার ৭ রানে আউট হলেও প্রথমবারের মতো সিরিজে খেলতে নামা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ২ বলে অপরাজিত ৫ রান করেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জোসেফ- রেইফার ২টি করে উইকেট নেন।

 

২৯৮ রানের টার্গেটে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওপেনার কির্জন ওটেলিকে ১ রানে থামিয়ে দেন বাংলাদেশের পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। আরেক ওপেনার সুনীল অ্যামব্রিসকেও শিকার করেন ফিজ। লেগ বিফোর হওয়ার আগে ১৩ রান করেন তিনি। এরপর মুস্তাফিজের সঙ্গে উইকেট শিকারের আনন্দে মাতেন আগের ম্যাচের হিরো স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। চার নম্বরে নামা কাইল মায়ারসকে(১১) লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন তিনি।এতে ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।


সেই চাপ আরও বাড়িয়ে দেন সাইফউদ্দিন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক মোহাম্মেদ ও এনকুমার বোনারকে বিদায় দেন তিনি। বুনার ৩১ ও মোহাম্মেদ ১৭ রান করে আউট হন। ৯৩ রানে পাঁচ ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে ফিরে যাওয়ায় ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলকে ম্যাচে ফেরাতে এক প্রান্ত আগলে লড়াই করেন রোভম্যান পাওয়েল। তবে অপর প্রান্ত দিয়ে একে একে প্রতিপক্ষের উইকেট তুলে নিতে থাকেন বাংলাদেশের বোলাররা। 


সতীর্থদের সঙ্গ না না পওয়া পাওয়েল সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন। তাকে ৪৭ রানে বিদায় দিয়ে বাংলাদেশের পথের শেষ কাঁটা তুলে ফেলেন সাত নম্বর বোলার হিসেবে আক্রমণে আসা মিডিয়াম পেসার সৌম্য। পাওয়েলের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে কিছুটা লড়াই করেন রেইফার। তার ২৭ রান হারের ব্যবধানই কমিয়েছে। তাকে নিজের ডেলিভারিতে নিজেই ক্যাচ নিয়েেউইন্ডিজের ইনিংসের ইতি টানেন সিরিজে প্রথমবারের মতো খেলতে নামা পেসার তাসকিন আহমেদ। শেষ পর্যন্ত ৪৪ দশমিক ২ ওভারে ১৭৭ রানে অলআউট হয় ক্যারিবীয়রা। 


এ ম্যাচে আটজন বোলার ব্যবহার করেছেন তামিম। এর মধ্যে সাইফউদ্দিন ৯ ওভারে ৫১ রানে ৩টি উইকেট নেন। এছাড়া মুস্তাফিজ-মিরাজ ২টি করে, তাসকিন-সৌম্য ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচসেরা হয়েছেন বাংলাদেশের মুশফিকুর রহিম। আর সিরিজ সেরা হন সাকিব। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রামের এই ভেন্যুতে শুরু হবে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ।

খেলাধুলা বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর