ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৪৯৩

করোনামুক্ত বিশ্বে ভ্রমণ হবে কেমন?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৩:৪১ ৫ মে ২০২০  

করোনাভাইরাসের কারণে বদলে গেছে পুরো পৃথিবীর চিত্র। সংক্রমণ রোধে সব দেশ এখন ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অনেক দেশেই বন্ধ রয়েছে বিমান চলাচল।


এই পরিস্থিতিতে ভ্রমণপিপাসু মানুষের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে – লকডাউন উঠে গেলে কেমন হবে ভ্রমণ? হয়তো ভ্রমণের অনেক নিয়মই বদলে যাবে।

 

এখন বিমানে ওঠার আগে রক্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে, গায়ে স্যানিটাইজার ছিটিয়ে আপনাকে জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। এগুলো শুনতে অস্বাভাবিক লাগতে পারে। কিন্তু অবস্থাটা এখন এমনই।

 

বিশ্বের অনেক দেশেই এখন লকডাউন ধীরে ধীরে শিথিল করা হচ্ছে। যদিও কোভিড-১৯ ঠেকানোর কোনো টিকা এখনও আবিষ্কার হয়নি।

 

বিবিসি বলছে, এ অবস্থায় ভ্রমণকারীরা যেন নিরাপদে ছুটি কাটাতে যেতে পারেন, সে জন্য ট্রাভেল ইন্ডাস্ট্রির লোকেরা এখন থেকেই এ রকম পদক্ষেপের কথা ভাবছেন। তবে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ আবার কবে শুরু হবে তা এখনও বলা যাচ্ছে না।

 

ভ্রমণ যখনই শুরু হোক, কেমন হবে সেই লকডাউনপরবর্তী যুগের ভ্রমণ? 

 

এয়ারপোর্ট

 

লন্ডনসহ বিভিন্ন এয়ারপোর্টে ইতিমধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নানা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যাত্রীদের মধ্যে সবসময় এক বা দুই মিটার দূরত্ব বজায় রাখা, পুরো এয়ারপোর্টজুড়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা, যাত্রীদের গায়ের তাপমাত্রা মাপা এবং টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের সমানভাবে ছড়িয়ে রাখা।

 

যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিরাপত্তা প্রশাসন (টিএসএ) বলছে, সিকিউরিটি স্ক্রিনিংয়ের আগে ও পরে যাত্রীদের ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া উচিত। তবে হংকং বিমানবন্দরে এখন যাত্রীদের পুরো শরীর জীবাণুমুক্ত করার একটি যন্ত্র পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এ যন্ত্রটি থেকে একটি স্প্রে যাত্রীর গায়ে ছিটিয়ে দেয়া হবে। এ ছাড়া রোবট পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘুরে ঘুরে পরিষ্কার করার কাজ করতে থাকবে।

 

বেশিরভাগ বিমানবন্দরেই বিভিন্ন ধরনের নির্দেশিকাসংবলিত পোস্টার থাকবে। ইনট্রেপিড ট্রাভেলের প্রধান নির্বাহী জেমস থর্নটন বলছেন, চেকিংয়ের কড়াকড়ির জন্য আগামী দিনগুলোতে যাত্রীদের বিমানবন্দর পার হতে সময় বেশি লাগবে।

 

বিমানের ভেতরের পরিবেশ

 

প্লেনের ভেতরে ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টদের হাসিমুখ হয়তো এখন আর দেখা যাবে না। কারণ তারা খুব সম্ভবত মাস্ক পরা থাকবে। আর আপনাকেও সম্ভবত মাস্ক পরে থাকতে হবে।

 

প্রধান বিমান সংস্থাগুলো তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থা উন্নত করছে। ফলে অন্তত একটা স্বস্তির ব্যাপার হবে যে আপনার ট্রে-টেবিল, সিটের হাতল এবং সেফটি বেল্ট জীবাণুমুক্ত করা থাকবে।

 

গন্তব্যের চেহারা কেমন হবে?

 

ইতালির সমুদ্রসৈকতে গিয়ে এখন আপনি হয়তো দেখতে পাবেন যে যারা রৌদ্রস্নান করছেন, তাদের মাঝখানে স্বচ্ছ প্লাস্টিকের পার্টিশন দেয়া আছে। পর্যটনসংক্রান্ত একটি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উলফ সন্টাগ বলছেন, ইতালিতে এমন কিছু করার চিন্তাভাবনা চলছে।

 

তিনি বলছেন, ইউরোপের অনেক হোটেল চিন্তা করছে, অতিথিদের এক রুম পর পর থাকতে দেয়া যায় কিনা। তা ছাড়া ভূমধ্যসাগরীয় রিসোর্টগুলোতে সুইমিংপুল এখন খোলা যাবে না বলেই মনে হচ্ছে।

 

অ্যাথেন্সে মেডিসিনের অধ্যাপক নিকোলাওস সিপসাস বলেন, বুফে খাবার, সুইমিংপুল, সৈকত ও বার– এসব এখন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে।

 

ভবিষ্যতে কি ভ্রমণ একেবারেই বদলে যাবে?

 

হয়তো ভবিষ্যতে অনেকে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ কমিয়ে দেবেন। ঘরে বসেই ছুটি কাটাবেন –যাকে বলা হবে 'স্টে-কেশন'।

বৈশ্বিক মহামারির কারণে জাহাজ বা প্রমোদতরীতে ভ্রমণ, স্কি হলিডে, বা দীর্ঘ বিমান ভ্রমণ তাদের আকর্ষণ হারিয়ে ফেলতে পারে।

 

দেশের ভেতরে বেড়াতে যাওয়ার পর লোকেরা হয়তো উপলব্ধি করবেন, সবসময় আপনার দূরে কোথাও বেড়াতে যাবার দরকার নেই।

 

আন্তর্জাতিক বিমান ভ্রমণ সমিতি বা আইএটিএর এক জরিপে ৬০ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসার পরেও তারা কোন ফ্লাইট বুক করার আগে দু‌মাস অপেক্ষা করবেন। আর ৪০ শতাংশ বলেন, তারা অপেক্ষা করবেন কমপক্ষে ৬ মাস।

 

বোয়িং কোম্পানি ইতোমধ্যেই কোভিড-১৯ সংকটে তাদের ১০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করেছে। তারা বলছে, বিমান ভ্রমণ আবার ২০১৯ সালের অবস্থায় ফিরতে অন্তত তিন বছর অর্থাৎ ২০২৩ পর্যন্ত সময় লাগবে।

 

ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের মালিক কোম্পানি আইএজি বলছে, তারাও মনে করে অবস্থা আগের মত হতে বেশ কয়েক বছর লাগবে।