ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১৪৮

করতোয়া পারে লাশের অপেক্ষায় স্বজনদের আহাজারি

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৩:১৫ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২  

পঞ্চগড়ের বোদার মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়ার ঘাট এলাকায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ ৩৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন প্রায় ৬০ জন। নিখোঁজদের লাশের অপেক্ষায় ঘটনার পর থেকে করতোয়ার পারে অবস্থান করছেন স্বজনেরা। তাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে চারপাশ।

 

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে আউলিয়ার ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিস এবং ডুবুরি দলের তিনটি ইউনিট উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে। সেখানে ভিড় করছেন নিখোঁজদের স্বজনেরা।

 

ষাটোর্ধ কৃষ্ণ চন্দ্র রায় ভাই ও ভাইপোর খোঁজে এসেছেন আউলিয়া ঘাটে। তিনি জানান, নদীর অপরপারে বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পূজায় যোগ দিতে তার ভাই নরেশ ও ভাইপো সিন্টু বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। নৌকাডুবির খবরে কাল থেকেই এখানে লাশের অপেক্ষা করছেন তিনি।
 

নাতির খোঁজে উপজেলার পাঁচপীর এলাকা থেকে এসেছেন বৃদ্ধ সুমল চন্দ্র। তিনি বলেন, নাতির মরদেহটা পেলে অন্তত নিজেরা সৎকারের কাজটা করতে পারতাম।

 

মাড়েয়া বটতলি এলাকার ধীরেন বাবুর দুই প্রতিবেশীসহ ৭ জন নিকটাত্মীয় এখনো নিখোঁজ। ঘটনার দিন থেকে তিনি নদীর পারে অপেক্ষা করছেন। ধীরেন বলেন, বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পূজায় যোগ দিতে আমার ভাতিজা, ভাতিজার বউ, ভাতিজার শ্বশুর, শ্যালিকা এবং আমার ভাতিজি নৌকায় ওঠে দুর্ঘটনায় পড়েন। এখন পর্যন্ত কারো খোঁজ পাইনি। এখন তাদের লাশের অপেক্ষা করছি।

 

এর আগে গতকাল দুপুরে শতাধিক যাত্রী নিয়ে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। রাত ১১টা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ডুবুরি দল। এদিন ভোর থেকে পুনরায় উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আরও ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া মোট ৩৪টি মরদেহের মধ্যে নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু ও নারী এবং অধিকাংশ সনাতন ধর্মাবলম্বী। ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহবায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

 

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর অপরপাড়ে বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পূজা উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও ধর্মসভার আয়োজন করা হয়। রোববার দুপুরের দিকে মূলত ওই ধর্মসভায় যোগ দিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নৌকাযোগে নদী পার হচ্ছিলেন। তবে ৫০ থেকে ৬০ জনের ধারণ ক্ষমতার নৌকাটিতে দেড় শতাধিক যাত্রী ছিল। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নদীর মাঝপথে নৌকাটি ডুবে যায়। অনেকে সাঁতার জানায় তীরে আসতে পারলেও না জানা বিশেষ করে নারী ও শিশুরা পানিতে ডুবে যায়। মনে করা হচ্ছে স্রোতের কারণে অনেক মরদেহ পানিতে ভেসে যেতে পারে।

 

নৌকা ডুবি থেকে বেঁচে যাওয়া যাত্রী মাড়েয়া বামনপাড়া এলাকার সুবাস চন্দ্র রায় বলেন, আমিও নৌকায় ছিলাম। নৌকায় দেড়শরও বেশি যাত্রী ছিল। আমরা নৌকায় উঠার পরপরই তাতে পানি ঢুকতে শুরু করে। এ সময় মানুষজন নৌকার মধ্যেই হুড়োহুড়ি শুরু করেন। পরে যে পাশেই যাচ্ছিলাম, সে পাশেই নৌকায় পানি ঢুকছিল। আমরা পাঁচজন বন্ধু ছিলাম। কোনো মতে সাঁতার কেটে প্রাণে বেঁচে যাই। অন্য যাত্রীরা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে বাঁচার আকুতি করছিল। কিন্তু চরম মুহূর্তের বর্ণনা করতে পারব না। তবে এত মানুষ মারা যাবেন, তা বুঝতে পারিনি।

 

ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহবায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাই। গভীর রাত পর্যন্ত উদ্ধারকাজ চলে। ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় একটি তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে।